নতুন এমএসএমই ঋণ স্কিম: উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ ক্রেডিটের সুযোগ

MSME Cluster

ভারতের অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে পরিচিত মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজেস (MSME Loan Schemes) খাত এখন আরও শক্তিশালী হতে চলেছে। ২০২৫ সালে সরকারের নতুন ঋণ স্কিমগুলি উদ্যোক্তাদের জন্য সহজ এবং দ্রুত ক্রেডিটের দরজা খুলে দিয়েছে। এই স্কিমগুলি কোল্যাটেরাল-ফ্রি লোন, কম সুদের হার এবং দ্রুত অনুমোদনের সুবিধা প্রদান করে, যা ছোট ব্যবসায়ীদের ব্যবসা সম্প্রসারণ, প্রযুক্তি আপগ্রেড এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করবে। এমএসএমই খাত দেশের জিডিপির প্রায় ৩০ শতাংশ অবদান রাখে এবং ১১ কোটিরও বেশি কর্মসংস্থান প্রদান করে। কিন্তু ঐতিহ্যগতভাবে ক্রেডিটের অভাব এই খাতের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল। এবার ২০২৫-এর বাজেটে এই সমস্যার সমাধানে বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেমন ক্রেডিট গ্যারান্টি কভার দ্বিগুণ করে ১০ কোটি টাকা করা এবং নতুন এমএসএমই-র জন্য ৫ লক্ষ টাকার ক্রেডিট কার্ড চালু করা।

Advertisements

Also Read | ১ নভেম্বর থেকে চালু হচ্ছে জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের নতুন নিয়ম, জানুন নতুন প্রক্রিয়া

   

প্রধান স্কিমগুলির মধ্যে প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় হলো প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা (পিএমএমওয়াই)। এই স্কিমটি ছোট ব্যবসায়ী, কারিগর এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য ডিজাইন করা। মুদ্রা লোনের অধীনে তিনটি ক্যাটাগরি রয়েছে: শিশু (৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত), কিশোর (৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত) এবং তারুণ (১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত)। ২০২৫-এ এই স্কিমে কোনো কোল্যাটেরালের প্রয়োজন নেই এবং সুদের হার ৮ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে। উদাহরণস্বরূপ, একজন রাস্তার দোকানদার ফেস্টিভালের আগে ২ লক্ষ টাকা লোন নিয়ে স্টক বাড়াতে পারেন এবং মাত্র তিন মাসে ফেরত দিতে পারেন। এই স্কিমটি গ্রামীণ এলাকার উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে উপকারী, যারা ব্যাঙ্কের ঐতিহ্যগত লোনের জটিলতায় জড়িয়ে পড়েন। সরকারের লক্ষ্য ৫ লক্ষ নতুন নারী এবং এসসি/এসটি উদ্যোক্তাদের এই স্কিমের আওতায় নেওয়া।

Also Read | অবসরের দুশ্চিন্তা শেষ! এখন থেকে এনপিএস হবে স্থায়ী পেনশন স্কিম, জানুন নতুন নিয়ম

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ স্কিম হলো ক্রেডিট গ্যারান্টি ফান্ড ট্রাস্ট ফর মাইক্রো অ্যান্ড স্মল এন্টারপ্রাইজেস (সিজিটিএমএসই)। এটি মাইক্রো এবং স্মল এন্টারপ্রাইজদের জন্য কোল্যাটেরাল-ফ্রি ক্রেডিট প্রদান করে। ২০২৫-এ এই স্কিমের গ্যারান্টি কভার ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে, যা ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসি-দের ঝুঁকি কমিয়ে লোন দেওয়া সহজ করে। এর ফলে প্রথমবারের উদ্যোক্তারাও সহজে লোন পেতে পারেন। লোনের পরিমাণ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে এবং এটি ব্যবসা সম্প্রসারণ, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল এবং প্রযুক্তি আপগ্রেডের জন্য ব্যবহার করা যায়। এই স্কিমটি এমএসএমই খাতের ইনোভেশনকে উৎসাহিত করে এবং ক্রেডিট গ্যাপ পূরণ করে। গ্রামীণ কারিগর বা নারী উদ্যোক্তারা এর থেকে সর্বাধিক লাভবান হবেন, কারণ এতে সম্পত্তি বন্ধক দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

