ডিজিটাল পেমেন্ট আরও সুরক্ষিত করতে বড় পদক্ষেপ নিল রিজার্ভ ব্যাংক

ভারতে প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে ডিজিটাল পেমেন্ট। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ ব্যাংক, ওয়ালেট কিংবা ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেন করছেন।…

RBI Digital Payment Security

ভারতে প্রতিদিনের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে ডিজিটাল পেমেন্ট। স্মার্টফোন আর ইন্টারনেটের প্রসারের ফলে কোটি কোটি মানুষ আজ ব্যাংক, ওয়ালেট কিংবা ইউপিআইয়ের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। তবে এই ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বাড়ছে। তাই ডিজিটাল লেনদেনকে আরও সুরক্ষিত করতে বড় পদক্ষেপ নিল রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)।

২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেই আরবিআই জানিয়েছিল যে, দেশের পেমেন্ট ইকোসিস্টেমকে আরও আধুনিক ও নিরাপদ করার জন্য নতুন প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা (Authentication Mechanism) চালু করা হবে। সেই ঘোষণার আনুষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হলো “Reserve Bank of India (Authentication mechanisms for digital payment transactions) Directions, 2025”-এর মাধ্যমে। এই নির্দেশিকা কার্যকর হবে ২০২৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে।

   

কী বলছে নতুন নিয়ম?

আরবিআইয়ের নির্দেশ অনুযায়ী, দেশের সমস্ত পেমেন্ট সিস্টেম প্রোভাইডার এবং পেমেন্ট সিস্টেম পার্টিসিপ্যান্টদের (যেমন ব্যাংক ও নন-ব্যাংক সংস্থা) ২০২৬ সালের এপ্রিলের মধ্যে এই নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক। বর্তমানে বেশিরভাগ ডিজিটাল লেনদেন SMS-ভিত্তিক ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ড (OTP)-এর ওপর নির্ভর করে। কিন্তু OTP-কে একমাত্র ভরসা রাখা আর যথেষ্ট নয় বলে মনে করছে আরবিআই।

নতুন নিয়মে বলা হয়েছে—

প্রত্যেক ডিজিটাল লেনদেনেই অন্তত দুটি আলাদা ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন থাকতে হবে।
এর মধ্যে একটি অবশ্যই ডাইনামিক বা প্রতিটি লেনদেন অনুযায়ী আলাদা হতে হবে, যাতে প্রতারণা ও অননুমোদিত লেনদেন আটকানো যায়।

শুধু দেশীয় লেনদেন নয়, আন্তর্জাতিক কার্ড-নট-প্রেজেন্ট (Card-Not-Present) লেনদেনের ক্ষেত্রেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিদেশে অনলাইন শপিংয়ের সময় ২০২৬ সালের ১ অক্টোবরের মধ্যে কার্ড ইস্যুকারীদের বিশেষ প্রমাণীকরণ ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

ঝুঁকিভিত্তিক ও নমনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা: RBI Digital Payment Security

আরবিআই জানিয়েছে, নতুন কাঠামোটি হবে ঝুঁকিভিত্তিক (risk-based), শক্তিশালী এবং ইন্টারঅপারেবল। অর্থাৎ, গ্রাহকের লেনদেনের ধরণ, অবস্থান এবং আচরণগত তথ্য বিশ্লেষণ করে ঠিক করা হবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা যাচাই প্রয়োজন কিনা। এতে ব্যবহারকারীরা যেমন সুবিধা পাবেন, তেমনই প্রতারণা ঠেকানোর ক্ষেত্রে বড় সুরক্ষা তৈরি হবে।

Advertisements

গ্রাহক সুরক্ষার দায়িত্ব:

এই নির্দেশিকার আওতায়, গ্রাহক যদি কোনো আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েন আর সেটা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নিয়ম না মানার কারণে ঘটে, তবে সেই ক্ষতিপূরণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে ইস্যুয়ার বা পরিষেবা প্রদানকারীর ওপর। ফলে সাধারণ ব্যবহারকারীরা আরও নির্ভরতার সঙ্গে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহার করতে পারবেন।

তথ্য সুরক্ষার সঙ্গেও সামঞ্জস্য:

শুধু আর্থিক নিরাপত্তাই নয়, আরবিআইয়ের এই নতুন নির্দেশিকা ডিজিটাল পার্সোনাল ডাটা প্রোটেকশন অ্যাক্ট, ২০২৩-এর সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। অর্থাৎ, লেনদেনের সময় গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্য ও ডেটা সুরক্ষার বিষয়েও কড়া নজর দেওয়া হবে।

আরবিআইয়ের বার্তা:

আরবিআই স্পষ্ট জানিয়েছে, নতুন এই ব্যবস্থার মূল লক্ষ্য হলো দেশের ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ, নমনীয় ও বিশ্বাসযোগ্য করে তোলা। কোটি কোটি ব্যবহারকারীর আস্থা অর্জনের মাধ্যমে ভারতকে ডিজিটাল লেনদেনে বিশ্বমানের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য।

ডিজিটাল ইন্ডিয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন হয়ে উঠতে চলেছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News