ডাক বিভাগের (Post Offices) উদ্যোগে এবার আরও সহজ হলো ছোট সঞ্চয় প্রকল্পের লেনদেন। সম্প্রতি পোস্ট অফিসের আরডি (রিকরিং ডিপোজিট) এবং পিপিএফ (পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড) অ্যাকাউন্টে আধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক ই-কেওয়াইসি (ইলেকট্রনিক-নো ইউর কাস্টমার) সেবা চালু হয়েছে। এর ফলে গ্রাহকরা এখন আরডি ও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা, টাকা জমা, ঋণ নেওয়া, ঋণ পরিশোধ এবং পিপিএফ থেকে টাকা তোলা — সবই করতে পারবেন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে, কোনো রকম শারীরিক ফর্ম বা স্লিপ ছাড়া।
এই সেবা কার্যকর হয়েছে ২৩ এপ্রিল ২০২৫ থেকে। আগে শুধুমাত্র পোস্ট অফিসের মাসিক আয় প্রকল্প (MIS), টাইম ডিপোজিট (TD), কিষান বিকাশ পত্র (KVP), এবং ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট (NSC)-এর ক্ষেত্রে এই সুবিধা চালু ছিল। এবার সেই সুবিধার পরিধি আরডি এবং পিপিএফ প্রকল্পেও সম্প্রসারিত করা হলো।
ডাক বিভাগের সর্বশেষ নির্দেশনা অনুযায়ী (SB অর্ডার, ৭ জুলাই ২০২৫), সারা দেশের সমস্ত CBS (কোর ব্যাংকিং সলিউশন) সক্রিয় পোস্ট অফিসে এই নতুন বায়োমেট্রিক সুবিধা পাওয়া যাবে। এর ফলে গ্রাহকরা ফিজিকাল পে-ইন স্লিপ, উইথড্রয়াল ভাউচার বা অন্য কোনো রকমের কাগজপত্রের ঝামেলা ছাড়াই লেনদেন করতে পারবেন।
কোন কোন সেবা এখন বায়োমেট্রিক ই-কেওয়াইসি মাধ্যমে পাওয়া যাবে?
১. আরডি ও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট খোলা
২. আরডি ও পিপিএফ অ্যাকাউন্টে টাকা জমা
৩. আরডি ও পিপিএফ এর ওপর ঋণ নেওয়া
৪. আরডি ও পিপিএফ ঋণ পরিশোধ
৫. পিপিএফ থেকে টাকা তোলা (কোনো সীমাবদ্ধতা ছাড়া)
ডাক বিভাগের এই পদক্ষেপে গ্রাহকরা আরও দ্রুত ও নিরাপদে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন। নতুন অ্যাকাউন্ট খোলার সময় প্রথম জমা হিসেবে যে অর্থ উল্লেখ থাকবে, সেটিকেই প্রাথমিক জমা হিসেবে ধরা হবে।
কিভাবে কাজ করবে এই বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়া?
প্রথমে পোস্ট অফিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট গ্রাহকের বায়োমেট্রিক (ফিঙ্গারপ্রিন্ট) নেবে, যার মাধ্যমে আধারের মাধ্যমে গ্রাহকের সম্মতি নেয়া হবে। প্রয়োজনীয় সমস্ত তথ্য এন্ট্রি করার পর আবারও বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন হবে, যা শেষ ধাপে লেনদেন নিশ্চিত করবে। এর ফলে পে-ইন স্লিপ বা উইথড্রয়াল ফর্মের প্রয়োজনীয়তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করা হয়েছে।
যদি কোনো গ্রাহক পোস্ট অফিস সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা স্থানান্তর করতে চান, তবে অবশ্যই সেই সেভিংস অ্যাকাউন্টটি একক বা যৌথ ‘B’ ধরণের হতে হবে। এই ক্ষেত্রে SB-7 ফর্মও প্রয়োজন হবে না, কারণ বায়োমেট্রিক যাচাই-ই চূড়ান্ত অনুমোদন হিসেবে গণ্য হবে।
আরও বায়োমেট্রিক সেবা আসছে
ডাক বিভাগ জানিয়েছে, আগামীতে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ সেবা বায়োমেট্রিক ই-কেওয়াইসি পদ্ধতিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তার মধ্যে রয়েছে:
অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা
নমিনি পরিবর্তন বা হালনাগাদ করা
অ্যাকাউন্ট ট্রান্সফার
গ্রাহকের নিরাপত্তার জন্য মাস্কড আধার:
গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষার জন্য আধার নম্বরকে মাস্ক (আংশিক গোপন) করা হবে। যেমন: xxx-xxx-1234। যদি কোনো ডকুমেন্টে সম্পূর্ণ আধার নম্বর থাকে, তবে পোস্ট অফিসের কর্মীরা প্রথম আটটি সংখ্যা কালো কালিতে বা স্কেচ পেনে ঢেকে দেবেন। সব ধরনের অ্যাকাউন্ট ওপেনিং ফর্ম (AOF), KYC ফর্ম এবং আধারের ফটোকপিতে এই মাস্কিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
ডাক বিভাগের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, “সব পোস্ট অফিস ও CBS-CPC গুলোকে নিশ্চিত করতে হবে যে কোনো ফর্ম বা নথিতে পূর্ণ আধার নম্বর প্রকাশ না পায় এবং গ্রাহকের তথ্য সম্পূর্ণ সুরক্ষিত থাকে।”
গ্রাহকদের জন্য বড় সুবিধা:
এই আধার ভিত্তিক বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ার ফলে গ্রাহকরা তাদের আরডি ও পিপিএফ অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সমস্ত কাজ দ্রুত ও সহজে করতে পারবেন। বিশেষ করে বয়স্ক নাগরিক বা গ্রামাঞ্চলের গ্রাহকদের জন্য এটি অনেক বড় সুবিধা, কারণ এখন আর দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ফর্ম পূরণের ঝামেলা নেই।
ডাক বিভাগের এই ডিজিটাল রূপান্তরের ফলে পোস্ট অফিসের ছোট সঞ্চয় প্রকল্পগুলো আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছাবে এবং আর্থিক অন্তর্ভুক্তির (financial inclusion) পথে এক বড় পদক্ষেপ হবে।