সেপ্টেম্বর থেকে মিলবে না ৫০০ টাকার নোট! দেশজুড়ে জোর জল্পনা

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) আগামী সেপ্টেম্বর ২০৫৫ থেকে সারা দেশের এটিএম-এর মাধ্যমে ৫০০ টাকার নোট বন্ধ করতে যাচ্ছে এমন একটি গুজব রবিবার সন্ধ্যা থেকে…

Rs 500 Notes Safe: RBI Refutes ATM Ban Claims for 2025

রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) আগামী সেপ্টেম্বর ২০৫৫ থেকে সারা দেশের এটিএম-এর মাধ্যমে ৫০০ টাকার নোট বন্ধ করতে যাচ্ছে এমন একটি গুজব রবিবার সন্ধ্যা থেকে দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংবাদটি প্রথমে একটি সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে ফাঁস হয়, যা দ্রুত ভাইরাল হয়ে উঠেছে। এই খবরের সত্যতা নিয়ে নাগরিকদের মধ্যে উদ্বেগ ও জল্পনা শুরু হয়ে গেছে। কিছু মানুষ এই পরিবর্তনকে ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে যাওয়ার একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে এটিকে অপরিমেয় ব্যাঙ্কিং সংকটের মুখোমুখি হওয়ার ভয় দেখাচ্ছেন।

Read Hindi: RBI सितंबर 2025 से ATM से ₹500 के नोट बंद करने जा रहा है!

   

খবরের উৎস ও প্রেক্ষাপট
এই তথ্যটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে একটি X পোস্টের মাধ্যমে, যেখানে একজন ব্যবহারকারী দাবি করেছেন যে RBI এটিএম-এ ৫০০ টাকার নোট বন্ধ করার পরিকল্পনা করেছে। এই পোস্টটি শতাধিক ব্যবহারকারীর প্রতিক্রিয়া পেয়েছে, যার মধ্যে কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে, আবার অনেকে এটিকে মিথ্যা ও অপ্রমাণিত খবর হিসেবে উড়িয়ে দিয়েছে। তবে, RBI বা কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো অফিসিয়াল বিবৃতি জারি হয়নি। ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন যে RBI-এর সাম্প্রতিক নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাঙ্কগুলোকে ১০০ ও ২০০ টাকার নোটের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, তবে ৫০০ টাকার নোট বন্ধের কোনো পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।

ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে এগোচ্ছে ভারত
ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করলে, এই ধরনের একটি সিদ্ধান্তের পেছনে ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে যাওয়ার চেষ্টা থাকতে পারে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে UPI-এর মাধ্যমে ৭০% ডিজিটাল লেনদেন হয়েছে, এবং ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে ১৬.৭৩ বিলিয়ন লেনদেন রেকর্ড করা হয়েছে। সরকারের ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ক্যাশলেস ট্রানজাকশনকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা কালো টাকা ও অর্থপ্রদূষণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে, ৫০০ টাকার নোট বন্ধ করা এই লক্ষ্যে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত রয়েছে।

জনগণের প্রতিক্রিয়া
কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি সহ বিভিন্ন শহরে গৃহীত প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া থেকে দেখা যাচ্ছে, অনেক নাগরিক এই পরিবর্তনকে বিরক্তিকর মনে করছেন। একজন ব্যবসায়ী বলেন, “৫০০ টাকার নোট ছাড়া ছোটখাটো লেনদেনে অসুবিধে হবে। বাজারে ঘুরতে গিয়ে ১০০ বা ২০০ টাকার নোটের পরিমাণ কম থাকে, তাই এটি আমাদের জন্য সমস্যা হতে পারে।” অন্যদিকে, তরুণ প্রজন্মের একটি অংশ ডিজিটাল পেমেন্টের দিকে যাওয়াকে স্বাগত জানাচ্ছে। একজন IT বিশেষজ্ঞ বলেন, “যদি ৫০০ টাকার নোট বন্ধ হয়, তবে আমরা UPI ও অন্যান্য ডিজিটাল পদ্ধতির দিকে বেশি নির্ভর করব, যা দ্রুত ও নিরাপদ।”

Advertisements

ইতিহাসে ফিরে তাকানো
৫০০ টাকার নোট বন্ধের কথা শুনলে মনে পড়ে ২০১৬ সালের নোটবন্ধি। সেই সময় সরকার ৫০০ ও ১০০০ টাকার পুরোনো নোট বাতিল করে নতুন নোট চালু করেছিল, যার লক্ষ্য ছিল কালো টাকা ও জাল কারেন্সি নিয়ন্ত্রণ। তবে, RBI-এর ২০১৮ রিপোর্ট অনুযায়ী, বন্ধ নোটের ৯৯.৩% ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছিল, যা নির্দেশ করে যে এই পদক্ষেপটি কালো টাকা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছিল। এই ইতিহাসের পটভূমিতে, ৫০০ টাকার নোট ATMs থেকে সরানোর সিদ্ধান্ত কি সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে।

অর্থনৈতিক প্রভাব
অর্থনীতিবিদরা জানাচ্ছেন, যদি এই সিদ্ধান্তটি সত্যি হয়, তবে এর পারিপার্শ্বিক প্রভাব গভীর হতে পারে। ভারতের ছায়াপথ অর্থনীতি (shadow economy) এখনো ২৩-২৬% GDP-এর মতো বড়, যেখানে ক্যাশের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ৫০০ টাকার নোট বন্ধ হলে ছোট ব্যবসায়ীদের উপর চাপ পড়তে পারে, বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় যেখানে ডিজিটাল পেমেন্টের প্রভাব এখনো সীমিত। তবে, যদি সরকার ডিজিটাল পেমেন্টে সাবসিডি বা ফ্রি সেবা চালু করে, তবে এই পরিবর্তন গ্রহণযোগ্য হতে পারে।

বিজ্ঞাপ্তি ও সতর্কতা
RBI বা সরকারের পক্ষ থেকে এখনো এই খবরের সত্যতা নিশ্চিত হয়নি। তাই, বিশেষজ্ঞরা সোশ্যাল মিডিয়ার অপ্রমাণিত খবরে ভুল বোঝাবুঝি এড়াতে পরামর্শ দিচ্ছেন। নাগরিকদের অনুরোধ করা হচ্ছে, অফিসিয়াল সূত্র থেকে তথ্য যাচাই করে ক্রিয়াকলাপ চালাতে।

সেপ্টেম্বর ২০৫৫ থেকে ৫০০ টাকার নোট ATMs থেকে সরানোর কথা এখনো অপরিষ্কার। তবে, এই গুজবটি দেশব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে। ডিজিটাল ভারতের পথে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হোক বা অর্থনৈতিক সংস্কারের অংশ হোক, সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপটি নাগরিকদের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলবে। আগামী দিনে RBI-এর অফিসিয়াল বিবৃতির জন্য অপেক্ষা করা ছাড়া বিকল্প নেই।