গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দৃষ্টিভঙ্গিতে ধারাবাহিক গঠনমূলক সংস্কার ভারতের সামষ্টিক অর্থনীতির মৌলিক ভিত্তিকে রূপান্তরিত করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামণ (Nirmala Sitharaman)। শনিবার এক সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নিবন্ধে তিনি বলেন, “ভারতের দ্রুততম হারে বৃদ্ধি পাওয়া প্রধান অর্থনীতিগুলোর একটি হয়ে ওঠার পেছনে বহু ইতিবাচক উপাদান রয়েছে। এর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িয়ে আছে দেশের পাঁচটি প্রধান খাতের—ব্যাংক, কর্পোরেট, গৃহস্থালি, সরকার এবং বৈদেশিক খাত—এর আর্থিক অবস্থা মজবুত হওয়া।”
অর্থমন্ত্রী এক্স (পূর্বে টুইটার)-এ একটি পোস্টে লেখেন, “গত ১১ বছরে ভারত যে রূপান্তরের মধ্য দিয়ে গেছে—যেখানে আগে আমরা দ্বৈত ঘাটতির সমস্যায় ভুগতাম, সেখানে আজ আমরা পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ খাতের শক্তিশালী আর্থিক অবস্থানে পৌঁছেছি—তা প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে ধারাবাহিক নীতিগত প্রচেষ্টার ফল।”
তিনি আরও জানান, “২০১৪ সালে আমরা যখন ক্ষমতায় আসি, তখন ভারতের অর্থনীতি ‘ফ্র্যাজাইল ফাইভ’ এর অন্তর্ভুক্ত ছিল। সেই সময় আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন। সেই লক্ষ্যেই একের পর এক গঠনমূলক সংস্কার চালু করা হয়।”
গঠনমূলক সংস্কারের তালিকা
অর্থমন্ত্রী উল্লেখ করেন, এই সময়কালে চালু হওয়া কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কারের মধ্যে রয়েছে:
- জিএসটি (GST): পণ্য ও পরিষেবা করের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারের সরলীকরণ ও একত্রীকরণ।
- আইবিসি (IBC): দেউলিয়া আইন যা ঋণগ্রস্ত কোম্পানিগুলোর ঋণ পুনরুদ্ধারে সহায়তা করে।
- রেরা (RERA): রিয়েল এস্টেট খাতে স্বচ্ছতা এবং ভোক্তাদের অধিকার রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
- প্লি স্কিম (PLI Scheme): উৎপাদন সংস্থাগুলোকে উত্সাহিত করতে প্রণোদনা-ভিত্তিক প্রকল্প।
- ইসিএলজিএস (ECLGS): কোভিডকালে ক্ষুদ্র ও মাঝারি সংস্থাগুলোকে আর্থিক সহায়তা প্রদানে ঋণ গ্যারান্টি প্রকল্প।
অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, “যে খাতে গত কয়েক দশকে অবহেলা করা হয়েছিল—যেমন অবকাঠামো এবং সম্পদ নির্মাণ—সেই খাতগুলিতেও বিপুলভাবে বিনিয়োগ ও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।”
ডিজিটাল বিপ্লব ও উদ্যোক্তাদের প্রসার
সীতারামণ বলেন, “ইউপিআই (UPI)-র হাত ধরে দেশের ডিজিটাল অর্থনীতির এক অভূতপূর্ব বিপ্লব ঘটেছে। শুধুমাত্র ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষেই ইউপিআই লেনদেনের সংখ্যা ১৮৫ বিলিয়নের গণ্ডি ছাড়িয়েছে। এটি আমাদের প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনীতির ওপর মানুষের আস্থার বহিঃপ্রকাশ।”
একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদীর ‘মুদ্রা ঋণ প্রকল্প’-এর প্রসঙ্গ তুলে অর্থমন্ত্রী জানান, এখন পর্যন্ত ৫৩ কোটিরও বেশি অ্যাকাউন্টে প্রায় ৩৩ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ হয়েছে। “এটি ভারতের উদীয়মান উদ্যোক্তাদের আত্মবিশ্বাস এবং স্বপ্নপূরণের একটি পরিচায়ক,” বলেন সীতারামণ।
নিয়ন্ত্রক বোঝা কমিয়ে, বিশ্বাসভিত্তিক শাসন
তিনি আরও বলেন, “শেষ ১১ বছরে আমরা দেখেছি যে বিশ্বাসভিত্তিক শাসন ব্যবস্থার সঙ্গে যখন আমরা ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রক প্রতিবন্ধকতা দূর করি এবং জনসাধারণের জন্য কল্যাণমূলক সুবিধা বৃদ্ধি করি, তখন আমাদের অর্থনীতি কতদূর পৌঁছাতে পারে।”
বৈদেশিক বিনিয়োগের নতুন দিগন্ত
এই প্রসঙ্গে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের মন্তব্য উল্লেখ করা যায়। তিনি বলেন, “ভারতের বৈদেশিক বিনিয়োগ (FDI) এখন ১১২টি দেশ থেকে আসছে, যেখানে ২০১৩–১৪ সালে এটি ছিল মাত্র ৮৯টি দেশে সীমাবদ্ধ। এটি ভারতের বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার এক শক্তিশালী প্রমাণ।”
তিনি আরও বলেন, “ভারতের FDI কেবলমাত্র পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং এটি নীতিগত স্বচ্ছতা, ভবিষ্যতমুখী সংস্কার এবং বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের বিশ্বাসেরও পরিচয় বহন করে।”
বিশ্লেষণ ও ভবিষ্যতের দিশা
অর্থনীতি বিশ্লেষকদের মতে, ভারতের অর্থনৈতিক ভিত্তি বর্তমানে আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। কর আদায়ে বৃদ্ধি, ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা, বৈদেশিক মুদ্রা ভান্ডারের সমৃদ্ধি, এবং ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল ইকোসিস্টেম ভারতের অর্থনীতিকে আরও টেকসই ও প্রতিযোগিতামূলক করে তুলেছে।
তবে আগামী দিনে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, কৃষি সংস্কার এবং জলবায়ু অভিযোজন—এই তিনটি খাতের ওপর আরও জোর দেওয়া প্রয়োজন বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে গত ১১ বছরে ভারতের অর্থনৈতিক পথচলা ছিল এক বৈপ্লবিক রূপান্তরের সময়। এই যাত্রা যেমন ভবিষ্যতের জন্য ভিত্তি রচনা করেছে, তেমনি গোটা বিশ্বের কাছে ভারতের অর্থনৈতিক আত্মবিশ্বাসের বার্তাও পৌঁছে দিয়েছে। যদি এই গতি বজায় রাখা যায়, তাহলে ভারত বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী অর্থনীতিতে রূপ নিতে আর বেশি সময় নেবে না।