২০২৫-২৬ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের শেষ তারিখ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের ১৫ই সেপ্টেম্বর করা হয়েছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়সীমা শেষ হওয়ার আগেই আয়কর রিটার্ন জমা দেওয়া উচিত। কারণ, রিটার্ন ফাইল করা মানে শুধুমাত্র একটি ফর্ম পূরণ করা নয়; বরং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক দায়িত্ব যা সঠিকভাবে সম্পন্ন করা অত্যন্ত জরুরি। ছোটোখাটো ভুলের জন্য আপনাকে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার মুখোমুখি হতে হতে পারে।
বর্তমানে নতুন কর ব্যবস্থা (new tax regime) ডিফল্ট হিসেবে রাখা হলেও, সরকার করদাতাদের এখনও পূর্বের (পুরনো) কর ব্যবস্থা বেছে নেওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। ফলে, আপনার আর্থিক পরিস্থিতি অনুযায়ী যেটি ভালো মনে হয়, সেটি বেছে নেওয়া সম্ভব।
এখন ফর্ম ১ (SAHAJ) এবং ফর্ম ৪ (SUGAM) এর ইউটিলিটি পাওয়া যাচ্ছে। বেতনভোগী কর্মচারীদের জন্যও ITR ফাইল করা সহজ হয়ে গেছে, কারণ এ সময়ের মধ্যে তাদের নিয়োগকর্তা Form 16 ইস্যু করে ফেলেছেন। ফলে, বেতনভোগীরা সহজেই তাদের বেতন ও কর সংক্রান্ত বিবরণী মিলিয়ে রিটার্ন ফাইল করতে পারেন।
রিটার্ন সাবমিশনের পর করণীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ:
আয়কর রিটার্ন সাবমিট করার পরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে, যা আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং ভবিষ্যতের কর পরিকল্পনা ভালোভাবে করতে সাহায্য করবে।
১) ই-ভেরিফাই করুন আপনার ITR:
মনে রাখবেন, রিটার্ন ফাইল করা মানে কাজ শেষ নয়। সেটিকে অবশ্যই ই-ভেরিফাই করতে হবে। ই-ভেরিফিকেশন করা যায় আধার OTP, নেট ব্যাংকিং বা ইলেকট্রনিক ভেরিফিকেশন কোড (EVC)-এর মাধ্যমে। ৩০ দিনের মধ্যে ভেরিফাই না করলে রিটার্নটি বাতিল হয়ে যাবে এবং তা পুনরায় ফাইল করতে হবে। এর ফলে সময় ও অর্থ দুই-ই ক্ষয় হতে পারে।
২) রিফান্ড স্ট্যাটাস ট্র্যাক করুন:
যদি রিফান্ডের প্রত্যাশা থাকে, তাহলে তার অবস্থা নিয়মিত চেক করুন। ই-ফাইলিং পোর্টাল বা NSDL এর ওয়েবসাইটের মাধ্যমে রিফান্ডের স্ট্যাটাস দেখা যায়। সাধারণত, রিটার্ন প্রসেসিং শেষ হওয়ার কয়েক সপ্তাহের মধ্যে রিফান্ডের টাকা অ্যাকাউন্টে জমা হয়। অনেক সময় তথ্যের গরমিল বা ব্যাংক ডিটেলের সমস্যার জন্য রিফান্ড আটকে যেতে পারে, তাই সময়মতো ট্র্যাক করা খুবই প্রয়োজন।
৩) ফর্ম ২৬AS এবং AIS যাচাই করুন:
আপনার ITR-এ যা তথ্য দিয়েছেন, তা ফর্ম ২৬AS এবং Annual Information Statement (AIS)-এর সাথে মিলিয়ে নিন। ২৬AS ফর্মে আপনার TDS (Tax Deducted at Source), ট্যাক্স পেমেন্ট, রিফান্ডের তথ্য ইত্যাদি থাকে। অন্যদিকে, AIS-এ আপনার ব্যাংক লেনদেন, শেয়ার বিক্রি, ইন্টারেস্ট ইনকামসহ অন্যান্য আর্থিক তথ্য থাকে। যদি কোনো গরমিল থাকে, তাহলে দ্রুত সংশোধনের উদ্যোগ নিন। না হলে, আয়কর দফতর থেকে নোটিশ পেতে পারেন।
৪) ITR-V ডাউনলোড ও সংরক্ষণ করুন:
ই-ভেরিফিকেশন শেষ হলে ITR-V (অ্যাকনোলেজমেন্ট) ডাউনলোড করুন এবং একটি কপি সেভ করে রাখুন। এটি ভবিষ্যতে অনেক কাজে লাগে — যেমন, বিদেশযাত্রার জন্য ভিসা আবেদন, বড় অঙ্কের লোন আবেদন বা অন্য কোনো আর্থিক যাচাইয়ের সময়। অনেকেই এই ধাপটি এড়িয়ে যান, পরে বিভিন্ন জায়গায় সমস্যা হয়।
৫) আগামী বছরের কর পরিকল্পনা শুরু করুন:
এখনই আপনার মোট আয়, খরচ, বিনিয়োগ এবং বাঁচানোর সুযোগগুলো বিশ্লেষণ করুন। আপনার করের দায় কমাতে ELSS (Equity Linked Savings Scheme), NPS (National Pension System), লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্বাস্থ্য বীমা বা অন্যান্য কর-বাঁচানো যোজনা বিবেচনা করতে পারেন। এভাবে আগামী বছরের জন্য সঠিকভাবে পরিকল্পনা করলে হঠাৎ করের বোঝা কমে যাবে এবং আর্থিকভাবে সুরক্ষিত থাকা সম্ভব হবে।
আয়কর রিটার্ন ফাইলিংয়ে দেরি করলে কী হবে?
অনেক সময় দেখা যায়, অনেকে শেষ মুহূর্তে রিটার্ন ফাইল করেন। এর ফলে তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুল হয়ে যায় — যেমন, ভুল আয় উল্লেখ করা, TDS ডিটেলস বাদ পড়া বা সঠিক ফর্ম না বেছে নেওয়া। এইসব ভুলের জন্য পরবর্তীতে জরিমানা, সুদ এবং নোটিশের মুখোমুখি হতে হয়। তাই বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন, যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন ফাইল করে ফেলার জন্য।
কেন এই রিটার্ন ফাইলিং গুরুত্বপূর্ণ?
আয়কর রিটার্ন শুধু কর পরিশোধের কাগজ নয়, বরং এটি আপনার আর্থিক শৃঙ্খলার প্রমাণ। নিয়মিত রিটার্ন ফাইল করলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন, ব্যাংক লোন, ক্রেডিট কার্ড, ভিসা আবেদন, বড় বিনিয়োগ ইত্যাদির সময় এটি প্রয়োজন হয়। এছাড়া, এটি আপনার অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রমাণ করে এবং যেকোনো আর্থিক জটিলতা এড়াতে সাহায্য করে।
যদিও সরকার ১৫ই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা বাড়িয়েছে, তবু দেরি না করে যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন ফাইল করুন। ভুল ছাড়া, সঠিক তথ্যের ভিত্তিতে রিটার্ন ফাইল করলে আপনি কর পরিশোধের পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য সঠিক আর্থিক পরিকল্পনা করতে পারবেন। মনে রাখুন, সঠিক পরিকল্পনা ও সতর্কতা ভবিষ্যতের আর্থিক সুরক্ষার মূল চাবিকাঠি।