National Critical Mineral Mission
ভারতের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য কাঁচামাল ও খনিজ সম্পদকে সুরক্ষিত করতে কেন্দ্রীয় সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করল ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন ২০২৫। মঙ্গলবার কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রি (CII) আয়োজিত ২০তম গ্লোবাল সাসটেইনেবিলিটি সামিটে কেন্দ্রীয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী ভূপেন্দর যাদব এই মিশনের ঘোষণা দেন।
ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন
যাদব জানান, দেশের অর্থনৈতিক বিকাশ, শিল্পায়ন, সবুজ প্রযুক্তি ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, “ভারত সরকার ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন ২০২৫ চালু করেছে। এই মিশনের আওতায় ২৪টি খনিজকে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। পাশাপাশি আরও ২৯টি খনিজকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জাতীয় নিরাপত্তা শক্তিশালী করার জন্য অত্যাবশ্যক বলে ধরা হয়েছে।”
মন্ত্রী বলেন, দেশের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন মডেল অর্থনীতি ও পরিবেশের মধ্যে ভারসাম্যের উপর নির্ভর করে। তাই এই মিশনের বাস্তবায়নে খনিজ সম্পদ আহরণের পাশাপাশি পরিবেশ সংরক্ষণের দিকেও জোর দেওয়া হচ্ছে। পরিবেশ মন্ত্রক ইতিমধ্যেই ফরেস্ট কনজারভেশন ও অগমেন্টেশন রুলস-এ সংশোধনী এনেছে, যা এই মিশনের সাফল্যে সহায়ক হবে।
সাসটেইনেবল গ্রোথ মডেল National Critical Mineral Mission
তিনি আরও যোগ করেন, ভবিষ্যতের জন্য একটি সাসটেইনেবল গ্রোথ মডেল গড়ে তুলতে হবে যেখানে সার্কুলার ইকোনমি, গ্রিন ম্যানুফ্যাকচারিং ও দায়িত্বশীল শিল্পপ্রক্রিয়া কেন্দ্রীয় ভূমিকা নেবে। অর্থাৎ, খনিজ আহরণ যেমন জরুরি, তেমনি সম্পদের পুনঃব্যবহার, বর্জ্য হ্রাস ও পরিবেশবান্ধব উৎপাদন ব্যবস্থাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে।
ভূপেন্দর যাদব এদিন সরকারের সাম্প্রতিক পদক্ষেপগুলির কথাও উল্লেখ করেন। তিনি জানান, গত মাসের ২৯ আগস্ট এনভায়রনমেন্ট অডিট রুলস ২০২৫ কার্যকর হয়েছে। এর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সারা দেশে পরিবেশ নিরীক্ষার একটি আনুষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করা হয়েছে। নতুন নিয়ম বিদ্যমান সরকারি পরিদর্শন বা মনিটরিং ব্যবস্থাকে প্রতিস্থাপন করবে না, বরং সেটিকে পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে।
এছাড়া, গ্রিন ক্রেডিট প্রোগ্রাম-এও সংশোধনী আনা হয়েছে, যেখানে এখন বেসরকারি সংস্থাগুলিও সরাসরি অংশ নিতে পারবে। এর ফলে কর্পোরেট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলিকে আরও দায়িত্বশীলভাবে পরিবেশ সংরক্ষণে যুক্ত করা যাবে।
জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতা
সামিটে বক্তব্য রাখেন সঞ্জীব পুরী, যিনি সম্প্রতি (২০২৪-২৫) CII-র ইমিডিয়েট পাস্ট প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বর্তমানে ITC লিমিটেড-এর চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর। তিনি স্পষ্টভাবে জলবায়ু সংকটের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে বলেন, “আমাদের সামনে জলবায়ু সঙ্কট রয়েছে। খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা হুমকির মুখে, সামাজিক বৈষম্য বাড়ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জটিল ভূ-রাজনীতি, অর্থনৈতিক চাপ এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) মতো নতুন প্রযুক্তিগত প্রবণতা, যা জীবিকা নিয়েও উদ্বেগ তৈরি করছে।”
পুরি সতর্ক করেন যে, বিশ্ব জলবায়ু সঙ্কট স্বীকার করলেও, বাস্তবে অঙ্গীকার অনুযায়ী কাজের গতি অত্যন্ত ধীর। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান নেট জিরো প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, কিন্তু আমরা সকলেই জানি যে বাস্তব অগ্রগতি একেবারেই অপ্রতুল।”
তিনি আরও বলেন, এখনই সময় ব্যবসায়িক মডেল নতুনভাবে কল্পনা করার। “আমাদের সাপ্লাই চেইন কীভাবে গড়ে তোলা হয়, পণ্য কীভাবে তৈরি হয়, ব্যবহার করা হয়, বিতরণ করা হয়—এসবকিছু নতুনভাবে ভাবতে হবে। সাসটেইনেবিলিটি কেবল সরকারের বা কর্পোরেটের বিষয় নয়, এটি সবার বিষয়। টেকসই জীবনযাপনকেই দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের ভিত্তি করতে হবে।”
ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি
ভারতের নবায়নযোগ্য শক্তি, ইলেকট্রিক যানবাহন, ব্যাটারি প্রযুক্তি, প্রতিরক্ষা ও ডিজিটাল অবকাঠামো—সব ক্ষেত্রেই লিথিয়াম, কোবাল্ট, নিকেল, রেয়ার আর্থ এলিমেন্টসের মতো খনিজ অপরিহার্য। বর্তমানে এদের অধিকাংশ আমদানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় ভূ-রাজনৈতিক ঝুঁকি বাড়ছে। ফলে, দেশীয় খনিজ অনুসন্ধান ও আহরণের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই মিশন শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিই নয়, বরং জাতীয় নিরাপত্তা, কৌশলগত স্বার্থ এবং সবুজ অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করবে।
ভূপেন্দর যাদবের ঘোষণায় স্পষ্ট, ভারত একটি দীর্ঘমেয়াদি নীতি কাঠামোর দিকে এগোচ্ছে, যেখানে অর্থনীতি, পরিবেশ ও নিরাপত্তা—তিনটিকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে, শিল্পক্ষেত্রের নেতৃত্বও জোর দিচ্ছে বাস্তবায়নের গতিকে দ্রুত করার উপর।
সাসটেইনেবিলিটি নিয়ে বিশ্বজুড়ে যখন প্রতিশ্রুতি থাকলেও কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি রয়েছে, তখন ভারতের ন্যাশনাল ক্রিটিক্যাল মিনারেল মিশন ২০২৫ একদিকে খনিজ সম্পদের নিরাপত্তা দেবে, অন্যদিকে টেকসই উন্নয়নের জন্য একটি উদাহরণ তৈরি করতে পারে।
Business: india launches the National Critical Mineral Mission 2025 to secure key raw materials vital for national security and economic growth. The mission identifies 24 critical and 29 strategic minerals, focusing on sustainable extraction, green technology, and circular economy principles.