অগাস্ট ২০১৯ থেকে অগাস্ট ২০২৫—এই ছয় বছরে ভারতীয় শেয়ারবাজার সামান্য হলেও সোনাকে ছাড়িয়ে গেছে। গবেষণা সংস্থা CLSA-র সাম্প্রতিক Bits and Pieces প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এই সময়ে নিফটি সূচক ১২৪% রিটার্ন দিয়েছে, যেখানে সোনা বেড়েছে ১১৭%। তবে এই সময়ের সবচেয়ে আলোচিত সাফল্যের গল্প নিঃসন্দেহে মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট এনভিডিয়া, যার শেয়ারমূল্য ৪ ডলার থেকে এক লাফে ১৭৩ ডলারে পৌঁছেছে—বৃদ্ধি ৪,২২৫%!
সোনার নিরাপদ আশ্রয় কিন্তু ভারত এগিয়ে:
সোনা সবসময়ই অস্থির বাজারে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। কোভিড মহামারী, বৈশ্বিক মন্দা এবং বিশেষত ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর সোনার চাহিদা বেড়েছে হুহু করে। এর ফলে ১,৫৪৭ ডলার প্রতি আউন্স থেকে বেড়ে সোনা পৌঁছে গেছে ৩,৩৫৬ ডলারে—বৃদ্ধি ১১৭%।
তবুও ভারতীয় শেয়ারবাজার, বিশেষ করে নিফটি সূচক, একই সময়ে ১০,৯৮০ থেকে ২৪,৬৬২ পয়েন্টে উঠে ১২৪% রিটার্ন দিয়েছে, যা সোনার তুলনায় সামান্য বেশি।
রুপোর ঝলকও সমান:
শুধু সোনা নয়, রুপোও এই সময়ে ১২৪% বৃদ্ধি পেয়েছে—১৬.৫ ডলার প্রতি আউন্স থেকে ৩৭ ডলারে।
বৈশ্বিক বাজারে বড় উত্থান, কিন্তু সবার নয়:
CLSA তথ্য অনুযায়ী, MSCI ওয়ার্ল্ড ইনডেক্স (বৈশ্বিক শেয়ার সূচক) ৭৪% বেড়েছে—৫২৮ থেকে ৯১৭ পয়েন্টে। তবে সব বাজার সমান উজ্জ্বল ছিল না। চীনের এ-শেয়ার সূচক মাত্র ৬% বৃদ্ধি পেয়েছে, ৩,৮৪১ থেকে ৪,০৮৪ পয়েন্টে।
‘ম্যাগনিফিসেন্ট ৭’-এর দাপট:
বাজারে আসল আলোড়ন তুলেছে Magnificent 7—অ্যালফাবেট, অ্যামাজন, অ্যাপল, মেটা প্ল্যাটফর্মস, মাইক্রোসফট, এনভিডিয়া ও টেসলা। এই সূচক ৩,২৭৪ থেকে বেড়ে ২৮,৩৬৫ পয়েন্টে পৌঁছেছে—বৃদ্ধি ৭৬৬%।
তবে এর মধ্যেও এনভিডিয়া ছিল শীর্ষ তারকা—শেয়ারমূল্য ৪ ডলার থেকে ১৭৩ ডলারে, যা ৪,২২৫% বৃদ্ধির সমান। প্রযুক্তি খাতে এআই চাহিদার বিস্ফোরণ এই উত্থানের মূল কারণ।
ক্রিপ্টোকারেন্সির বিস্ফোরণ:
ক্রিপ্টো মার্কেটও পিছিয়ে ছিল না। বিটকয়েন ১১,৪১০ ডলার থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,১৪,৬৪১ ডলারে—বৃদ্ধি ১,০০১%। মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রকাশ্য সমর্থনও এই বাজারে আস্থা বাড়িয়েছে।
বন্ড মার্কেটে ধাক্কা:
যেখানে শেয়ার, সোনা, রুপো, ক্রিপ্টো উড়ছে, সেখানে গ্লোবাল বন্ড মার্কেট পিছিয়ে। ব্লুমবার্গ বার্কলেস গ্লোবাল অ্যাগ্রিগেট বন্ড ইনডেক্স ৫০৪ থেকে কমে ৪৯৩—অর্থাৎ ২% পতন।
বৈশ্বিক অর্থনীতির পরিসংখ্যান:
ম্যাক্রো ইকোনমি দিক থেকে, অগাস্ট ২০১৯ থেকে অগাস্ট ২০২৫-এর মধ্যে:
গ্লোবাল জিডিপি ৮৮ ট্রিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ১১১ ট্রিলিয়ন ডলার—বৃদ্ধি ২৬%।
গ্লোবাল ঋণ ২৫৫ ট্রিলিয়ন থেকে ৩২৪ ট্রিলিয়ন—বৃদ্ধি ২৭%।
মার্কিন সরকারি ঋণ ২২ ট্রিলিয়ন থেকে ৩৭ ট্রিলিয়ন—বৃদ্ধি ৬৮%।
গ্লোবাল লিকুইডিটি ৭৮ ট্রিলিয়ন থেকে ১১৩ ট্রিলিয়ন—বৃদ্ধি ৪৫%।
বিনিয়োগকারীদের জন্য ইঙ্গিত:
এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করছে, গত ছয় বছরে প্রযুক্তি খাত এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি বাজারে সবচেয়ে বড় লাভ হয়েছে। ভারতীয় শেয়ারবাজারও বিশ্বে উজ্জ্বল উদাহরণ, বিশেষত সোনা ও চীনা বাজারের তুলনায়। তবে বন্ড মার্কেট ও কিছু এশিয়ান বাজার পিছিয়ে পড়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবিষ্যতে বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারণে এই ধরণের তুলনামূলক পরিসংখ্যান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, কারণ এতে বোঝা যায় কোন সম্পদ শ্রেণি দীর্ঘমেয়াদে ভাল ফল দিতে পারে।