চতুর্থ ত্রৈমাসিকে স্থিতিশীল ঘরের দাম বৃদ্ধি, জানাল RBI

ভারতে ঘরবাড়ির দাম বৃদ্ধির ধারা চলতি অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) স্থিতিশীল রইল। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হাউস প্রাইস ইনডেক্স…

House Price Index

ভারতে ঘরবাড়ির দাম বৃদ্ধির ধারা চলতি অর্থবছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে (জানুয়ারি-মার্চ ২০২৫) স্থিতিশীল রইল। রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI) প্রকাশিত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, হাউস প্রাইস ইনডেক্স (HPI) বার্ষিক ভিত্তিতে ৩.১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা আগের ত্রৈমাসিকের (অক্টোবর-ডিসেম্বর ২০২৪) বৃদ্ধির হারের সমান। তবে গত বছরের একই সময়ে এই বৃদ্ধির হার ছিল ৪.১ শতাংশ, অর্থাৎ তুলনামূলকভাবে কিছুটা মন্থর।
আরবিআই-এর এই তথ্য ১০টি প্রধান শহরে রেজিস্ট্রেশন অথরিটি থেকে প্রাপ্ত ট্রান্সাকশন-স্তরের ডেটার উপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে। এই শহরগুলি হলো: আহমেদাবাদ, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, দিল্লি, জয়পুর, কানপুর, কোচি, কলকাতা, লখনউ এবং মুম্বই।

কলকাতায় সর্বোচ্চ ৮.৮ শতাংশ বৃদ্ধি:
তথ্য অনুযায়ী, শহরভিত্তিকভাবে বাড়ির দামের বার্ষিক বৃদ্ধির হারে ব্যাপক পার্থক্য দেখা গেছে। কলকাতা যেখানে ৮.৮ শতাংশ হারে শীর্ষে, সেখানে কোচিতে ২.৩ শতাংশ হারে হাউস প্রাইস ইনডেক্সে সংকোচন হয়েছে, যা এই সময়কালের মধ্যে একমাত্র নেতিবাচক প্রবণতা।
বেঙ্গালুরু, চেন্নাই, জয়পুর এবং কলকাতা শহরগুলো ধারাবাহিকভাবে ঘরের দামে ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে (Q3 থেকে Q4) ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখিয়েছে। সিকোয়েনশিয়াল ভিত্তিতে, অর্থাৎ ত্রৈমাসিক তুলনায় দেশজুড়ে HPI ০.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

   

ঘরবাড়ির দাম ও অর্থনীতির পারস্পরিক সম্পর্ক:
রিজার্ভ ব্যাংকের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, “ঘরবাড়ি শুধু একটি সম্পত্তি নয়, বরং এটি একটি টেকসই ভোগ্যপণ্য, যা গৃহস্থালির জন্য আশ্রয় এবং বিভিন্ন পরিষেবা প্রদান করে। ঘরের দামের পরিবর্তন মানুষের প্রত্যাশিত আজীবন সম্পদবোধকে প্রভাবিত করে, যার প্রভাব পড়ে তাদের খরচ ও ঋণগ্রহণের সিদ্ধান্তে।”
যখন ঘরের দাম নির্মাণ ব্যয়ের তুলনায় বৃদ্ধি পায়, তখন নতুন নির্মাণ প্রকল্পগুলি লাভজনক হয়ে ওঠে। ফলে, আবাসন বিনিয়োগের হার বাড়তে থাকে। এটি রিয়েল এস্টেট খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করে এবং সামগ্রিক অর্থনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

ব্যাংক ঋণ এবং হাউস প্রাইসের দোটানা:
ঘরের দাম বৃদ্ধির ফলে বাড়ির মূল্য বন্ধকী সম্পত্তি হিসেবে বেড়ে যায়। এর ফলে ঋণগ্রহণ সহজ হয় এবং ক্রেডিট প্রবাহ বাড়ে। অন্যদিকে, ঋণের সহজলভ্যতা আবার ঘরের চাহিদা ও দাম বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে।
এই পারস্পরিক সম্পর্ক অর্থনীতিতে একটি চক্রবদ্ধ প্রভাব ফেলে — যেখানে ব্যাংক ঋণ এবং হাউস প্রাইস একে অপরকে প্রভাবিত করে। এই চক্র রিয়েল এস্টেট এবং আর্থিক বাজারে স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয়, যা ব্যক্তিগত ভোগব্যয়, আবাসন বিনিয়োগ এবং ঋণ বণ্টন ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করে।

Advertisements

মুদ্রানীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ সূচক:
এই ধরনের তথ্য দেশের মুদ্রানীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। রিজার্ভ ব্যাংক বলেছে, “ঘরবাড়ির দাম সম্পর্কে সঠিক ও তাজা তথ্য দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা আর্থিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় সাহায্য করে।”

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
চলমান প্রবণতা ইঙ্গিত দেয় যে, ঘরবাড়ির দাম স্থিতিশীলভাবে বাড়ছে, যা মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির আবাসন পরিকল্পনার উপর প্রভাব ফেলতে পারে। একইসঙ্গে, এই প্রবণতা নির্মাণ শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি করতে পারে।
তবে কিছু শহরে, বিশেষত কোচিতে নেতিবাচক প্রবণতা একটি সতর্ক সংকেত হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে — যা স্থানীয় অর্থনীতি, চাহিদা এবং রিয়েল এস্টেট বাজারের ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত দেয়।

সবমিলিয়ে, ভারতের রিয়েল এস্টেট খাত এখনো সুসংগঠিতভাবে এগোচ্ছে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কলকাতার মত শহরে ধারাবাহিক বাড়ির দাম বৃদ্ধি বিনিয়োগকারীদের জন্য আশাব্যঞ্জক বার্তা বহন করছে। একইসঙ্গে, আর্থিক নীতিনির্ধারক ও পরিকল্পনাকারীদের কাছে এই ডেটা অত্যন্ত মূল্যবান, কারণ এটি দেশের অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণে সহায়ক।