আর্থিক বছর ২০২৪-২৫ (মূল্যায়ন বছর ২০২৫-২৬)–এর জন্য আয়কর রিটার্ন (ITR) দাখিলের সময়সীমা দ্রুত ঘনিয়ে আসছে। যেসব করদাতার অ্যাকাউন্ট অডিটের আওতায় নয়, তাঁদের জন্য কেন্দ্রীয় প্রত্যক্ষ কর পর্ষদ (CBDT) নতুন সময়সীমা নির্ধারণ করেছে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫। অর্থাৎ, আর মাত্র ১৫ দিন বাকি। এই সময়ের পর দাখিল করলে করদাতাদের জরিমানা দিতে হবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাও হাতছাড়া হবে।
প্রথমে নির্ধারিত শেষ তারিখ ছিল ৩০ জুলাই ২০২৫। কিন্তু আয়কর রিটার্নের (ITR) নতুন ফর্মে বিস্তৃত পরিবর্তন আনা এবং তার জন্য সিস্টেম প্রস্তুতি ও রিটার্ন দাখিলের ইউটিলিটি চালু করতে অতিরিক্ত সময় লাগায়, CBDT সময়সীমা ৪৫ দিন বাড়িয়ে ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত করেছে।
এই নতুন সময়সীমা প্রযোজ্য হয়েছে ব্যক্তিগত করদাতা, হিন্দু অবিভক্ত পরিবার (HUF) এবং যাঁদের অডিটের প্রয়োজন নেই—তাঁদের ক্ষেত্রে। ট্যাক্স বিশেষজ্ঞদের মতে, শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করা ঝুঁকিপূর্ণ। নির্ধারিত সময়ের শেষ সপ্তাহে করদাতারা হুড়োহুড়ি করে রিটার্ন জমা দেন। তখন আয়কর দাখিল পোর্টালে চাপ বাড়ে, ফলে সার্ভার ডাউন হওয়া, প্রযুক্তিগত সমস্যা বা বেশি সময় নেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। এতে অনেকে ভোগান্তির শিকার হতে পারেন।
এ ছাড়া নির্ধারিত তারিখের পর রিটার্ন জমা দিলে শুধু বিলম্ব সুদ ও জরিমানা দিতে হয় না, বরং কিছু কর সুবিধাও হারাতে হয়। যেমন—কোনো আর্থিক ক্ষতির অফসেট নেওয়া বা ভবিষ্যতের জন্য লোকসান বহন (carry forward) করার সুযোগ। তাই শেষ মুহূর্ত না দেখে যত দ্রুত সম্ভব রিটার্ন দাখিল করা শ্রেয়।
করদাতাদের সুবিধার জন্য আয়কর দপ্তর ITR ফর্ম ১ থেকে ৭ পর্যন্ত এক্সেল ইউটিলিটি চালু করেছে। করদাতারা তাঁদের আয়, যোগ্যতা ও শর্ত অনুসারে ফর্ম বেছে নিতে পারবেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সঠিক ফর্ম নির্বাচন না করলে রিটার্ন দাখিল প্রক্রিয়ায় জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অন্যদিকে, যেসব করদাতার অ্যাকাউন্ট অডিটের আওতায় পড়ে—যেমন কোম্পানি, প্রোপ্রাইটরশিপ ব্যবসায়ী এবং ফার্মের কার্যরত পার্টনারদের ক্ষেত্রে সময়সীমা কিছুটা বেশি। তাঁদের জন্য ITR দাখিলের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর ২০২৫। তবে তার আগে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫–এর মধ্যে অডিট রিপোর্ট দাখিল করা বাধ্যতামূলক। CBDT এখনও পর্যন্ত এই সময়সীমায় কোনো পরিবর্তনের ঘোষণা দেয়নি।
করদাতাদের একটি অংশ এবং কর পরামর্শদাতা সংগঠনগুলো CCTAX সহ বিভিন্ন ফোরামের মাধ্যমে পুনরায় সময় বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছে। তাঁদের বক্তব্য, নতুন স্ল্যাব, মূলধনী লাভ সংক্রান্ত নিয়মে পরিবর্তন এবং সিস্টেমের বারংবার প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে অনেক করদাতা সময়মতো রিটার্ন জমা দিতে পারছেন না। তবে CBDT এই বিষয়ে এখনও কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়নি। ফলে ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই রিটার্ন জমা দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
এ মাসে আয়কর রিটার্ন ছাড়াও আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কর সংক্রান্ত সময়সীমা রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা করদাতাদের পরামর্শ দিচ্ছেন, সময়মতো এগুলো খেয়াল না রাখলে অতিরিক্ত জরিমানা বা আইনগত জটিলতার সম্মুখীন হতে হতে পারে।
যাঁদের অ্যাকাউন্ট অডিটের আওতায় নেই, তাঁদের জন্য ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫–এর মধ্যে আয়কর রিটার্ন দাখিল করা এখন সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। শেষ তারিখ মিস করলে শুধু অর্থনৈতিক জরিমানাই নয়, বরং ভবিষ্যতের জন্য কর পরিকল্পনায় বড় ক্ষতির সম্ভাবনা তৈরি হবে। তাই দেরি না করে দ্রুত রিটার্ন জমা দেওয়া করদাতাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ ও বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত।