মোদী সরকারের সৌজন্যে একধাক্কায় ভারতে চিকিৎসা খরচ অনেকটাই কমছে

নয়াদিল্লি: স্বাস্থ্য পরিষেবার খরচ নিয়ে বহু বছর ধরেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুরু করে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা—সবকিছুর দাম এতটাই বেশি যে গরিব ও…

GST Reforms Healthcare Costs Slashed in India, Essential Medicines Now Tax-Free

নয়াদিল্লি: স্বাস্থ্য পরিষেবার খরচ নিয়ে বহু বছর ধরেই অভিযোগ সাধারণ মানুষের। জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুরু করে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা—সবকিছুর দাম এতটাই বেশি যে গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির পক্ষে চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ছিল। অবশেষে সেই দিকেই নজর দিল কেন্দ্র। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সম্প্রতি GST সংস্কারের (GST Reforms) একগুচ্ছ ঘোষণা করেছেন। যার ফলে চিকিৎসা ক্ষেত্রে একধাক্কায় খরচ কমতে চলেছে অনেকটাই।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বড় রেয়াত
ঘোষণা অনুযায়ী—

   
  • ৩৩টি জীবনদায়ী ওষুধ: এতদিন যেখানে ১২ শতাংশ কর দিতে হত, এবার তা ০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ এই ওষুধগুলির উপর আর কোনও GST বসবে না।
  • রক্ত পরীক্ষা ও সুগার টেস্ট: সাধারণ মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই পরীক্ষার কর হার ১২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।
  • অ্যাম্বুলেন্স কেনা: আগে যেখানে ২৮ শতাংশ কর দিতে হত, এখন সেটি ১৮ শতাংশে নামানো হয়েছে।

এর ফলে একদিকে ওষুধ এবং চিকিৎসার খরচ কমবে, অন্যদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবার সহজলভ্যতা বাড়বে।

সরকারের বক্তব্য
অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ বলেন, “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে চিকিৎসা পৌঁছে দেওয়া। জীবনদায়ী ওষুধ করমুক্ত করার সিদ্ধান্তে রোগীদের বড় স্বস্তি মিলবে। একইসঙ্গে পরীক্ষার খরচ কমানো ও অ্যাম্বুলেন্সের দাম হ্রাস করা স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রসারে বিশেষ ভূমিকা নেবে।”

সরকার মনে করছে, এই রেয়াত স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়াতে সাহায্য করবে। হাসপাতাল ও নার্সিংহোমগুলি আরও বেশি অ্যাম্বুলেন্স কিনতে পারবে, আর রোগীরা সস্তায় চিকিৎসা পাবেন।

সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া
দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা খরচে নাভিশ্বাস উঠছিল সাধারণের। এবার সরকারের ঘোষণায় অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। কলকাতার এক ক্যানসার রোগীর আত্মীয় বলেন, “প্রতিমাসে কেমোথেরাপির ওষুধ কিনতে প্রচুর টাকা দিতে হয়। এখন যদি GST শূন্য হয়, তাহলে অন্তত কিছুটা বোঝা কমবে।”

একইভাবে এক বেসরকারি হাসপাতালের ডাক্তার জানিয়েছেন, “রক্ত পরীক্ষা ও সুগার টেস্টের খরচ কমলে সাধারণ মানুষ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে উৎসাহিত হবেন। এতে রোগ ধরা পড়বে প্রাথমিক পর্যায়েই।”

Advertisements

তবুও স্বাস্থ্য বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই সিদ্ধান্ত সামগ্রিকভাবে ইতিবাচক। কারণ সরাসরি রোগীদের খরচ কিছুটা হলেও কমবে।

অন্য খাতে বাড়তি কর
স্বাস্থ্য পরিষেবায় কর ছাড়ের পাশাপাশি কেন্দ্র বেশ কিছু পণ্যের উপর বাড়তি কর চাপানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছে। ঘোষণায় বলা হয়েছে—

  • পান মশলা, সিগারেট, গুটখা – ৪০% GST
  • জর্দা ও বিড়ি – ৪০% GST
  • ক্যাফিনযুক্ত ড্রিঙ্কস – ৪০% GST
  • ১৩৫ সিসি-র উপরের মোটরসাইকেল ও ৩৫০ সিসি বাইক – ৪০% GST
  • ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ও প্লেন – ৪০% GST
  • লটারি টিকিট – ৪০% GST

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, এই নিয়ম ২২ সেপ্টেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এমনকি গাড়ির শোরুমে স্টক থাকা গাড়িগুলিও যদি ওই তারিখের পরে বিক্রি হয়, তাহলে তাদের উপরও নতুন কর প্রযোজ্য হবে।

কেন্দ্রের দাবি, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে কর কমানো হলেও ক্ষতিকর পণ্যগুলির উপর কর বাড়িয়ে একদিকে রাজস্ব বাড়ানো হবে, অন্যদিকে সামাজিক স্বার্থও রক্ষা পাবে। তামাকজাত দ্রব্য বা ক্যাফিনযুক্ত ড্রিঙ্কস মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই এগুলির ব্যবহার কমানোই সরকারের উদ্দেশ্য।

একদিকে স্বাস্থ্য পরিষেবায় বড় রেয়াত, অন্যদিকে ক্ষতিকর পণ্য ও বিলাসবহুল সামগ্রীর উপর বাড়তি কর—দুইয়ের সমন্বয়ে মোদী সরকারের নয়া GST সংস্কার দেশে বড়সড় প্রভাব ফেলতে চলেছে। তাই বলা হচ্ছে—চিকিৎসা খরচে মিলছে স্বস্তি, কিন্তু বিলাসিতায় চাপছে বোঝা।