আয়কর রিটার্ন (ITR) জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ঘনিয়ে আসছে। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের (মূল্যায়ন বর্ষ ২০২৫-২৬) জন্য করদাতাদের কাছে হাতে রয়েছে মাত্র ১৫ দিন। আয়কর দফতর জুলাই ৩০ থেকে শেষ তারিখ বাড়িয়ে ৪৫ দিন করে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত করেছে। তবে এই সময়সীমা আর বাড়ানো হবে না বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
নিয়ম অনুযায়ী, এই সময়সীমা প্রযোজ্য ব্যক্তিগত করদাতা, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (HUF) এবং সেইসব সংস্থা বা ব্যক্তি যাদের হিসাবপত্র নিরীক্ষার প্রয়োজন হয় না।
দেশজুড়ে প্রচণ্ড বৃষ্টিপাত, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, তথ্যের অসামঞ্জস্য (AIS ও Form 26AS) এবং পোর্টালে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অনেক করদাতা এখনও রিটার্ন জমা দিতে পারেননি। বিভিন্ন বণিক সমিতি ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টদের সংগঠন আয়কর দফতরের কাছে সময়সীমা আরও বাড়ানোর দাবি জানালেও, এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে কোনও সরকারি ঘোষণা আসেনি।
ক্লিয়ারট্যাক্স-এর বিজনেস হেড অবিনাশ পোলোপল্লী বলেন, “প্রায় অর্ধেক করদাতা ইতিমধ্যেই রিটার্ন জমা দিয়েছেন। ফলে নতুন করে সময় বাড়ানো হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
যদি কোনও করদাতা ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে রিটার্ন জমা দিতে না পারেন, তবে তার সামনে দু’টি পথ খোলা থাকে—
1. ITR-U জমা দেওয়া (ধারা ১৩৯(৮এ) অনুযায়ী):
এখানে করদাতা সংশোধিত রিটার্ন জমা দিতে পারেন। এই সুবিধা প্রযোজ্য চার বছর পর্যন্ত, প্রাসঙ্গিক অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার শেষ হওয়ার পর থেকে। তবে এর জন্য অতিরিক্ত কর দিতে হয়, যা ২৫% থেকে ৭০% পর্যন্ত হতে পারে।
2. কন্ডোনেশন অব ডিলে আবেদন (ধারা ১১৯(২)(বি)):
কোনও প্রকৃত কারণে রিটার্ন সময়মতো জমা দিতে না পারলে, করদাতা কন্ডোনেশনের জন্য আবেদন করতে পারেন। আয়কর দফতর অনুমোদন দিলে, করদাতা ধারা ১৩৯(৯এ) অনুযায়ী রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কর বা সুদ দিতে হয় না।
কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (CBDT)-এর এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, “কন্ডোনেশন অব ডিলে মূলত এক বিশেষ সুযোগ, যাতে প্রকৃত করদাতারা জরিমানা বা অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা এড়াতে পারেন।”
কন্ডোনেশন অনুমোদন পাওয়ার পর করদাতাদের নিম্নলিখিত ধাপগুলি অনুসরণ করতে হবে—
আয়কর ই-ফাইলিং পোর্টালে লগইন করতে হবে বৈধ User ID ও পাসওয়ার্ড দিয়ে।
সঠিক অ্যাসেসমেন্ট ইয়ার নির্বাচন করে ফাইলিং টাইপে “u/s 139(9A) – After Condonation of delay u/s 119(2)(b)” অপশন বেছে নিতে হবে।
নিশ্চিত করতে হবে যে কন্ডোনেশনের আবেদন অনুমোদিত হয়েছে।
সঠিক ITR ফর্ম নির্বাচন করে অফলাইন ইউটিলিটি থেকে তৈরি JSON ফাইল আপলোড করতে হবে।
শেষ ধাপে রিটার্ন ভেরিফাই করে জমা সম্পূর্ণ করতে হবে।
যারা অফলাইন ইউটিলিটি ব্যবহার করবেন, তাদের জন্য নির্দেশাবলী:
1. আয়কর দফতরের পোর্টাল থেকে প্রয়োজনীয় ITR ইউটিলিটি ডাউনলোড করতে হবে।
2. Excel-ভিত্তিক ইউটিলিটি ইনস্টল করে প্রয়োজনীয় তথ্য পূরণ করতে হবে।
3. Filing Information সেকশনে Unique Document Identification Number (DIN) ও কন্ডোনেশন আদেশের তারিখ উল্লেখ করতে হবে।
4. JSON ফাইল জেনারেট করে পোর্টালে আপলোড করতে হবে।
5. জমা দেওয়ার পর ট্রানজ্যাকশন আইডি সংরক্ষণ করতে হবে ভবিষ্যতের জন্য।
কন্ডোনেশন ফাইলিং-এর জন্য যেসব নথি লাগবে-
Principal Chief Commissioner of Income Tax (PCIT) কর্তৃক অনুমোদিত কন্ডোনেশন অর্ডার, বৈধ ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড, ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য, Form 26AS ও Annual Information Statement (AIS).
ট্যাক্স কনসালট্যান্টদের মতে, শেষ মুহূর্তে অপেক্ষা না করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রিটার্ন জমা দেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ শেষ সপ্তাহে পোর্টালে চাপ বেড়ে যায়, ফলে লগইন সমস্যা বা ডেটা আপলোডে বাধা দেখা দিতে পারে।
অবিনাশ পোলোপল্লী বলেন, “করদাতাদের উচিত দ্রুত রিটার্ন ফাইল করে নেওয়া। কারণ শেষ মুহূর্তে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে ঝামেলায় পড়তে হতে পারে।”
সেপ্টেম্বর ১৫-এর মধ্যে রিটার্ন ফাইল করা না হলে জরিমানা ও অতিরিক্ত করের বোঝা মাথায় চেপে বসবে। যদিও কন্ডোনেশন বা ITR-U-এর বিকল্প রয়েছে, তবে সেই প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং জটিল। তাই বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে পরামর্শ দিচ্ছেন—অবিলম্বে রিটার্ন জমা দিন, ঝুঁকি নেবেন না।