পুরনো না নতুন কর কাঠামো? ITR ফাইলের আগে জেনে নিন প্রধান পার্থক্য

ভারতের কোটি কোটি করদাতার জন্য স্বস্তির খবর—২০২৫ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন (ITR) জমার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে করদাতাদের সামনে…

What is ITR-U

ভারতের কোটি কোটি করদাতার জন্য স্বস্তির খবর—২০২৫ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন (ITR) জমার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই সময়সীমা বৃদ্ধির ফলে করদাতাদের সামনে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠে এসেছে—পুরনো কর ব্যবস্থা রাখবেন, না নতুন কর কাঠামো বেছে নেবেন?

এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে অবশ্যই আপনার আয়, খরচ, বিনিয়োগ এবং কর সঞ্চয়ের পরিকল্পনাগুলি ভালোভাবে বিশ্লেষণ করা উচিত। বিশেষ করে যাঁরা স্যালারিড (salaried employee) বা পেনশনভোগী, তাঁদের পক্ষে এই পরিবর্তনটি প্রতি বছর ITR ফাইল করার সময় করা যায় ITR-1 বা ITR-2 ফর্মে পছন্দ অনুযায়ী অপশন নির্বাচন করেই।

   

ব্যবসায়িক বা পেশাগত আয় থাকলে বাড়তি সতর্কতা জরুরি:
যাঁদের ব্যবসা বা পেশাগত আয় আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরিবর্তনের নিয়ম কিছুটা কড়া। তাঁরা তাঁদের জীবনে একবারই পুরনো কর ব্যবস্থায় ফিরে যেতে পারেন। আর তার জন্য নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ফর্ম 10-IEA জমা দিতে হয়। এটি জমা না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন কর কাঠামো কার্যকর হয়ে যায়।

পুরনো কর কাঠামোর সুবিধা:
পুরনো কর কাঠামোতে করদাতারা বিভিন্ন ধরণের ছাড় ও ছাড়পত্র পেয়ে থাকেন, যেমন—
হাউস রেন্ট অ্যালাউন্স (HRA), লিভ ট্রাভেল অ্যালাউন্স (LTA), ধারা ৮০সি থেকে ৮০ইউ (80C–80U) পর্যন্ত বিভিন্ন কর ছাড়, হোম লোনের সুদ বাবদ ধারা ২৪(বি) অনুযায়ী ছাড়।
এইসব সুবিধা নতুন কর কাঠামোতে নেই, তাই যাঁদের উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ট্যাক্স সেভিং ইনভেস্টমেন্ট আছে, তাঁদের জন্য পুরনো কাঠামো লাভজনক হতে পারে।

নতুন কর কাঠামোর সুবিধা ও কর স্ল্যাব:
নতুন কর কাঠামো মূলত সোজা, সরল এবং কম জটিল। ২০২৫ বাজেটে এই কাঠামোতে ১২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয় হলে সম্পূর্ণ কর ছাড় (rebate) দেওয়া হয়েছে। এর মানে, যদি আপনার করযোগ্য আয় ১২ লক্ষের কম হয়, তাহলে আপনি একটাকাও কর দেবেন না।

নতুন কর কাঠামোর স্ল্যাব এইরকম:
প্রথম ৪ লক্ষ টাকায় কোনো কর নেই
৪ লক্ষ থেকে ৮ লক্ষ: ৫% কর
৮ লক্ষ থেকে ১২ লক্ষ: ১০% কর
১২ লক্ষ থেকে ১৬ লক্ষ: ১৫% কর
এরপর ধাপে ধাপে বাড়তে থাকে

এখানে শুধুমাত্র ৮০CCD(2) এবং ৮০CCH(2) ধারা অনুসারে সীমিত সুবিধা পাওয়া যায়। অর্থাৎ জনপ্রিয় ৮০সি, ৮০ডি ইত্যাদির মতো ছাড় এই কাঠামোয় নেই।

Advertisements

কোনটি বেছে নেবেন?
এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনার আয়ের কাঠামো, বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন কর ছাড়ের যোগফল বিচার করতে হবে।
যদি আপনার আয় ১২ লক্ষ টাকার কম হয় এবং আপনি খুব কম ছাড় ক্লেম করেন, তাহলে নতুন কর কাঠামো উপযুক্ত।

যদি আপনি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ছাড় পান, বিশেষ করে:
ধারা ৮০সি অনুসারে ১.৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত LIC, PPF, EPF, tuition fees ইত্যাদি বিনিয়োগে, ধারা ৮০ডি অনুসারে স্বাস্থ্য বিমা, বাড়িভাড়া বাবদ HRA, গৃহঋণের সুদ বাবদ ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ধারা ২৪(বি)-এর ছাড়, তাহলে আপনার জন্য পুরনো কর কাঠামো বেশি লাভজনক হতে পারে।

নতুন কাঠামোর সীমাবদ্ধতা:
নতুন কর কাঠামো অনুসরণ করলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সুযোগ হারাতে হয়:
বাড়ির মালিকানা থেকে ক্ষতি হলে সেটি আগামি বছরে বহন করা যায় না, ব্যবসা বা মূলধনী লাভের (capital gains) ক্ষতি পরবর্তী বছরে বহন করা যাবে না।
এই কারণগুলি আপনার ভবিষ্যতের কর পরিকাঠামো ও লায়াবিলিটিকে প্রভাবিত করতে পারে।

কর বিশেষজ্ঞদের সাধারণ পরামর্শ:
কর বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরনো কর কাঠামো শুধুমাত্র তখনই কার্যকরী, যদি করদাতা প্রতি বছর গৃহঋণের সুদ বাবদ ২ লক্ষ টাকা ছাড় পান অথবা উচ্চ HRA পান। বেশিরভাগ করদাতার পক্ষে অন্যান্য ছাড়গুলি নতুন কর কাঠামোর সুবিধার সামনে খুব একটা বেশি সাশ্রয় এনে দেয় না।

১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় থাকলেও, কোন কর কাঠামো বেছে নেবেন তা দ্রুত বিচার করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। হঠাৎ করে ITR জমা দেওয়ার সময় পছন্দ বদল করলে ভুল হবার সম্ভাবনা থাকে। তাই আগে থেকেই হিসাব করে, নিজের আয়ের ধরন, ছাড়পত্র এবং ভবিষ্যতের আর্থিক পরিকল্পনা দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।