দুই দিনের বদলে কয়েক ঘণ্টায় হবে চেক ক্লিয়ার, বড় ঘোষণা আরবিআইয়ের

RBI Guidelines for Digital Payments

ভারতের ব্যাংকিং পরিষেবায় আসছে বড় পরিবর্তন। ২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর থেকে ব্যাংকের চেক ক্লিয়ার করতে আর দু’দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI) ঘোষণা করেছে, নির্দিষ্ট নতুন প্রক্রিয়ায় চেক কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই নিষ্পত্তি হবে। এর ফলে গ্রাহকরা দ্রুত টাকা পাবেন, ব্যাংকগুলোর ঝুঁকি কমবে এবং লেনদেন আরও স্বচ্ছ হবে।

Advertisements

বর্তমানে চেক ট্রাঙ্কেশন সিস্টেম (Cheque Truncation System – CTS) ব্যাচ প্রক্রিয়ায় চলে, যেখানে ক্লিয়ারিং সাইকেল সর্বাধিক দুই কার্যদিবস পর্যন্ত সময় নেয়। কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় ব্যাচ প্রক্রিয়ার বদলে ‘কন্টিনিউয়াস ক্লিয়ারিং উইথ অন-রিয়ালাইজেশন সেটেলমেন্ট’ চালু হবে, অর্থাৎ ব্যবসায়িক সময়ের মধ্যেই চেক স্ক্যান, পাঠানো, যাচাই এবং নিষ্পত্তি হবে।

দুই ধাপে আসবে নতুন নিয়ম:
আরবিআইয়ের সার্কুলার অনুযায়ী, এই পরিবর্তন দুই ধাপে কার্যকর হবে।

ফেজ ১: ৪ অক্টোবর ২০২৫ থেকে ২ জানুয়ারি ২০২৬ পর্যন্ত। এই সময়ে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টার মধ্যে ব্যাংক শাখায় যে চেক আসবে, তা সঙ্গে সঙ্গে স্ক্যান করে ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠাতে হবে। ক্লিয়ারিং হাউস ক্রমাগতভাবে ড্রই ব্যাংকে (যে ব্যাংকের ওপর চেক ইস্যু হয়েছে) ইমেজ পাঠাবে। ড্রই ব্যাংককে বিকেল ৭টার মধ্যে প্রতিটি চেকের জন্য পজিটিভ কনফার্মেশন (টাকা দেওয়া হবে) বা নেগেটিভ কনফার্মেশন (টাকা দেওয়া হবে না) পাঠাতে হবে।

যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কনফার্মেশন না আসে, তাহলে সেটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে অনুমোদিত ধরে নিষ্পত্তি হবে।

ফেজ ২: ৩ জানুয়ারি ২০২৬ থেকে শুরু। এখানে T+3 ঘন্টা নীতি প্রযোজ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, সকাল ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে যে চেক আসবে, সেটি দুপুর ২টার মধ্যে কনফার্ম করতে হবে। কনফার্মেশন না এলে সেটি অনুমোদিত বলে ধরে নেওয়া হবে এবং দুপুর ২টায় নিষ্পত্তি হবে।

চেক ক্লিয়ারিং সেশনের নতুন সময়সূচি:
প্রেজেন্টেশন সেশন: সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
কনফার্মেশন সেশন: সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত।
চেক অনুমোদন হলে, সেটেলমেন্টের ১ ঘণ্টার মধ্যেই গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা পৌঁছে যাবে।

কীভাবে কাজ করবে নতুন ব্যবস্থা?
1. চেক গ্রহণ: গ্রাহক ব্যাংকের শাখায় চেক জমা দেবেন।
2. স্ক্যান ও প্রেরণ: ব্যাংক কর্মীরা সঙ্গে সঙ্গে চেক স্ক্যান করে ইলেকট্রনিক ইমেজ ক্লিয়ারিং হাউসে পাঠাবেন।
3. ড্রই ব্যাংকে পাঠানো: ক্লিয়ারিং হাউস সঙ্গে সঙ্গেই চেক ইমেজ ড্রই ব্যাংকে পাঠাবে।
4. যাচাই: ড্রই ব্যাংক নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে চেকের সত্যতা, ব্যালান্স ও অন্যান্য শর্ত যাচাই করবে।
5. কনফার্মেশন: চেক অনুমোদন বা বাতিলের সিদ্ধান্ত জানাবে।
6. সেটেলমেন্ট: অনুমোদিত হলে চেক সেটেলমেন্ট হবে এবং দ্রুত গ্রাহকের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হবে।

Advertisements

গ্রাহকের জন্য সুবিধা:
দ্রুত টাকা পাওয়া: এখন যেখানে চেক ক্লিয়ার হতে এক থেকে দুই দিন সময় লাগে, নতুন ব্যবস্থায় কয়েক ঘণ্টায় নিষ্পত্তি হবে।
ঝুঁকি কম: চেক রিটার্ন বা জালিয়াতির সম্ভাবনা দ্রুত ধরা পড়বে।
লেনদেন স্বচ্ছ: গ্রাহক রিয়েল-টাইমে চেকের স্ট্যাটাস জানতে পারবেন।

ব্যাংকের জন্য সুবিধা:
সেটেলমেন্ট ঝুঁকি কমবে: ব্যাচ প্রসেসিং-এর বদলে রিয়েল-টাইম প্রক্রিয়া হওয়ায় আর্থিক ঝুঁকি কমে যাবে।
প্রযুক্তিগত উন্নতি: ব্যাংকিং ব্যবস্থায় আধুনিক স্ক্যানিং, রিয়েল-টাইম ডেটা ট্রান্সফার এবং অটোমেশন বাড়বে।
গ্রাহক সন্তুষ্টি বৃদ্ধি: দ্রুত সেবা দেওয়ায় গ্রাহকের আস্থা বাড়বে।

আরবিআইয়ের নির্দেশনা:
আরবিআই সমস্ত ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছে, তারা যেন গ্রাহকদের এই পরিবর্তন সম্পর্কে আগাম জানিয়ে দেয়। ব্যাংকগুলোকে তাদের সিস্টেম, সফটওয়্যার এবং কর্মীদের প্রশিক্ষণ আপডেট করতে হবে, যাতে নতুন প্রক্রিয়া মসৃণভাবে চালু হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতামত:
ব্যাংকিং বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এটি ভারতের ব্যাংকিং সেক্টরে এক বড় মাইলফলক। ডিজিটাল পেমেন্ট ও তাৎক্ষণিক লেনদেনের যুগে চেক ক্লিয়ারিং-এর গতি বাড়ানো ছিল সময়ের দাবি। এর ফলে ব্যবসায়িক লেনদেনও দ্রুত হবে এবং নগদ প্রবাহ বাড়বে।

তবে তারা সতর্ক করেছেন, প্রথম দিকে কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা বা সিস্টেম ডাউন হওয়ার ঝুঁকি থাকতে পারে। তাই ব্যাংকগুলোকে ব্যাকআপ সিস্টেম ও গ্রাহক সহায়তা বাড়াতে হবে।

৪ অক্টোবর ২০২৫ থেকে চেক ক্লিয়ারিং-এর এই নতুন যুগ শুরু হবে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চেক ক্লিয়ার হওয়া ভারতীয় ব্যাংকিং পরিষেবায় এক বড় বিপ্লব আনতে চলেছে। দ্রুত সেবা, কম ঝুঁকি এবং স্বচ্ছ লেনদেন— সব মিলিয়ে গ্রাহক ও ব্যাংক উভয়ের জন্যই এটি এক বড় স্বস্তির খবর।