কেন্দ্রীয় শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শোভা করন্দলাজে সম্প্রতি জানিয়েছেন, উচ্চ পেনশন দাবির আবেদনগুলির নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি করেছে কর্মচারী ভবিষ্যন তহবিল সংস্থা (EPFO)। ১৬ জুলাই ২০২৫ পর্যন্ত, প্রাপ্ত মোট ১৫.২৪ লক্ষ আবেদনপত্রের মধ্যে ৯৮.৫ শতাংশই প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়েছে।
এই আবেদনের মধ্যে থেকে এখন পর্যন্ত ৪,০০,৫৭৩ জন আবেদনকারীকে তাদের যোগ্যতার ভিত্তিতে “ডিমান্ড লেটার” বা চাহিদাপত্র প্রদান করা হয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয় — এখনও পর্যন্ত ২১,৯৯৫টি আবেদন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উচ্চ প্রত্যাখ্যানের হার নিয়ে উদ্বেগ:
EPFO সূত্রে জানা গেছে, এই পেনশন পুনর্মূল্যায়নের প্রক্রিয়ায় ১১ লক্ষেরও বেশি আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এত বিপুল সংখ্যক আবেদন প্রত্যাখ্যানের নির্দিষ্ট কারণ এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এর ফলে বহু প্রবীণ কর্মচারী এবং পেনশনভোগীদের মধ্যে অসন্তোষ ও অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সুপ্রিম কোর্টের যুগান্তকারী রায়:
এই গোটা বিতর্কের সূচনা হয়েছিল ২০১৪ সালের একটি পরিপত্র ঘিরে। সেই সময় EPFO জানায় যে, প্রতি মাসে নির্ধারিত বেতনসীমার (তৎকালীন ₹৬,৫০০, পরে ₹১৫,০০০) ঊর্ধ্বে আয়কারী কর্মচারীরা কেবল নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করলে তবেই তাদের প্রকৃত বেতনের উপর ভিত্তি করে পেনশন ফান্ডে অবদান রাখতে পারবেন। এই সীমাবদ্ধতা বহু কর্মচারীর মধ্যে অসন্তোষের জন্ম দেয়, কারণ তারা তাদের সম্পূর্ণ বেতনের উপর ভিত্তি করে পেনশন চেয়েছিলেন।
পরবর্তীতে বিষয়টি একাধিক উচ্চ আদালতে চ্যালেঞ্জ হয় এবং বিভিন্ন আদালতে ভিন্ন ভিন্ন রায়ও আসে। এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির অবসান ঘটে ২০২২ সালের ৪ নভেম্বর, যখন সুপ্রিম কোর্ট একটি ঐতিহাসিক রায় দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়—
যেসব কর্মচারী ১ সেপ্টেম্বর ২০১৪-র পূর্বে ইপিএফ-এর সদস্য ছিলেন এবং এরপরেও চাকরিতে বহাল ছিলেন বা অবসর নিয়েছেন, তারা তাদের প্রকৃত বেতনের উপর ভিত্তি করে উচ্চ পেনশনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
এই রায় বর্তমান কর্মরত কর্মচারী এবং পেনশনপ্রাপ্ত অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী — উভয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
বেতনসীমার উপর কোনও বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে না, যদি কর্মচারী প্রকৃত বেতনের ভিত্তিতে ইপিএস-এ অবদান রাখতে চান।
আবেদন প্রক্রিয়া ও চ্যালেঞ্জ:
সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের পরে EPFO আবেদনপত্র গ্রহণ করা শুরু করে। বহু কর্মচারী, বিশেষ করে পিএসইউ এবং বেসরকারি সংস্থার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীরা এই সুযোগ গ্রহণ করেন। অনেকেই দীর্ঘ সময় ধরে তাঁদের প্রকৃত বেতনের ভিত্তিতে পেনশন দাবি করে আসছিলেন। ফলে এই রায় তাঁদের পক্ষে এক বড় বিজয় হিসেবে ধরা পড়ে।
তবে আবেদন গ্রহণ ও প্রক্রিয়াকরণের ক্ষেত্রে একাধিক জটিলতা তৈরি হয়:
পূর্ববর্তী অবদানের প্রমাণপত্র জমা দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়নি।
কর্মস্থলের HR বা প্রশাসনিক বিভাগের অনাগ্রহ বা তথ্য ঘাটতি।
EPFO-এর তরফে স্পষ্ট গাইডলাইন বা টাইমলাইন প্রকাশে ঘাটতি।
পরবর্তী পদক্ষেপ:
বর্তমানে EPFO ৪ লক্ষেরও বেশি আবেদনকে অনুমোদন করেছে এবং তাঁদের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অতিরিক্ত অর্থ সংগ্রহের জন্য চাহিদাপত্র পাঠিয়েছে। অনুমোদিত আবেদনকারীদের পেনশন পুনর্নির্ধারণের প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
যদিও লক্ষাধিক আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায়, সরকার ও EPFO-এর কাছে দাবি উঠছে — প্রত্যাখ্যানের কারণ স্বচ্ছভাবে জানানো হোক এবং আবেদনকারীদের পুনরায় আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হোক।
কর্মচারী ও পেনশনভোগীদের প্রতিক্রিয়া:
সারাদেশের বহু অবসরপ্রাপ্ত কর্মী এবং বেসরকারি খাতের কর্মীরা এই রায় ও EPFO-এর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, অবসর জীবনে আরও আর্থিক নিরাপত্তা পাওয়া যাবে যদি প্রকৃত বেতনের উপর ভিত্তি করে পেনশন দেওয়া হয়।
তবে পাশাপাশি উদ্বেগও রয়েছে। হঠাৎ এককালীন অতিরিক্ত অর্থ জমা দেওয়ার চাপ অনেক প্রবীণ নাগরিকের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়। এছাড়া, অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ হলেও পেনশন কার্যকর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষার সময়টিও অনিশ্চিত।
EPFO-এর উচ্চ পেনশন সংক্রান্ত এই অগ্রগতি নিঃসন্দেহে লক্ষ লক্ষ কর্মচারীর দীর্ঘদিনের দাবির বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করেছে। তবে এখনো বহু আবেদন প্রক্রিয়াধীন, এবং উচ্চ প্রত্যাখ্যানের হারের পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করা বাকি। সরকারের উচিত দ্রুত একটি স্বচ্ছ এবং মানবিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাকি আবেদনকারীদের হতাশা দূর করা এবং আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।