রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (RBI) মনিটারি পলিসি কমিটির (MPC) বৈঠক শুক্রবার, ৬ জুন শেষ হতে চলেছে। তার আগেই বিভিন্ন শিল্পমহলে তৈরি হয়েছে তীব্র উত্তেজনা ও প্রত্যাশা। বাজার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষকদের মতে, রিজার্ভ ব্যাংক এবার রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমিয়ে ৬ শতাংশ থেকে ৫.৭৫ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারে। তবে স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (SBI)-র মতে, এই অনিশ্চয়তার আবহে RBI একটি ‘জাম্বো রেট কাট’ অর্থাৎ ৫০ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমানোর কথা ভাবতে পারে, যাতে ঋণচক্রে গতি আনা যায়।
মুদ্রানীতির সিদ্ধান্তের আগে অর্থনীতির অবস্থা
বর্তমান দেশের আর্থিক পরিস্থিতি যথেষ্ট স্থিতিশীল। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, এবং প্রবৃদ্ধির গতি বজায় আছে। এই অবস্থায় রিজার্ভ ব্যাংকের সামনে একটি সুস্পষ্ট সুযোগ তৈরি হয়েছে, যাতে তারা ঋণ নেওয়ার খরচ কিছুটা কমিয়ে অর্থনৈতিক গতি আরও বাড়াতে পারেন।
রেট কাটের প্রত্যাশায় ঋণদাতারা
Bondbazaar-এর প্রতিষ্ঠাতা সুরেশ দারক বলেছেন, “২৫ বেসিস পয়েন্ট রেট কাট খুবই সম্ভব। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে সহায়তা হবে, এবং মূল্যস্ফীতিও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। রিজার্ভ ব্যাংক হয়তো তাদের ‘accommodative stance’ বজায় রাখবে।” তিনি আরও বলেন, রেট কাটের ফলে বন্ড মার্কেটে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে, কারণ সুদের হার কমলে বন্ডের দাম বাড়ে এবং বিনিয়োগকারীদের রিটার্নও বেড়ে যায়।
MSME, আবাসন ও স্বাস্থ্যখাতে সুবিধা
ব্যাংক অফ বরোদার মুখ্য অর্থনীতিবিদ মদন সাবনাভিসও বলেন, “মুদ্রানীতির স্বস্তিদায়ক অবস্থান ও চলমান আর্থিক তরলতার ভিত্তিতে ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমানোর সম্ভাবনা প্রবল।” এর ফলে সবচেয়ে বেশি সুবিধা পাবে MSME সেক্টর, গ্রামীণ এলাকা ও স্বল্প আয়ভিত্তিক সংস্থা ও গ্রাহকরা।
Moneyboxx Finance-এর সহ-প্রতিষ্ঠাতা দীপক আগরওয়াল মনে করেন, “রেট কাট ছোট উদ্যোগগুলির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হবে। এতে কর্মসংস্থান ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির পথে একধাপ এগিয়ে যাবে দেশ।”
আবাসন ও হেলথকেয়ার খাতে উদ্দীপনা
আবাসন শিল্পের জন্য এই রেট কাট অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। Colliers India-এর গবেষণা প্রধান বিমল নাদার বলেন, “তৃতীয়বারের মতো যদি রেট কাট হয়, তাহলে মধ্যবিত্ত ও সাশ্রয়ী হাউজিং সেগমেন্টে চাহিদা বাড়বে। ডেভেলপারদেরও কম সুদের হার সুবিধা দেবে।”
CarePal Money-এর চিফ বিজনেস অফিসার সাহিল লক্ষ্মণন বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের ব্যয় কমে গেলে সাধারণ মানুষের পক্ষে চিকিৎসা খাতে ঋণ গ্রহণ সহজতর হবে, যা স্বাস্থ্যখাতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকে উৎসাহিত করবে।”
ভোক্তা ও ঋণগ্রহীতাদের জন্য স্বস্তির খবর
AUM Wealth-এর প্রতিষ্ঠাতা অমিত সুরি বলেন, “বর্তমানে যারা পার্সোনাল লোন কিংবা ক্রেডিট কার্ড ঋণের বোঝা বইছেন, তাদের উচিত এই পরিস্থিতিতে প্রিপেমেন্ট কিংবা কনসলিডেশনের দিক ভাবা। ফ্লোটিং রেট হোম লোন যাঁদের আছে, তাঁদের মাসিক EMI ধীরে ধীরে কমবে।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য পরামর্শ
Centricity WealthTech-এর প্রতিষ্ঠাতা দলের সদস্য বিনায়ক মাগোত্রা বলেন, “RBI-এর রেট কাটের ফলে সবচেয়ে আগে লাভবান হবে NBFC ও ব্যাঙ্কিং সেক্টর। এর পর পর্যায়ক্রমে উপকৃত হবে কনজাম্পশন সেক্টরের বিভিন্ন অংশ, যেমন: কনজ্যুমার ডিউরেবল, ডিসক্রিশনারি, রিটেইল, হোটেল, এয়ারলাইন্স, ই-কমার্স ও অটো।”
তিনি আরও যোগ করেন, “বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বড় নামগুলোর দিকে ঝোঁকানো উচিৎ, কারণ ছোট কোম্পানিগুলির ভ্যালুয়েশন এখন অনেকটাই চড়া। ICICI, HDFC-এর মতো বড় প্রাইভেট ব্যাঙ্ক, Bajaj Finance-এর মতো মানসম্পন্ন NBFC, Voltas, Mahindra & Mahindra, InterGlobe Aviation, Ventive Hospitality, এবং নেতৃস্থানীয় রিটেইল ব্র্যান্ড — এই সংস্থাগুলিতে বিনিয়োগ করা নিরাপদ।”
বিনিয়োগকারীদের জন্য Dos & Don’ts
Do’s:
- নিয়মিত SIP চালিয়ে যাওয়া
- বড় নামগুলিতে ফোকাস করা
- টপ-ডাউন ও বটম-আপ দুই দিক থেকে সংস্থার বিশ্লেষণ
Don’ts:
- ক্যাশ ফ্লো দুর্বল এমন সেক্টরে বিনিয়োগ এড়ানো
- বাজার হঠাৎ পড়লে লাম্প সাম বিনিয়োগ না করা
- অ্যাসেট অ্যালোকেশন অবহেলা না করা
দেশের সামগ্রিক আর্থিক চিত্র বর্তমানে যথেষ্ট ইতিবাচক। RBI যদি আগামীকাল ৬ জুন একটি রেট কাটের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা কেবলমাত্র ব্যবসায়িক পরিবেশকেই চাঙা করবে না, পাশাপাশি মধ্যবিত্ত ও নিম্নআয়ের জনগণের আর্থিক ভারসাম্যেও স্বস্তি এনে দেবে। এখন সমস্ত নজর কেন্দ্রীভূত RBI গভর্নর সঞ্জয় মালহোত্রা ও MPC-র চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে।