বিশ্বের বৃহত্তম কার্বন-মুক্ত “গ্রীন রেলওয়ে” হওয়ার পথে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল

ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railways) বিশ্বের বৃহত্তম “গ্রীন রেলওয়ে” হওয়ার পথে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য ১০০% বিদ্যুতায়ন এবং নেট-জিরো কার্বন (Net-Zero Carbon Railways) নির্গমন অর্জন করা। এই…

Northeast Frontier Railway Electrifies 64% of Network, Paving the Way for Indian Railways' Net-Zero Carbon Goal

ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railways) বিশ্বের বৃহত্তম “গ্রীন রেলওয়ে” হওয়ার পথে রয়েছে। তাদের লক্ষ্য ১০০% বিদ্যুতায়ন এবং নেট-জিরো কার্বন (Net-Zero Carbon Railways) নির্গমন অর্জন করা। এই লক্ষ্য অর্জনের অংশ হিসেবে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে (এনএফআর) তার এলাকার অবশিষ্ট অ-বৈদ্যুতিক বিস্তৃত গেজ রুটগুলোর বিদ্যুতায়ন ত্বরান্বিত করছে।

এনএফআর এই উদ্যোগে নেতৃত্ব দিচ্ছে, ইতিমধ্যে ২,০৭০.৫২ রুট কিলোমিটার (আরকেএম) বিদ্যুতায়িত হয়েছে, যা তার মোট ৪,২৬০.৫২ আরকেএম নেটওয়ার্কের প্রায় ৬৪%।

   

উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর মধ্যে আসাম সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে, যেখানে ১,৩৫৩.২৩ আরকেএম বিদ্যুতায়িত হয়েছে। এর পরেই ত্রিপুরা ১৫১.৫৯ আরকেএম বিদ্যুতায়িত হয়েছে, এবং ছোট ছোট অংশে মণিপুর, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডে বিদ্যুতায়ন হয়েছে।

বিদ্যুতায়নের অগ্রগতি
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে (এনএফআর) এর প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা কাপিনজল কিশোর শর্মা এক বিবৃতিতে জানান যে, এনএফআর ইতিমধ্যে ২,০৭০.৫২ রুট কিলোমিটার (আরকেএম) বিদ্যুতায়িত করেছে, যা তার মোট নেটওয়ার্কের ৬৪%।

এনএফআর এর আওতাধীন আটটি উত্তর-পূর্ব রাজ্যের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১,৫২৪.৭১ আরকেএম বিদ্যুতায়িত হয়েছে। এর মধ্যে আসাম ১,৩৫৩.২৩ আরকেএম নিয়ে প্রথম স্থানে রয়েছে, এরপর ত্রিপুরা ১৫১.৫৯ আরকেএম নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। মণিপুর, মেঘালয় এবং নাগাল্যান্ডের ছোট ছোট অংশেও বিদ্যুতায়নের কাজ চলছে।

রেল দক্ষতা বৃদ্ধি করবে
এনএফআর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, বিদ্যুতায়ন বিভিন্ন অংশে অব্যাহত রয়েছে, যা আইআরকন ইন্ডিয়া, রাইটস এবং এনএফআর কনস্ট্রাকশন দ্বারা সম্পন্ন হচ্ছে। এই উদ্যোগটি উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে ট্রেন পরিবহনকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে, যা পরিবেশবান্ধব, আরো দক্ষ এবং দ্রুত হবে।

বিদ্যুৎ শক্তিতে পরিবর্তন করা হলে নিঃসরণ ব্যাপকভাবে কমে যাবে এবং দেশটির ক্রুড অয়েল আমদানির ওপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে, যার মূল্য বিদেশী মুদ্রায়। ভারতীয় রেলওয়ে মধ্যে এই উন্নয়নগুলো পরিবেশগত সুবিধা নিয়ে আসার পাশাপাশি ট্রেনের ফ্রিকোয়েন্সি বৃদ্ধি করবে, সময়ানুবর্তিতা উন্নত করবে, এবং টান শক্তি পরিবর্তনের কারণে হওয়া বিলম্ব কমাবে। এটি রেল ট্রাফিক এবং ট্রেনের গতির প্রবাহ বাড়ানোর জন্য অপরিহার্য হবে।

বিদ্যুতায়নের ফলে আসা সুবিধা
বিদ্যুতায়নের ফলে যে সুবিধাগুলি আসবে সেগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
পরিবেশ সুরক্ষা: বিদ্যুতায়নের মাধ্যমে কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমবে, যা পরিবেশ সুরক্ষায় সহায়ক হবে।
দ্রুত ও দক্ষ ট্রেন চলাচল: বৈদ্যুতিক ট্রেনগুলো তেলচালিত ট্রেনের তুলনায় দ্রুত এবং অধিক দক্ষ হয়, যা যাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক।
অর্থনৈতিক সাশ্রয়: বিদ্যুৎ ব্যবহার করে দেশের অর্থনৈতিক সাশ্রয় হবে, বিশেষ করে ক্রুড অয়েল আমদানিতে।
বর্ধিত ট্রেন ফ্রিকোয়েন্সি: বিদ্যুতায়ন ফলে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হবে, ফলে যাত্রীদের জন্য আরও সুবিধা নিশ্চিত হবে।
সময়মতো চলাচল: ট্রেনের সময়সূচি উন্নত হবে, যা যাত্রীদের জন্য যাত্রাকে আরামদায়ক করবে।

সরকারের প্রতিশ্রুতি
ভারত সরকার ভারতীয় রেলকে বৈদ্যুতায়ন ও পরিবেশবান্ধব নীতির দিকে নিয়ে যেতে অঙ্গীকারবদ্ধ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সম্প্রতি রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের সাথে বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন এবং বলেছেন, “আমরা আমাদের রেলওয়ে সিস্টেমকে গ্রীন রেলওয়েতে পরিণত করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।”

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে আগামী দিনে আরও বৈদ্যুতিক রুট চালুর পরিকল্পনা করেছে। বিশেষ করে হিমালয় অঞ্চল এবং দুর্গম এলাকাগুলিতে বিদ্যুতায়নের জন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে।

উত্তর-পূর্বের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এভাবে, এনএফআর শুধুমাত্র ভারতীয় রেলওয়ের বিদ্যুতায়নের অগ্রগতিই নয়, বরং জাতীয় পরিবেশ সুরক্ষার লক্ষ্যেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ভারতীয় রেলওয়ে আগামী দিনে আরও আরও উন্নত ও পরিবেশবান্ধব ব্যবস্থায় যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। আশা করা হচ্ছে, এই উদ্যোগগুলি ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার ভবিষ্যৎকে আরও উজ্জ্বল করবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।