আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে বিশ্বরেকর্ড গড়ল প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা (PM Jan Dhan Yojana) আজ ১১ বছর পূর্ণ করল। ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট চালু হওয়া এই আর্থিক…

Cabinet Approves PM Dhan-Dhaanya Krishi Yojana With Rs 24,000 Crore Annual Outlay

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর স্বপ্নের প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা (PM Jan Dhan Yojana) আজ ১১ বছর পূর্ণ করল। ২০১৪ সালের ২৮ আগস্ট চালু হওয়া এই আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি আজ বিশ্বের সবচেয়ে বড় উদ্যোগে পরিণত হয়েছে। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে ৫৬ কোটিরও বেশি ভারতীয়কে আনুষ্ঠানিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়েছে। এর ফলে শুধু সঞ্চয়ের প্রসার নয়, বরং মানুষের হাতে পৌঁছেছে মর্যাদা, ক্ষমতায়ন ও আত্মনির্ভরতার সুযোগ।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এক্স-এ (পূর্বতন টুইটার) পোস্ট করে লিখেছেন—
“যখন দেশের শেষ মানুষটিও আর্থিকভাবে সংযুক্ত হয়, তখন গোটা জাতি একসঙ্গে এগিয়ে যায়। সেটাই সম্ভব করেছে জনধন যোজনা। এই প্রকল্প মানুষের মর্যাদা বাড়িয়েছে এবং নিজস্ব ভাগ্য গড়ার শক্তি দিয়েছে।”
তিনি এই কর্মসূচিকে #11YearsOfJanDhan হ্যাশট্যাগে তুলে ধরেছেন।

   

কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, আজ পর্যন্ত খোলা ৫৬ কোটিরও বেশি জনধন অ্যাকাউন্টের মধ্যে প্রায় ৬৭ শতাংশ অ্যাকাউন্ট রয়েছে গ্রামীণ ও অর্ধ-শহুরে এলাকায়। আরও বড় সাফল্য হল, ৫৬ শতাংশ অ্যাকাউন্ট মহিলাদের নামে।

তিনি বলেন, “আর্থিক অন্তর্ভুক্তি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি। যখন প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকে, তখন সমাজের দরিদ্র ও প্রান্তিক মানুষও আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় না।”

সরকার জানিয়েছে, এতদিনে ৩৮ কোটিরও বেশি রূপে ডেবিট কার্ড বিনামূল্যে বিতরণ হয়েছে। এই কার্ডই ডিজিটাল লেনদেনে বিপ্লব এনেছে। এছাড়া জনধন অ্যাকাউন্টগুলিই সরাসরি সুবিধা হস্তান্তর (DBT)-এর প্রধান মাধ্যম হয়ে উঠেছে, যেখানে সরকারি ভর্তুকি ও সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের টাকা সরাসরি মানুষের হাতে পৌঁছে যাচ্ছে।

অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী এই উদ্যোগকে ভারতের নয়, বরং বিশ্বের সবচেয়ে সফল আর্থিক অন্তর্ভুক্তি কর্মসূচি বলে উল্লেখ করেছেন। তার কথায়—
“জনধন শুধু একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নয়। এটি মর্যাদা, ক্ষমতায়ন ও সুযোগের প্রতীক।”

বর্তমানে চলমান আর্থিক অন্তর্ভুক্তি ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে দেশের ২.৭ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েতে নাগরিকদের নতুন অ্যাকাউন্ট খোলা, বীমা ও পেনশন প্রকল্পে নাম লেখানো এবং কেওয়াইসি আপডেট করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। এই বিশেষ অভিযান ১ জুলাই শুরু হয়ে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে।
জনধন যোজনার মূল শক্তি হল ‘JAM Trinity’— জনধন-আধার-মোবাইল। এর ফলে ভর্তুকি বণ্টনে কোনো ফাঁকফোকর থাকছে না। আর্থিক বছর ২০২৪-২৫-এ DBT প্রকল্পগুলির মাধ্যমে প্রায় ৬.৯ লক্ষ কোটি টাকা সরাসরি উপভোক্তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা হয়েছে।

Advertisements

অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে: ৫৬.১৬ কোটি (১৩ আগস্ট ২০২৫ পর্যন্ত)
মোট আমানত: ২.৬৮ লক্ষ কোটি টাকা — ২০১৫ সালের তুলনায় প্রায় ১২ গুণ বৃদ্ধি
প্রতি অ্যাকাউন্টে গড় আমানত: ৪,৭৬৮ টাকা— ২০১৫ সালের তুলনায় ৩.৭ গুণ বৃদ্ধি
রূপে কার্ড ইস্যু: ৩৮.৬৮ কোটি

শুধু সঞ্চয় নয়, এই প্রকল্প ডিজিটাল লেনদেনের ক্ষেত্রেও গতি এনেছে। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে যেখানে ৫৩৫ কোটি UPI লেনদেন হয়েছিল, সেখানে ২০২৪-২৫ সালে সেই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮,৫৮৭ কোটিতে। একই সময়ে মোট ডিজিটাল লেনদেন প্রায় ১০ গুণ বেড়েছে।

জনধন অ্যাকাউন্টধারীরা পাচ্ছেন শূন্য ব্যালেন্সে অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা, বিনামূল্যে রূপে কার্ড যার সঙ্গে রয়েছে ₹২ লক্ষ পর্যন্ত দুর্ঘটনা বিমা, এবং সর্বাধিক ₹১০,০০০ পর্যন্ত ওভারড্রাফট সুবিধা।

এই অ্যাকাউন্টগুলি নাগরিকদের অন্যান্য সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প যেমন প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি বিমা যোজনা ও প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা-এর সঙ্গেও যুক্ত করছে। ফলে, দরিদ্র মানুষও এখন সহজেই আর্থিক সুরক্ষার আওতায় আসছেন।
অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, ১২তম বছরে প্রবেশ করা এই কর্মসূচি শুধু সঞ্চয় ও ঋণসুবিধার প্রসার নয়, বরং ভারতের ডিজিটাল আর্থিক পরিবেশকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে।

প্রকল্পটি আগামী দিনে গ্রামীণ অর্থনীতিকে মজবুত করবে, নারীর ক্ষমতায়ন বাড়াবে এবং দেশকে ‘আর্থিক অন্তর্ভুক্তি থেকে আর্থিক ক্ষমতায়ন’-এর পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী জনধন যোজনা ভারতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোতে এক নতুন যুগের সূচনা করেছে। আজ কোটি কোটি দরিদ্র নাগরিকের হাতে যখন নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, সঞ্চয় ও বিমা সুরক্ষা পৌঁছে গেছে, তখন বলা যায়— এই প্রকল্প সত্যিই “গেম-চেঞ্জার”। আগামী দিনে এটি ভারতের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।