দেশের অর্থনীতিতে কর্মসংস্থানের ধরনে এক মৌলিক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। প্রচলিত চাকরির ধরন থেকে সরে গিয়ে ক্রমেই বাড়ছে গিগ ও ফ্রিল্যান্স কর্মীর সংখ্যা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, অর্থাৎ জেন জেডরা এখন কোনও নির্দিষ্ট কোম্পানির অধীনে কাজ না করে প্রজেক্টভিত্তিক কাজের দিকে ঝুঁকছে। এই ধরণের কাজ কর্মীদের দেয় স্বাধীনতা, সময়ের নিয়ন্ত্রণ এবং একটি ভালো কাজ-জীবনের ভারসাম্য রক্ষার সুযোগ।
গিগ অর্থনীতির দ্রুত বৃদ্ধি:
নীতিআয়োগের একটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে গিগ কর্মীর সংখ্যা ২০২০ সালের ৭.৭ মিলিয়ন থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ২৩.৫ মিলিয়ন। এই প্রবৃদ্ধি একদিকে যেমন ভারতের অর্থনীতির শক্তি ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তের ইঙ্গিত দিচ্ছে, তেমনই এটি এক নতুন চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে — সামাজিক ও অবসরকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঘাটতি।
সামাজিক নিরাপত্তার অভাব: NPS e-shramik Gig Workers
সরকারি ও বেসরকারি খাতে কর্মরত কর্মীরা এনপিএস (ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম) বা প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ)-এর আওতায় থাকেন। কিন্তু গিগ কর্মী ও ফ্রিল্যান্সাররা সচরাচর এই সুবিধাগুলি থেকে বঞ্চিত হন, হয় অজ্ঞতার কারণে নয়তো কোনও সংগঠিত কাঠামোর অভাবে। এই সমস্যার সমাধানেই পেনশন ফান্ড রেগুলেটরি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (PFRDA) চালু করেছে ‘NPS e-shramik (Platform Service Partner) Model’।
কী এই NPS ই-শ্রমিক মডেল?
পিএফআরডিএ-র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাজেশ খান্দাগালে জানিয়েছেন, এই মডেলের লক্ষ্য হলো জোম্যাটো, সুইগি, ব্লিঙ্কিট, ওলা, উবার ও আরবান কোম্পানির মতো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে কাজ করা গিগ কর্মীদের এনপিএস-এর আওতায় আনা। এই প্রতিষ্ঠানগুলিকে বলা হবে প্ল্যাটফর্ম অ্যাগ্রিগেটর, এবং তাদের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের বলা হবে প্ল্যাটফর্ম সার্ভিস পার্টনার।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া দুটি ধাপে:
প্রথম ধাপ – দ্রুত PRAN তৈরি:
কর্মীর মৌলিক তথ্য যেমন নাম, ঠিকানা, প্যান, মোবাইল নম্বর ও ব্যাংক অ্যাকাউন্ট যাচাই করা হবে। কেওয়াইসি (KYC) প্রক্রিয়া আধার-ভিত্তিক বা অন্য অনুমোদিত মাধ্যমে সম্পন্ন করা যাবে। তথ্য যাচাইয়ের পর একটি Permanent Retirement Account Number (PRAN) তৈরি হবে।
দ্বিতীয় ধাপ – পূর্ণাঙ্গ তথ্য সংযোজন:
এরপর কর্মীকে নিজের ইমেল আইডি, পরিবারের সদস্যদের নাম এবং মনোনীত ব্যক্তির তথ্য যোগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়া ৬০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে।
অবদানের কাঠামো:
অবদান রাখার তিনটি পদ্ধতি রয়েছে –
1. যৌথভাবে: প্ল্যাটফর্ম ও কর্মী উভয়েই অবদান রাখবে।
2. কেবল কর্মী: শুধুমাত্র সার্ভিস পার্টনার অবদান রাখবে।
3. কেবল প্ল্যাটফর্ম: শুধুমাত্র কোম্পানি অবদান রাখবে।
প্ল্যাটফর্ম ও কর্মী যৌথভাবে ন্যূনতম মাসিক অবদান হিসেবে ৯৯ টাকা নির্ধারণ করতে পারে, যদিও এনপিএস-এর সাধারণ ন্যূনতম অবদান ৫০০ টাকা। কোনও রেজিস্ট্রেশন বা অবদান ফি দিতে হবে না এবং CRA চার্জ ১০০ টাকা থেকে কমিয়ে ১৫ টাকা বার্ষিক করা হয়েছে।
ভবিষ্যতের আর্থিক নিরাপত্তার দিকে এক পদক্ষেপ:
রাজেশ খান্দাগালের মতে, গিগ কর্মীরা নিয়মিত অবদান রাখলে তাঁরা যৌগিক সুদের (power of compounding) সুবিধা পেতে পারেন, যা ভবিষ্যতে একটি স্থিতিশীল ও নিরাপদ অবসর জীবনের ভিত্তি গড়ে তুলবে।
শেষ কথা:
পিএফআরডিএ-র এই নতুন উদ্যোগ ভারতের গিগ অর্থনীতির কর্মীদের জন্য এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ। এটি কেবল আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করবে না, বরং কর্মক্ষেত্রে নতুন প্রজন্মের আত্মনির্ভরতার যাত্রাকে আরও শক্তিশালী করবে।
