রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) আগস্টের মনেটারি পলিসি পর্যালোচনায় রেপো রেট ৫.৫ শতাংশে অপরিবর্তিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই সিদ্ধান্তকে “একটি কৌশলগত বিরতি” হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-এর সাম্প্রতিক একটি রিপোর্ট। এটি কোনও নীতিগত অবস্থানের পরিবর্তন নয়, বরং মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক দৃঢ়তার পটভূমিতে একটি সুশৃঙ্খল বিরতি বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে, কিন্তু ভবিষ্যৎ সতর্কতা প্রয়োজন
SBI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, FY26 অর্থাৎ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিক পর্যন্ত খুচরো মূল্যস্ফীতির হার ৩ শতাংশের নিচে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এই পূর্বাভাস আরবিআইকে কিছুটা “breathing room” দিচ্ছে – অর্থাৎ তারা ভবিষ্যতে সুদের হার বাড়ানোর জন্য এখনই চাপ অনুভব করছে না।
তবে রিপোর্টে FY27-এর প্রথম ত্রৈমাসিকে মূল্যস্ফীতি ৪.৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে। এই সম্ভাবনা ভবিষ্যতের নীতিগত স্থিতাবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে: “আমরা বিশ্বাস করি যে, যদি RBI-র FY26-এর মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস সঠিক হয়, তবে ৫.৫ শতাংশ রেপো রেটই টার্মিনাল রেট হিসেবে থেকে যেতে পারে।”
অর্থাৎ, মূল্যস্ফীতিতে যদি বড় কোনও চমক না আসে, তবে আগামীতে আর সুদের হার বাড়ানো হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।
২০২৫ সালে সুদের হার কমানোর সুযোগ সীমিত
২০২৫ সালের প্রথমার্ধে ভারতের GDP প্রবৃদ্ধি শক্তিশালী থাকবে বলেই অনুমান SBI-র। এই প্রেক্ষাপটে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনাও তুলনামূলকভাবে অনেকটা কমে গেছে।
রিপোর্ট অনুযায়ী, ভবিষ্যতে সুদের হার কমানোর জন্য মূল্যস্ফীতিকে RBI-র পূর্বাভাসের চেয়েও অনেক কমে যেতে হবে। তবুও, তখনও হার কমার পরিমাণ খুবই সীমিত হবে — সর্বোচ্চ ২৫ বেসিস পয়েন্ট (0.25%) পর্যন্ত।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে: “যেহেতু নীতিগত পদক্ষেপ ইতিমধ্যেই ফ্রন্টলোড করা হয়েছে এবং ২০২৫ সালের প্রথমার্ধে শক্তিশালী GDP প্রবৃদ্ধির আশা করা হচ্ছে, তাই সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।”
মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস সংশোধন: নজরদারির বার্তা RBI-র
এই মনেটারি পলিসি বিবৃতিতে RBI FY26-এর জন্য তাদের CPI (ভোক্তা মূল্যসূচক) মূল্যস্ফীতির পূর্বাভাস ৬০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৩.১ শতাংশে নামিয়েছে।
মূল্যস্ফীতি কমার এই আশা তারা বিভিন্ন অনুকূল কারণের ভিত্তিতে করেছে — যেমনঃ
বর্ষার অগ্রগতি যথেষ্ট সন্তোষজনক
খরিফ ফসলের চাষ ভালো হয়েছে
জলাধারগুলিতে পর্যাপ্ত জল মজুত আছে
খাদ্যশস্যের মজুত পর্যাপ্ত
এই তথ্যগুলোই সংকেত দিচ্ছে যে খাদ্যপণ্যের দামে অস্থিরতা আসার সম্ভাবনা আপাতত কম। তবে RBI বলেছে, তারা মূল্যস্ফীতির গতি ও অন্যান্য আর্থিক সূচকের উপর নজরদারি চালিয়ে যাবে এবং প্রয়োজনে ভবিষ্যতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেবে।
স্থিতিশীলতা বজায় রাখাই মূল লক্ষ্য
SBI-র রিপোর্টের শেষাংশে বলা হয়েছে, “মুদ্রানীতি কমিটির সিদ্ধান্তকে বিশ্লেষণ করতে গেলে দেখতে হবে যে, এটি একটি স্থিতিশীলতার পটভূমিতে গৃহীত সিদ্ধান্ত। মূল্যস্ফীতি এখনই নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, কিছু ঝুঁকি এখনও রয়েছে, যা ভবিষ্যতের সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারে।”
অর্থাৎ RBI এখন এমন একটি অবস্থানে রয়েছে যেখানে তারা তাড়াহুড়ো করে কোনও নীতিগত পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বরং, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবার দিকে বেশি মনোযোগ দিচ্ছে।
RBI-র এই সিদ্ধান্ত বাজারে স্বস্তি দিয়েছে, কারণ এটি স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এখন খুব ধীরে ও বুঝেশুনে নীতিগত পদক্ষেপ নিচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও সামনের দিনগুলোতে অর্থনৈতিক তথ্য ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির ভিত্তিতে RBI কীভাবে পদক্ষেপ নেয়, সেটাই এখন দেখার বিষয়।