খাদ্যদ্রব্যের দাম কমেছে, খুচরা মূল্যস্ফীতি ১.৫৫ শতাংশে নেমে ৮ মধ্যে বছরের সর্বনিম্ন স্তরে

ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি (Retail Inflation) জুলাই ২০২৫-এ নেমে এসেছে মাত্র ১.৫৫ শতাংশে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই…

Retail inflation drops near 5 year low

ভারতের খুচরা মূল্যস্ফীতি (Retail Inflation) জুলাই ২০২৫-এ নেমে এসেছে মাত্র ১.৫৫ শতাংশে, যা গত আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর। মঙ্গলবার প্রকাশিত সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই পতনের মূল কারণ হল খাদ্যপণ্যের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাওয়া। ভোক্তা মূল্যসূচক (CPI) ভিত্তিক এই সর্বশেষ মূল্যস্ফীতির হার জুন ২০২৫-এর ২.১ শতাংশ থেকে অনেকটাই কম এবং ২০২৪ সালের জুলাই মাসের ৩.৬ শতাংশের তুলনায় প্রায় অর্ধেক। জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তর (NSO) জানিয়েছে, ২০১৭ সালের জুন মাসে খুচরা মূল্যস্ফীতি ১.৪৬ শতাংশে নেমেছিল—এরপর এটাই সবচেয়ে কম হার।

খাদ্যদ্রব্যের দাম পতনই মূল চালিকা শক্তি:
জাতীয় পরিসংখ্যান দপ্তরের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই পতনের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে ডাল ও ডালজাত পণ্য, সবজি, ধান-গমসহ শস্যদানা, ডিম, চিনি ও মিষ্টান্ন, এবং পরিবহন ও যোগাযোগ পরিষেবা–এর খরচ কমে যাওয়া।
খাদ্য মূল্যস্ফীতি জুলাই মাসে বছরওয়ারি হিসাবে (-) ১.৭৬ শতাংশ রেকর্ড হয়েছে, যা স্পষ্টভাবে জানাচ্ছে—গত বছরের একই সময়ের তুলনায় খাদ্যের সামগ্রিক দাম কমেছে।

   

সবজি ও শস্যদানা—যা ভারতীয় পরিবারের খাদ্য ব্যয়ের বড় একটি অংশ—উল্লেখযোগ্যভাবে সস্তা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ পরিবারের রান্নাঘরের খরচে স্পষ্ট স্বস্তি এসেছে। ডিম, চিনি ও সংশ্লিষ্ট খাদ্যপণ্যও তুলনামূলকভাবে সস্তা হয়েছে।

পরিবহন ও যোগাযোগ খরচ হ্রাসের প্রভাব:
খাদ্যের পাশাপাশি পরিবহন ও যোগাযোগ খরচ কমে যাওয়াও সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি কমাতে বড় ভূমিকা রেখেছে। জ্বালানির দামের স্থিতিশীলতা, প্রতিযোগিতামূলক টেলিকম প্যাকেজ এবং ডিজিটাল লেনদেন বৃদ্ধির ফলে যোগাযোগ খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।

‘বেস ইফেক্ট’ ও দামের চাপ হ্রাস:
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই পতনের পেছনে ফেভারেবল বেস ইফেক্ট (Favourable Base Effect) এবং বিভিন্ন প্রধান খাতে মূল্যচাপ হ্রাস—দুটিই কাজ করেছে।
বেস ইফেক্ট বলতে বোঝায় আগের বছরের তুলনামূলক উচ্চ মূল্যস্ফীতি হারের কারণে এ বছর কম হার দেখা যাওয়া।
একই সঙ্গে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় খাতে সরবরাহ পরিস্থিতি ভালো থাকায় দামের ওপর চাপ কমেছে।

গ্রামীণ ও শহুরে প্রভাব:
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, গ্রামীণ অঞ্চলে খাদ্যদ্রব্যের দাম হ্রাসের ফলে কৃষক ছাড়া অন্যান্য পরিবারের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, তবে কৃষক শ্রেণির আয়ের ওপর কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শহুরে এলাকায়, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য এটি একটি বড় স্বস্তির খবর, কারণ খাদ্য ও পরিবহন ব্যয় কমে গৃহস্থালি বাজেটের চাপ হ্রাস পাচ্ছে।

Advertisements

ভবিষ্যৎ প্রবণতা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত:
অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছেন, যদি বর্ষাকাল স্বাভাবিক থাকে এবং কৃষি উৎপাদন ভালো হয়, তাহলে আগামী কয়েক মাসেও মূল্যস্ফীতি তুলনামূলকভাবে নিম্নস্তরে থাকতে পারে। তবে তারা সতর্ক করে দিচ্ছেন—জ্বালানি তেলের আন্তর্জাতিক বাজারের ওঠানামা, শস্যের রপ্তানি নীতি পরিবর্তন বা অপ্রত্যাশিত আবহাওয়া পরিবর্তন—যে কোনও কিছু দাম বাড়িয়ে দিতে পারে।
অর্থনীতিবিদ ড. অনিরুদ্ধ মুখার্জি বললেন, “এটি নিঃসন্দেহে ভোক্তাদের জন্য ইতিবাচক খবর। কিন্তু নীতি-নির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে যাতে সরবরাহের ঘাটতি বা বৈদেশিক বাজারের ঝুঁকি পরিস্থিতি বদলে না দেয়।”

২০১৭ সালের সঙ্গে তুলনা:
২০১৭ সালের জুনে মূল্যস্ফীতি ছিল ১.৪৬ শতাংশ, যা তখনকার সময়ে ঐতিহাসিকভাবে কম হিসেবে ধরা হয়েছিল। সেই সময়ও খাদ্যদ্রব্যের দাম পতন বড় ভূমিকা রেখেছিল। এবারের পরিস্থিতি প্রায় একই রকম, তবে বর্তমানে অর্থনীতি কোভিড-পরবর্তী পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে এবং বৈশ্বিক বাজারে অনেক অস্থিরতা বিদ্যমান।

সরকারি প্রতিক্রিয়া:
কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সিনিয়র কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আমরা পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছি। প্রয়োজন হলে খাদ্যপণ্য আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হবে এবং মজুদ ব্যবস্থাপনায় কঠোর নজরদারি চালানো হবে।”
এছাড়াও, সরকার আশা করছে যে খাদ্যদ্রব্যের সরবরাহ পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে বছরের শেষ নাগাদ মূল্যস্ফীতি ৪ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রা থেকে অনেকটাই নিচে থাকবে।

জুলাই ২০২৫-এ খুচরা মূল্যস্ফীতি আট বছরের সর্বনিম্ন স্তরে নামা নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্থনৈতিক ঘটনা। খাদ্যদ্রব্য ও পরিবহন খরচ কমে যাওয়া যেমন পরিবারের বাজেটে স্বস্তি এনে দিয়েছে, তেমনি সরকারের জন্যও এটি একটি নীতি-সাফল্যের উদাহরণ। তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন—এটি যেন অস্থায়ী স্বস্তি না হয়, সেই জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও বাজার তদারকি অব্যাহত রাখা জরুরি।