মোদীর নেতৃত্বে ভারত-ব্রিটেন FTA চুক্তি হস্তগত, বললেন অনিল আগরওয়াল

ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পাদিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়েছেন বেদান্তা গ্রুপের…

PM Modi UK Visit Set For July 23–24, Followed By State Trip To Maldives

ভারত ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পাদিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এ চুক্তিকে ‘ঐতিহাসিক’ ও ‘অনন্য’ আখ্যা দিয়েছেন বেদান্তা গ্রুপের নন-এক্সিকিউটিভ চেয়ারম্যান অনিল আগরওয়াল। তাঁর মতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্ব ও দুই দেশের পারস্পরিক বিশ্বাসের উন্নয়নই এই সাফল্যের প্রধান ভিত্তি।

চুক্তির প্রেক্ষাপট ও তাৎপর্য:
অনিল আগরওয়াল ইন্ডিয়ান নিউজ এজেন্সি আইএএনএস-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, “ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুধু একটি বাণিজ্যিক সমঝোতা নয়, এটি দুই দেশের ভবিষ্যৎ অংশীদারিত্বের একটি মাইলফলক। এই চুক্তির ফলে দুই দেশের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে।”
যুক্তরাজ্যের ৪০০–৫০০ বছরের শিল্প ও প্রযুক্তিগত অভিজ্ঞতা ভারতকে বহুগুণে উপকৃত করতে পারে বলে মনে করেন আগরওয়াল। অপরদিকে ভারত তার শক্তিশালী উৎপাদন খাতের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যে রপ্তানি বাড়িয়ে দুই দেশই পারস্পরিক লাভবান হতে পারে।

   

কোন কোন খাতে সুবিধা মিলবে?
চুক্তির আওতায় ভারত তার বাজারে যুক্তরাজ্যের ৯০ শতাংশ পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাস করবে এবং ব্রিটেন ভারতের ৯৯ শতাংশ রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমাবে। এই উদ্যোগের ফলে ভারতের পাঠানো পণ্যের ওপর শুল্ক প্রায় ৯০–৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে, যা বাণিজ্যের মাত্রাকে $৩০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করতে পারে।

ভারত ব্রিটেনে রপ্তানি করবে:
টেক্সটাইল ও প্রস্তুত পোশাক
চামড়াজাত পণ্য
ভোগ্যপণ্য ও হস্তশিল্প
কৃষিপণ্য ও প্রসেসড ফুড
অন্যদিকে যুক্তরাজ্য ভারতকে দেবে:
পরমাণু শক্তি প্রযুক্তি
প্রতিরক্ষা সামগ্রী ও জ্ঞান
উন্নত গাড়ি ও মেশিনারিজ
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে উন্নত সেবা

শুল্ক ছাড় ও প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা:
এই চুক্তির মাধ্যমে ভারতীয় রপ্তানিকারকরা ব্রিটিশ বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে, বিশেষ করে টেক্সটাইল, চামড়া ও কৃষিপণ্যে। ফলে বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের মতো অন্যান্য আঞ্চলিক রপ্তানিকারকদের চেয়ে ভারতের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা অনেকটাই বাড়বে।

ভারতের কৃষিপণ্য ইউরোপের অন্যতম শীর্ষ রপ্তানিকারক জার্মানির সমকক্ষ হয়ে উঠতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের জন্য ভারত একটি বড় বাজার হয়ে উঠবে, যেখানে দীর্ঘমেয়াদে তাদের রপ্তানি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে বলে সরকারি সূত্র জানায়।

Advertisements

প্রশাসনিক ও শুল্ক প্রক্রিয়ায় সহজতা:
FTA-র অন্যতম সুবিধা হল, শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের পাশাপাশি কাস্টমস প্রক্রিয়া ও রেগুলেটরি ব্যারিয়ার অনেকটাই সহজ হবে। ফলে দুই দেশের মধ্যে পণ্য প্রবাহ গতিশীল হবে, সময় ও খরচ কমবে এবং ব্যবসার পরিবেশ আরও উন্নত হবে।

মোদীর সফর ও আলোচনার পরিবেশ:
চুক্তির চূড়ান্ত ঘোষণা উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক লন্ডন সফরকেও বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে উল্লেখ করেছেন আগরওয়াল। তিনি বলেন, “মোদীজির ব্যক্তিত্ব, আন্তরিকতা ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ তৈরির ক্ষমতা ব্রিটিশ সমাজেও দাগ কেটেছে। তিনি স্থানীয় চায়ের দোকানে গিয়ে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন, মসলা চায়ের স্বাদ উপভোগ করেছেন এবং সব স্তরের মানুষকে আপন করে নিয়েছেন।”
এ সফরের সময় দুই দেশের শিল্পপতিরা একত্রিত হয়ে চুক্তির নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেন এবং ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে চিন্তাভাবনা করেন। আগরওয়ালের মতে, এই ‘ইতিবাচক পরিবেশ’ চুক্তিকে বাস্তবায়নের পথে অনেকটাই মসৃণ করেছে।

ইউরোপের দিকেও প্রসার সম্ভাবনা:
এই চুক্তিকে ‘শুধু শুরু’ হিসেবেই দেখছেন অনিল আগরওয়াল। তাঁর মতে, ব্রিটেনের সঙ্গে এই সমঝোতা ইউরোপের অন্যান্য দেশের সঙ্গেও ভবিষ্যতে অনুরূপ বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে তোলার পথ প্রশস্ত করবে।

ভারত-ব্রিটেন মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি শুধু দু’দেশের মধ্যে রপ্তানি ও আমদানির সুবিধা এনে দেবে না, বরং দুই দেশের মানুষের জীবনমান ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্ব, কূটনৈতিক দূরদর্শিতা ও শিল্পখাতের উদ্যমই এ চুক্তিকে সফল করে তুলেছে।
এই চুক্তি বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে ভারত একটি বৈশ্বিক বাণিজ্যিক শক্তি হিসেবে তার অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করল—এটাই নিঃসন্দেহে বলাই যায়।