মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগে স্বস্তি, জানাল RBI জরিপ

Chhattisgarh inflation

ভারতীয় পরিবারগুলির মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত ধারণা ও প্রত্যাশায় হ্রাস এসেছে বলে জানিয়েছে রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। জুলাই ২০২৫-এ পরিচালিত দ্বি-মাসিক “Inflation Expectations Survey of Households (IESH)” জরিপের ফলাফলে উঠে এসেছে এই তথ্য। ১৯টি প্রধান শহরের ৫,১৯৭টি বৈধ প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে তৈরি এই রিপোর্টে স্পষ্ট যে, মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সাধারণ মানুষের উদ্বেগ অনেকটাই কমেছে।

Advertisements

বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির ধারণায় ৫০ বেসিস পয়েন্টের পতন:
RBI-র রিপোর্ট অনুযায়ী, মে ২০২৫-এ যেখানে মধ্যবর্তী (median) মুদ্রাস্ফীতির ধারণা ছিল ৭.৭ শতাংশ, জুলাইয়ে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৭.২ শতাংশে — অর্থাৎ ৫০ বেসিস পয়েন্টের হ্রাস ঘটেছে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত যে, বাজারে পণ্যের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে মানুষের প্রত্যাশা আগের তুলনায় অনেকটাই সংযত হয়েছে।

আগামী ৩ মাস ও ১ বছরের জন্য প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি:
জরিপ অনুসারে, আগামী ৩ মাসের জন্য প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতিও ৬০ বেসিস পয়েন্ট কমে হয়েছে ৮.৩ শতাংশ। একইসঙ্গে, এক বছরের জন্য প্রত্যাশা কমে হয়েছে ৯.০ শতাংশ, যেখানে পূর্ববর্তী মে মাসে তা ছিল ৯.৫ শতাংশ।
এই তথ্যগুলি ইঙ্গিত করে যে মানুষ এখন আগের তুলনায় কম দামে বাজার চলবে বলেই মনে করছে। বিশেষ করে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ অনেকটাই কমেছে।

খাদ্যদ্রব্য মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশাও হ্রাস:
মুদ্রাস্ফীতির সবচেয়ে সংবেদনশীল ক্ষেত্র হল খাদ্যদ্রব্য। জরিপ অনুযায়ী, খাদ্যের দাম বৃদ্ধির প্রত্যাশা প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা, যা মে মাসে ছিল ৮২.৮ শতাংশ। অর্থাৎ, সাধারণ মানুষ খাদ্যদ্রব্যের দাম নিয়ে কিছুটা হলেও আশ্বস্ত।

শহরভিত্তিক বৈচিত্র্য: ভোপালে সর্বোচ্চ প্রত্যাশা, আহমেদাবাদে সর্বনিম্ন:
জরিপে অংশগ্রহণকারী শহরগুলোর মধ্যে দেখা গেছে ভিন্ন ভিন্ন মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা। ভোপাল শহরের পরিবারগুলোর মধ্যে এক বছরের জন্য প্রত্যাশিত মুদ্রাস্ফীতি সবচেয়ে বেশি—১১.২ শতাংশ। অন্যদিকে আহমেদাবাদের পরিবারগুলো মাত্র ৫.৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতির প্রত্যাশা করছে। দিল্লির মানুষ বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতিকে ৮.১ শতাংশ বলে মনে করছে এবং আগামী এক বছরে তা ৯ শতাংশে পৌঁছাবে বলে মনে করছে।

Advertisements

বয়স ও পেশাভিত্তিক পার্থক্য:
উল্লেখযোগ্য একটি দিক হল—বয়োজ্যেষ্ঠদের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে উদ্বেগ সবচেয়ে বেশি। ৬০ বছরের বেশি বয়সী মানুষেরা এক বছরের জন্য মুদ্রাস্ফীতি ৯.৬ শতাংশে পৌঁছাবে বলে মনে করছেন। অন্যদিকে দৈনিক মজুরি ভিত্তিক শ্রমিকদের মধ্যে এই প্রত্যাশা অনেকটাই সংযত—তারা মাত্র ৮.১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি প্রত্যাশা করছেন।

RBI-র সতর্ক ব্যাখ্যা:
তবে, রিজার্ভ ব্যাংক এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করে জানিয়েছে—এই জরিপে উঠে আসা ফলাফল শুধুমাত্র জনগণের মতামতকে প্রতিফলিত করে। ব্যাংকের পক্ষ থেকে এগুলি সমর্থন করা হয় না। এক বিবৃতিতে RBI জানিয়েছে: “এই জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং খরচের ধরন অনুসারে তাদের প্রত্যাশা উঠে আসে। এটি কেবলমাত্র নিকট ভবিষ্যতের মুদ্রাস্ফীতির গতিপ্রকৃতি নিয়ে ধারণা দেয়, যা রিজার্ভ ব্যাংকের নিজস্ব মূল্যায়নের সঙ্গে সব সময় মেলে না।”

সার্বিক মূল্যায়ন:
এই জরিপ থেকে বোঝা যায়, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জনসাধারণের মনোভাব কিছুটা হলেও ইতিবাচক দিকে পরিবর্তিত হয়েছে। যদিও অনেক মানুষ এখনও মূল্যবৃদ্ধি প্রত্যাশা করছে, তবে সংখ্যার দিক থেকে তা আগের তুলনায় কমে এসেছে। বিশেষ করে খাদ্যপণ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে সাধারণ মানুষ এখন কিছুটা স্বস্তিতে রয়েছে।

ভবিষ্যতের দিকে নজর:
RBI-র এই জরিপের ফলাফল সরকার ও নীতি-নির্ধারকদের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এটি স্পষ্ট করে যে, মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে গৃহীত নীতিগুলি হয়তো ইতিমধ্যেই কাজ করতে শুরু করেছে। তবে এখনও বহু মানুষ মূল্যবৃদ্ধির প্রত্যাশা করছে—সেই দিকটিও নজর এড়ানো যাবে না।
দেশের নাগরিকদের মুদ্রাস্ফীতি সংক্রান্ত মানসিকতার উপর ভিত্তি করে তৈরি এই জরিপ একদিকে যেমন আশার সঞ্চার করছে, তেমনি অন্যদিকে দিচ্ছে নীতিগত মনোযোগের বার্তা। মূল্যবৃদ্ধি সংক্রান্ত নীতি ও পদক্ষেপের ক্ষেত্রে এই ধরনের তথ্য হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ দিশারি।