ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবহারকারীদের জন্য এক বড়সড় সিদ্ধান্তে, ন্যাশনাল পেমেন্টস কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) ঘোষণা করেছে যে আগামী ৩০ জুন ২০২৫ থেকে ইউনিফায়েড পেমেন্টস ইন্টারফেস (UPI)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন কার্যকর হতে চলেছে। এখন থেকে Google Pay, PhonePe, Paytm-এর মতো সব UPI-ভিত্তিক অ্যাপ-এ টাকা পাঠানোর সময় প্রাপক হিসেবে শুধুমাত্র ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সংযুক্ত প্রকৃত নামটিই দেখা যাবে। আর দেখানো হবে না ব্যক্তিগতভাবে সংরক্ষিত ডাকনাম বা ফোনে সেভ করে রাখা পরিচিতি।
বর্তমানে, যখন কেউ কোনও মোবাইল নম্বর বা QR কোড স্ক্যান করে বা UPI ID দিয়ে টাকা পাঠাতে যান, তখন প্রাপকের নাম হিসেবে অনেক সময় তার কনট্যাক্ট লিস্টে সেভ করে রাখা নামটাই স্ক্রিনে দেখা যায়। যেমন ধরুন – “মা”, “রাজু দোকান”, “ক্যাব ড্রাইভার সিংহ” ইত্যাদি। যদিও এতে অনেকের জন্য চিনতে সুবিধে হয়, কিন্তু সাইবার প্রতারণার জন্য এটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
এই নতুন নিয়ম অনুযায়ী, যেভাবেই টাকা পাঠানো হোক না কেন – মোবাইল নম্বর, UPI হ্যান্ডেল বা QR কোড ব্যবহার করে – অর্থ পাঠানোর সময় স্ক্রিনে যে নাম ভেসে উঠবে, তা প্রাপকের ব্যাংকে সংযুক্ত অফিসিয়াল নামই হবে। এই পরিবর্তন সব ধরণের ট্রান্সঅ্যাকশনের (ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি এবং ব্যক্তি-থেকে-ব্যবসা) ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে।
NPCI-এর এই পরিবর্তনের উদ্দেশ্য কী?
ভারতে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ মানুষ UPI ব্যবহার করেন। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, প্রতি মাসে প্রায় ১৩০০ কোটিরও বেশি লেনদেন হয় UPI-র মাধ্যমে। এই প্রবল বৃদ্ধির সাথেই বেড়েছে সাইবার জালিয়াতির ঘটনাও। প্রতারকরা অনেক সময় পরিচিত নাম ব্যবহার করে মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করেন – যেমন “বাবা”, “অফিস বাবু”, “ফোন রিপেয়ার” ইত্যাদি নাম দিয়ে QR কোড পাঠানো বা টাকা চাওয়া। NPCI-এর মতে, অফিসিয়াল নাম দেখালে এই ধরনের বিভ্রান্তি ও প্রতারণা অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এই পরিবর্তনে কী কী সুবিধা হবে?
- 1. প্রতারনা রোধে সহায়ক: অপরাধীরা অনেক সময় পরিচিত নাম ব্যবহার করে মানুষকে প্রতারিত করে। অফিসিয়াল নাম দেখালে তা কঠিন হয়ে পড়বে।
- 2. নিরাপত্তা বাড়বে: টাকা পাঠানোর আগে যে নাম দেখা যাবে, তা অফিসিয়াল হওয়ায় ব্যবহারকারীরা নিশ্চিত হতে পারবেন প্রাপকের পরিচয় সম্পর্কে।
- 3. ভুল লেনদেন কমবে: একাধিক পরিচিতের মধ্যে মিল থাকা নাম নিয়ে বিভ্রান্তির ফলে ভুলবশত টাকা পাঠানোর ঝুঁকি কমবে।
ব্যবহারকারীরা এখন কী করবেন?
যদিও পেমেন্টের পদ্ধতিতে কোনও পরিবর্তন হচ্ছে না – আগের মতোই মোবাইল নম্বর, UPI ID বা QR কোড ব্যবহার করে টাকা পাঠানো যাবে – তবে প্রাপকের নাম যাচাই করার বিষয়টি এখন আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
সতর্কতা হিসেবে যা যা মেনে চলা উচিত:
- টাকা পাঠানোর আগে স্ক্রিনে দেখা নামটি ভালোভাবে মিলিয়ে দেখুন। পরিচিত না হলে বা সন্দেহজনক মনে হলে লেনদেন স্থগিত রাখুন।
- অপরিচিত বা সন্দেহজনক QR কোড স্ক্যান করবেন না – প্রতারকেরা প্রায়ই এই কৌশল ব্যবহার করেন।
- কোনও অসাধারণ বা অস্বাভাবিক কার্যকলাপ চোখে পড়লে তৎক্ষণাৎ আপনার ব্যাঙ্ক বা পেমেন্ট অ্যাপ-এর কাস্টমার কেয়ারে রিপোর্ট করুন।
উদাহরণস্বরূপ পরিবর্তনের চিত্র:
আগে: আপনি টাকা পাঠাচ্ছেন “রিনার মোবাইল নম্বর”-এ, এবং স্ক্রিনে নাম আসছে “রিনা অফিস” – যেটা আপনি নিজের ফোনে সেভ করেছিলেন।
এখন: আপনি টাকা পাঠাচ্ছেন রিনার মোবাইল নম্বর-এ, স্ক্রিনে আসবে “REENA ROY” – অর্থাৎ তাঁর ব্যাংকে রেজিস্টার্ড নাম।
এই সিদ্ধান্তের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব কী হতে পারে?
এই পরিবর্তন একদিকে যেমন সাধারণ ব্যবহারকারীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে, তেমনি অপরদিকে ডিজিটাল অর্থনীতির নিরাপত্তাকেও আরও এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে। ক্যাশলেস ইকোনমির দিকে ভারতের যে অগ্রগতি, তার গতি বজায় রাখতে হলে এই ধরনের স্বচ্ছতা এবং প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কোনও বিকল্প নেই।
NPCI-এর এই উদ্যোগ ডিজিটাল ট্রাস্ট বৃদ্ধিতে একটি বড় পদক্ষেপ। সাধারণ মানুষকে এখন আরও দায়িত্বশীল হতে হবে, বিশেষত নাম যাচাই করার ক্ষেত্রে। ভবিষ্যতে, এই রকম আরও নিয়মের সম্ভাবনা থাকলেও, এটি নিঃসন্দেহে প্রতারণার বিরুদ্ধে এক কার্যকরী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০২৫ সালের ৩০ জুন থেকে UPI লেনদেনের সময় আর আপনাকে দেখা যাবে না পরিচিত ডাকনাম – স্ক্রিনে থাকবে শুধু ব্যাংকে থাকা প্রকৃত নাম। সাবধানতার সাথে নাম যাচাই করে তবেই পেমেন্ট করুন – কারণ নিরাপদ লেনদেনই ভবিষ্যতের চাবিকাঠি।