লোনে পার্ট-পেমেন্টের পরিকল্পনা করছেন? জেনে নিন কীভাবে প্রভাব ফেলবে আপনার ক্রেডিট স্কোরে

লোন ব্যবস্থাপনা আপনার আর্থিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিকভাবে ঋণ পরিশোধ করলে শুধু আপনার মাসিক খরচই কমবে না, বরং আপনার ক্রেডিট স্কোরেও প্রভাব পড়তে পারে।…

Does Prepaying Loan Boost or Hurt Your Credit Score in India

লোন ব্যবস্থাপনা আপনার আর্থিক জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সঠিকভাবে ঋণ পরিশোধ করলে শুধু আপনার মাসিক খরচই কমবে না, বরং আপনার ক্রেডিট স্কোরেও প্রভাব পড়তে পারে। অনেকেই ভেবে থাকেন, ঋণের উপর অতিরিক্ত অর্থ প্রদান বা পার্ট-পেমেন্ট (Loan Part-Payment) করলে সুদের পরিমাণ কমানো যায়। কিন্তু এই পদক্ষেপ কি সত্যিই আপনার ক্রেডিট স্কোরের জন্য ভালো, নাকি এতে ক্ষতি হতে পারে?
আপনার যদি পার্সোনাল লোন, হোম লোন বা দীর্ঘমেয়াদি কোনো ঋণ থাকে, তাহলে পার্ট-পেমেন্টের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জানা অত্যন্ত প্রয়োজন।

পার্ট-পেমেন্ট কী?
পার্ট-পেমেন্ট হলো ঋণের উপর অতিরিক্ত অর্থ প্রদান, যা আপনার নিয়মিত EMI (Equated Monthly Installments)-এর চেয়ে বেশি। এই অর্থ ঋণের মূলধন বা Principal Amount কমাতে ব্যবহার করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই ঋণের মেয়াদও কমানো যায়, যা নির্ভর করে ব্যাংক বা লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানের শর্তের উপর এবং আপনার পছন্দের উপর।

   

ক্রেডিট স্কোরে প্রভাব:
CIBIL এবং বিভিন্ন ঋণ বিশেষজ্ঞদের মতে, পার্ট-পেমেন্ট করলে আপনার ক্রেডিট স্কোর ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বরং সঠিকভাবে করলে এটি আপনার স্কোর বাড়াতেও সাহায্য করতে পারে।

পজিটিভ প্রভাব:
বাকি ঋণের পরিমাণ কমানো: পার্ট-পেমেন্টের ফলে আপনার ঋণের মূলধন দ্রুত কমে যায়। ফলে আপনার মোট ঋণের বোঝা কমে যায়। যেহেতু ঋণ পরিশোধের পরিমাণ কমানো ক্রেডিট স্কোরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক, এটি আপনার স্কোর উন্নত করতে সহায়ক।

ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও কমানো: আপনার যদি একাধিক ঋণ থাকে বা ক্রেডিট কার্ডের ব্যবহার বেশি হয়, তখন পার্ট-পেমেন্টের মাধ্যমে বাকি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে ফেলা যায়। এর ফলে আপনার ক্রেডিট ইউটিলাইজেশন রেশিও (আপনি কত শতাংশ ক্রেডিট ব্যবহার করছেন) কমে যায়, যা ক্রেডিট স্কোর বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ।

ভালো অর্থনৈতিক আচরণের প্রমাণ: সময়ের আগে বা অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করা আপনার আর্থিক শৃঙ্খলার পরিচয় দেয়। ক্রেডিট ব্যুরো বা ব্যাংক এই আচরণকে পজিটিভ হিসেবে দেখে।

Advertisements

নেগেটিভ বা নিউট্রাল প্রভাব (বিরল ক্ষেত্রে):
EMI না কমানো: যদি আপনি পার্ট-পেমেন্ট করেন কিন্তু ব্যাংককে জানিয়ে EMI বা মেয়াদ কমানোর অনুরোধ না করেন, তাহলে মাসিক EMI একই থেকে যায়। এতে আপনার আর্থিক সুবিধা কমে যায় এবং আপনার ক্রেডিট প্রোফাইলে বড় কোনো পরিবর্তন নাও আসতে পারে।
বারবার পার্ট-পেমেন্টের অনুরোধ: কিছু কিছু ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত এবং বারবার পার্ট-পেমেন্ট করলে ব্যাংক এটিকে আর্থিক অস্থিরতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখতে পারে। তবে, এটি খুবই বিরল।

পার্ট-পেমেন্ট করার আগে যা মনে রাখতে হবে:
ফি বা চার্জ সম্পর্কে জেনে নিন: অনেক ব্যাংক বা ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান পার্ট-পেমেন্টের জন্য অতিরিক্ত ফি বা চার্জ নেয়। আগে থেকেই এগুলো সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন।
EMI বা মেয়াদ কমানো স্পষ্ট করুন: পার্ট-পেমেন্টের পরে আপনার EMI কমবে না মেয়াদ কমবে—এটি পরিষ্কারভাবে ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে ঠিক করুন।
অফিশিয়াল চ্যানেলের মাধ্যমে পেমেন্ট করুন: সবসময় অফিসিয়াল পোর্টাল বা শাখার মাধ্যমে পার্ট-পেমেন্ট করুন। এতে আপনার লেনদেনের সঠিক রেকর্ড থাকবে এবং কোনো সমস্যা হবে না।

কেন পার্ট-পেমেন্ট বুদ্ধিমানের কাজ?
আজকের দিনে ঋণের বোঝা অনেকের কাছেই বড় চাপ। যদি আপনার হাতে বাড়তি অর্থ থাকে, তবে পার্ট-পেমেন্টের মাধ্যমে আপনি সুদের খরচ কমাতে পারেন, ঋণ দ্রুত শেষ করতে পারেন এবং আর্থিক স্বাধীনতা অর্জন করতে পারেন। এর পাশাপাশি, সঠিকভাবে করলে এটি আপনার ক্রেডিট স্কোরও বাড়াতে সাহায্য করবে, যা ভবিষ্যতে নতুন ঋণ বা ক্রেডিট কার্ড নেওয়ার সময় আপনার পক্ষে সুবিধাজনক হবে।

তবে এক্ষেত্রে হুট করে কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে, সঠিক পরিকল্পনা করে এবং ব্যাংকের সাথে আলোচনা করে এগিয়ে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। নিজের আর্থিক অবস্থার পর্যালোচনা করুন, প্রয়োজন হলে কোনো আর্থিক উপদেষ্টার পরামর্শ নিন এবং তারপরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিন।
শেষ কথা, পার্ট-পেমেন্টের মাধ্যমে ঋণ পরিশোধের যাত্রা সহজ এবং সাশ্রয়ী করা সম্ভব। এটি একদিকে আপনার মানসিক চাপ কমাবে, অন্যদিকে ভবিষ্যতের আর্থিক সক্ষমতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাও বাড়াবে। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি আপনার অর্থনৈতিক যাত্রার এক শক্তিশালী হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।