Also Read | Kia Carens-এ এলো CNG কিট অপশন, ডিলারের কাছ থেকেই মিলবে

Advertisements

স্ট্যান্ড-আপ ইন্ডিয়া স্কিমটি এসসি/এসটি এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি। এর অধীনে ১০ লক্ষ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়, যা ম্যানুফ্যাকচারিং, সার্ভিস বা ট্রেডিং সেক্টরে গ্রিনফিল্ড প্রোজেক্টের জন্য। ২০২৫-এ এই স্কিমে সব ব্যাঙ্ক শাখায় অন্তত একজন এসসি/এসটি বা নারী উদ্যোক্তাকে লোন দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক বৃদ্ধি নিশ্চিত করে। সুদের হার ৮-১০ শতাংশ এবং কোনো কোল্যাটেরাল লাগে না। এটি দেশের অর্থনৈতিক সমতাকে প্রোত্সাহিত করে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সাহায্য করে। উদাহরণস্বরূপ, একজন নারী উদ্যোক্তা এই লোন নিয়ে একটি ছোট ফুড প্রসেসিং ইউনিট শুরু করতে পারেন এবং দ্রুত লাভের পথে এগিয়ে যেতে পারেন।

প্রাইম মিনিস্টার এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি) নতুন এন্টারপ্রাইজ স্থাপনের জন্য ক্রেডিট-লিঙ্কড সাবসিডি প্রদান করে। এর অধীনে প্রোজেক্ট খরচের ১৫-৩৫ শতাংশ সাবসিডি পাওয়া যায়, যা লোকেশন এবং বেনিফিসিয়ারির ক্যাটাগরির উপর নির্ভর করে। নন-ফার্ম সেক্টরে এটি বিশেষভাবে কার্যকর এবং ২০২৫-এ এর ফোকাস রুরাল এবং আন্ডারডেভেলপড এলাকায়। এই স্কিমটি বেকার যুবকদের উদ্যোক্তায় পরিণত করতে সাহায্য করে এবং অর্থনীতিতে নতুন চাকরির সুযোগ তৈরি করে।

এছাড়া, সিডিবিআই-র স্মাইল (সিডিবিআই মেক ইন ইন্ডিয়া সফট লোন ফান্ড) স্কিম নতুন এমএসএমই-দের জন্য সফট লোন প্রদান করে। এর অধীনে ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লোন পাওয়া যায়, যা ম্যানুফ্যাকচারিং এবং সার্ভিস সেক্টরে সম্প্রসারণের জন্য। সুদের হার কম এবং ফ্লেক্সিবল টার্মস রয়েছে। এছাড়া, ক্রেডিট লিঙ্কড ক্যাপিটাল সাবসিডি স্কিম (সিএলসিএসএস) প্রযুক্তি আপগ্রেডের জন্য ১৫ শতাংশ সাবসিডি দেয়, যা ১ কোটি টাকা পর্যন্ত লোনের জন্য প্রযোজ্য। উদ্যোগিনী স্কিম নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সাবসিডাইজড লোন প্রদান করে, বিশেষ করে রুরাল এলাকায়।

এই স্কিমগুলির জন্য যোগ্যতা সাধারণত এমএসএমই রেজিস্ট্রেশন (উদ্যম রেজিস্ট্রেশন), ন্যূনতম ৬ মাসের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতা, ৬৫০-এর উপর ক্রেডিট স্কোর এবং আর্থিক ডকুমেন্টসের উপর নির্ভর করে। আবেদন অনলাইনে বা অফলাইনে করা যায়, যেমন বাজাজ ফিনসার্ভ বা ফ্লেক্সিলোনসের মতো প্ল্যাটফর্মে। ৫৯ মিনিটের স্টার্টআপ লোন স্কিমে মাত্র ১ ঘণ্টায় অনুমোদন পাওয়া যায়, যা ১ লক্ষ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দেয়।

এই নতুন স্কিমগুলি শুধু অর্থনৈতিক বৃদ্ধি নয়, বরং অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নও নিশ্চিত করবে। নারী, যুবক এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের উদ্যোক্তারা এর থেকে সর্বাধিক লাভবান হবেন। সরকারের লক্ষ্য ২০২৫-এ ৫ লক্ষ নতুন এমএসএমই স্থাপন করা, যা দেশের কর্মসংস্থান সংকট মোকাবিলায় সাহায্য করবে। উদ্যোক্তারা এখনই উদ্যম পোর্টালে রেজিস্টার করে এবং নিকটস্থ ব্যাঙ্কে যোগাযোগ করে এই সুযোগগুলি গ্রহণ করতে পারেন। এই স্কিমগুলি ভারতকে একটি স্টার্টআপ নেশন হিসেবে গড়ে তুলবে এবং অর্থনীতির নতুন চ্যাপ্টার লিখবে।