ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত মঙ্গলবার ২০২৫ সালের বাজেটের পরবর্তী ওয়েবিনারে MSMEs (ছোট ও মাঝারি উদ্যোগ) খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তুলে ধরেন এবং সরকারের পক্ষ থেকে এই খাতকে শক্তিশালী করতে বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বলেন। তিনি বলেন, “MSMEs খাত ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটি রূপান্তরমূলক শক্তি, এবং সরকার এই খাতের বিকাশে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী তার ভাষণে জানিয়েছেন যে, সরকার MSMEs খাতের বিকাশে আরও সঠিক এবং সুষ্ঠু নীতিমালা গ্রহণ করতে চায়। এর পাশাপাশি, তিনি অ-আর্থিক খাতের নিয়ম এবং বিধিনিষেধ পর্যালোচনা করার জন্য একটি নতুন কমিটি গঠনের ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, “আমরা একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যার কাজ হবে অ-আর্থিক খাতের নিয়মগুলো পর্যালোচনা করা। আমাদের উদ্দেশ্য হলো এগুলোকে আধুনিক, নমনীয় এবং জনগণের জন্য সহজ করতে হবে। এই পদক্ষেপে শিল্পক্ষেত্রের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
এছাড়া, প্রধানমন্ত্রী মোদী ভারতের সরকারের নীতির ধারাবাহিকতার প্রশংসা করেন। তিনি জানান, “আজ থেকে এক দশক আগে থেকে ভারত সরকারের নীতিতে একটি অভূতপূর্ব ধারাবাহিকতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সরকারের এই ধারাবাহিকতা দেশের অর্থনীতির উন্নতির পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। গত ১০ বছরে সরকার একাধিক সংস্কার, আর্থিক শৃঙ্খলা, স্বচ্ছতা, এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করেছে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ধারাবাহিকতা এবং সংস্কারের ফলে আমাদের শিল্প খাতে নতুন আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, আগামী বছরগুলোতেও আমাদের নীতির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে, বিশেষ করে ম্যানুফ্যাকচারিং এবং রপ্তানি খাতে।” তিনি বলেন, “আমরা সরকারের নীতির ধারাবাহিকতা এবং সংস্কারের মাধ্যমে শিল্পক্ষেত্রের জন্য একটি স্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করতে পারব।”
বিশ্বের সঙ্গে ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্কের গুরুত্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ বিশ্বের প্রতিটি দেশ ভারতকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক অংশীদার হিসেবে দেখতে চায়। আমাদের ম্যানুফ্যাকচারিং খাতকে এই অংশীদারিত্বের সুবিধা পুরোপুরি গ্রহণ করতে হবে।”
আত্মনির্ভর ভারত এবং দেশের অর্থনৈতিক পুনর্গঠন বিষয়েও তিনি কথা বলেন। তিনি বলেন, “আমরা আত্মনির্ভর ভারত গঠনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি এবং একাধিক সংস্কারের মাধ্যমে ভারতের অর্থনীতির গতিপথ পরিবর্তন করেছি। কোভিড-১৯ এর প্রভাব সত্ত্বেও আমাদের সংস্কার পরিকল্পনা ভারতকে বিশ্বের অন্যতম দ্রুততম বৃদ্ধিপ্রাপ্ত অর্থনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।”
প্রধানমন্ত্রী PLI (প্রোডাকশন লিঙ্কড ইনসেনটিভ) স্কিমের সাফল্যও তুলে ধরেন। তিনি জানান, “আজকের দিনে PLI স্কিমের মাধ্যমে ১৪টি খাত উপকৃত হচ্ছে। এই স্কিমের মাধ্যমে ৭৫০টির বেশি ইউনিট অনুমোদিত হয়েছে, যার ফলে ১.৫ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ এসেছে, ১৩ লাখ কোটি টাকার উৎপাদন হয়েছে এবং ৫ লাখ কোটি টাকার রপ্তানি হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে, আমাদের উদ্যোক্তাদের যথাযথ সুযোগ দিলে তারা যে কোনো খাতে সফল হতে পারে।”
ভারতকে বিশ্বের একটি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কেন্দ্র হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভারতকে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে দেখছে। আমাদের শিল্প খাতকেও এই নতুন সুযোগ গ্রহণ করতে হবে এবং ভারতের অর্থনৈতিক সম্প্রসারণে অংশগ্রহণ করতে হবে।”
এমন এক সময়, যখন বিশ্ব অর্থনীতি চ্যালেঞ্জের মুখে, প্রধানমন্ত্রী মোদী আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে ভারত ভবিষ্যতে উন্নতি ও প্রবৃদ্ধির নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে। তিনি সকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে নতুন সুযোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলেন, “আমাদের অবশ্যই এই সুযোগগুলো গ্রহণ করতে হবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধিতে ভারতকে অন্যতম প্রধান খেলোয়াড় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী মোদী এমএসএমই খাতের গুরুত্ব ও সরকারের সংস্কারের পাশাপাশি ধারাবাহিক নীতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভারতের অর্থনৈতিক পরিবেশে নতুন আশার সঞ্চার করেছেন। তার এই বক্তব্য দেশের ব্যবসায়ীদের জন্য একটি নতুন দিগন্ত উন্মুক্ত করছে, এবং সরকারের সমর্থন ও নীতির স্থিরতা নিশ্চিত করছে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি।