কলকাতাসহ জেলায় পেট্রোলের দাম কতটা বাড়ল? জানুন বিস্তারিত

Kolkata Petrol Price Today: কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় পেট্রোলের দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। ৬ জুন, ২০২৫-এ কলকাতায় পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে…

Kolkata Petrol Price Today

Kolkata Petrol Price Today: কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় পেট্রোলের দাম গত কয়েক সপ্তাহ ধরে স্থিতিশীল রয়েছে। ৬ জুন, ২০২৫-এ কলকাতায় পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ১০৫.৪১ টাকা, যা গতকালের তুলনায় কোনও পরিবর্তন হয়নি। গত এক মাসে কলকাতায় পেট্রোলের দাম ১০৫.০১ টাকা থেকে ১০৫.৪১ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায়ও পেট্রোলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, যা রাজ্যের মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং কেন্দ্রীয় এক্সাইজ শুল্ক সহ নির্ধারিত হয়। এই প্রতিবেদনে আমরা কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় পেট্রোলের দাম, এর প্রভাব, এবং দাম নির্ধারণের কারণগুলো বিশ্লেষণ করব।

কলকাতায় পেট্রোলের দাম: একটি স্থিতিশীল প্রবণতা
গত ১০ দিনের তথ্য অনুযায়ী, কলকাতায় পেট্রোলের দাম ১০৫.৪১ টাকায় স্থির রয়েছে। ২৭ মে থেকে ৬ জুন, ২০২৫ পর্যন্ত কোনও দামের পরিবর্তন হয়নি। এই স্থিতিশীলতা কলকাতার জনগণের জন্য স্বস্তির কারণ হলেও, পেট্রোলের দাম এখনও অন্যান্য মেট্রো শহরের তুলনায় তুলনামূলকভাবে বেশি। উদাহরণস্বরূপ, দিল্লিতে পেট্রোলের দাম কলকাতার তুলনায় প্রায় ১০.২৪ টাকা কম। এই পার্থক্যের প্রধান কারণ হল পশ্চিমবঙ্গ সরকার কর্তৃক আরোপিত ২৫% ভ্যাট বা প্রতি লিটারে ১৩.১২ টাকা (যেটি বেশি)। এছাড়া, কেন্দ্রীয় এক্সাইজ শুল্ক (প্রতি লিটারে ১৭.৯৮ টাকা) এবং ডিলার কমিশনও দামের একটি বড় অংশ গঠন করে।

   

২০১৭ সালের জুন থেকে ভারতে পেট্রোলের দাম প্রতিদিন সকাল ৬টায় সংশোধন করা হয়, যা ডায়নামিক ফুয়েল প্রাইসিং নীতি নামে পরিচিত। এই নীতি বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের দাম, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার, এবং স্থানীয় চাহিদা ও সরবরাহের উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করে। কলকাতায় পেট্রোলের দাম গত কয়েক সপ্তাহে স্থির থাকলেও, বৈশ্বিক তেল বাজারের অস্থিরতা ভবিষ্যতে দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গের অন্যান্য জেলায় পেট্রোলের দাম
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় পেট্রোলের দাম সামান্য পার্থক্য দেখায়, যা মূলত ভ্যাট এবং পরিবহন খরচের উপর নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ, ৫ জুন, ২০২৫-এ জলপাইগুড়িতে পেট্রোলের দাম ছিল ১০৫.৬১ টাকা, যা গতকালের তুলনায় অপরিবর্তিত। গত ১০ দিনে জলপাইগুড়িতে দাম ১০৫.১১ থেকে ১০৫.৮৪ টাকার মধ্যে ওঠানামা করেছে। হুগলিতে গত ২৬ মে, ২০২৫-এ সর্বোচ্চ দাম রেকর্ড করা হয়েছিল ১০৬.১৫ টাকা। উত্তর ২৪ পরগনায় পেট্রোলের দাম ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫-এ ১০৫.৪৭ টাকা ছিল, যা গত দিনের তুলনায় সামান্য কম। এই পার্থক্যগুলো স্থানীয় পরিবহন খরচ এবং ডিলার কমিশনের উপর নির্ভর করে।

পেট্রোলের দাম নির্ধারণের কারণ
কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোলের দাম নির্ধারণে বেশ কয়েকটি কারণ ভূমিকা রাখে। প্রথমত, বৈশ্বিক অপরিশোধিত তেলের দাম। মে মাসে ভারতীয় ক্রুড বাস্কেটের গড় দাম ছিল ব্যারেল প্রতি ৬৪.০৫ ডলার, যা এপ্রিলের ৬৭.৭৩ ডলার থেকে কম। এই হ্রাস পেট্রোলের দামে স্থিতিশীলতা আনতে সাহায্য করেছে। দ্বিতীয়ত, ডলারের বিপরীতে টাকার বিনিময় হার। টাকার মান কমলে আমদানি ব্যয় বাড়ে, যা পেট্রোলের দাম বাড়ায়। তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কর। পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোলের উপর ২৫% ভ্যাট এবং কেন্দ্রীয় এক্সাইজ শুল্ক মিলিয়ে মোট দামের প্রায় অর্ধেকই কর হিসেবে যায়।

২০২৪ সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছিলেন পেট্রোলের দাম প্রতি লিটারে ২ টাকা কমানো হবে, যা কলকাতায় দাম ১০৩.৯৪ টাকায় নামিয়ে এনেছিল। তবে, এই হ্রাসের পর দাম আবার বেড়েছে, যা বৈশ্বিক তেল বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কারণে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জ্বালানি তেলের মজুদ কমে যাওয়া এবং রাশিয়ায় সরবরাহ বাধার মতো ভূ-রাজনৈতিক কারণগুলোও দামের উপর প্রভাব ফেলছে।

Advertisements

প্রভাব ও প্রতিক্রিয়া
পেট্রোলের দাম স্থিতিশীল থাকলেও, কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গের সাধারণ মানুষের উপর এর প্রভাব উল্লেখযোগ্য। দৈনন্দিন যাতায়াতকারী, অটো-রিকশা ও ট্যাক্সি চালক, এবং লজিস্টিক কোম্পানিগুলো জ্বালানি খরচের বোঝা বহন করে। উচ্চ পেট্রোলের দাম পণ্য ও পরিষেবার দাম বাড়ায়, যা মূল্যস্ফীতির দিকে নিয়ে যায়। নিম্ন আয়ের পরিবারগুলো এই দামের প্রভাব বেশি অনুভব করে, কারণ তাদের আয়ের একটি বড় অংশ পরিবহন ও জ্বালানিতে ব্যয় হয়।

স্থানীয় অটো-রিকশা চালক রমেশ মণ্ডল বলেন, “পেট্রোলের দাম স্থির থাকলেও এখনও বেশি। আমাদের ভাড়া বাড়াতে হয়, কিন্তু যাত্রীরা তাতে ক্ষুব্ধ হন।” এছাড়া, পর্যটন শিল্পও উচ্চ জ্বালানি দামের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কারণ ভ্রমণ ব্যয় বৃদ্ধি পর্যটকদের সংখ্যা কমাতে পারে।

ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বৈশ্বিক তেল বাজারের অস্থিরতা এবং ভূ-রাজনৈতিক ঘটনাবলী ভবিষ্যতে পেট্রোলের দামের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। ওপেক+ এর উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কম মজুদ সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি করছে, যা দাম বাড়াতে পারে। তবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার যদি ভ্যাট কমায় বা কেন্দ্রীয় সরকার এক্সাইজ শুল্ক হ্রাস করে, তবে দাম কিছুটা কমতে পারে।

দৈনিক পেট্রোলের দাম জানতে গ্রাহকরা ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম, এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়ামের মোবাইল অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করতে পারেন।  

কলকাতা ও পশ্চিমবঙ্গে পেট্রোলের দাম বর্তমানে স্থিতিশীল হলেও, এর উচ্চ মূল্য সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার উপর প্রভাব ফেলছে। বৈশ্বিক তেল বাজার, টাকার বিনিময় হার, এবং স্থানীয় কর নীতি এই দাম নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ভবিষ্যতে দামের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সরকারি নীতি এবং বৈশ্বিক বাজারের উপর নির্ভর করবে। দৈনন্দিন জীবনে জ্বালানির গুরুত্ব বিবেচনা করে, সঠিক তথ্য এবং পরিকল্পনা গ্রাহকদের জন্য অত্যন্ত জরুরি।