মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে যুদ্ধবিরতির (Israel-Iran Ceasefire) ঘোষণা আসতেই মঙ্গলবার তেল আবিব স্টক এক্সচেঞ্জে দেখা গেল চাঙা ভাব। ইসরায়েলের শীর্ষ সূচক TA-35 এক বছরের উচ্চতম সীমার কাছাকাছি পৌঁছে যায়। এই উল্লম্ফনের পেছনে রয়েছে মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা প্রশমনের আশ্বাস এবং মার্কিন নেতৃত্বে কূটনৈতিক অগ্রগতি।
সূচকে ঝাঁপ: অর্থনৈতিক ইতিবাচক বার্তা:
ইসরায়েলের প্রধান সূচক TA-35, যা দেশের শীর্ষ ব্লু-চিপ কোম্পানিগুলিকে প্রতিনিধিত্ব করে, মঙ্গলবার ১.৯ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। TA-125 সূচকও ১.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। এর পাশাপাশি বিভিন্ন খাতভিত্তিক সূচকেও উল্লম্ফন দেখা যায়—TA-Construction সূচক ১.৮ শতাংশ, TA-Real Estate সূচক ২ শতাংশ এবং TA-Banks সূচক ৩.৭ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
গত সপ্তাহজুড়েই ইসরায়েলি শেয়ার বাজারে ইতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে। মার্কিন-ইসরায়েলি যৌথভাবে ইরানের পারমাণবিক ও সামরিক স্থাপনায় হামলার পর থেকেই এই ঊর্ধ্বগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এরই মাঝে ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি যুদ্ধবিরতির ঘোষণা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশার আলো জাগিয়েছে।
যুদ্ধ থেকে আলোচনায় ফেরার গল্প: ট্রাম্প প্রশাসনের কৌশল:
হোয়াইট হাউসের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন যে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন এবং তাঁর প্রশাসনের সদস্যরা গোপন ব্যাকচ্যানেল যোগাযোগের মাধ্যমে ইরানের সঙ্গেও আলোচনা চালান। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
সূত্র জানায়, গত সপ্তাহান্তে পরিস্থিতি তীব্রতর হয়ে উঠেছিল যখন মার্কিন বোমারু বিমান ইরানের গোপন পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে ৩০,০০০ পাউন্ডের বাংকার-বাস্টার বোমা ফেলে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান একটি মার্কিন ঘাঁটির দিকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ে, তবে এতে কোনো প্রাণহানি হয়নি।
এই উত্তপ্ত পরিস্থিতির মাঝেই ট্রাম্প দ্রুত পদক্ষেপ নেন এবং তার প্রশাসনকে নির্দেশ দেন ইরানের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করতে। এক কর্মকর্তা বলেন, “শনিবার রাতে প্রেসিডেন্ট বলেছিলেন, ‘ইরানিদের সঙ্গে যোগাযোগ করো। আমাকে নেতানিয়াহুকে ফোনে দাও, আমরা শান্তি আনবো।’”
ট্রাম্পের দ্বৈত অবস্থান: আক্রমণ ও শান্তির ভারসাম্য:
১৮ জুন ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি দুই সপ্তাহের মধ্যে ইরান বিষয়ে মার্কিন পদক্ষেপ নির্ধারণ করবেন। কিন্তু মাত্র তিন দিন পর, ২১ জুন বিকেলে তিনি ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামোয় হামলার অনুমোদন দেন। এই পদক্ষেপ ছিল ট্রাম্পের দীর্ঘদিনের ‘নন-ইন্টারভেনশনিস্ট’ (অঅক্রমণ নীতির) অবস্থানের বিপরীতমুখী।
ট্রাম্পের এই সামরিক সিদ্ধান্ত তাঁর নিজের সমর্থক গোষ্ঠীর মধ্যে প্রশ্ন তোলে। বিশেষ করে “Make America Great Again” ঘরানার রক্ষণশীলরা বহুদিন ধরেই বিদেশে সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। তবে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই সিদ্ধান্ত ছিল যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থের ওপর ভিত্তি করে গৃহীত।
ওভাল অফিসে যুদ্ধবিরতির জন্ম:
যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত আসে এক দীর্ঘ ওভাল অফিস বৈঠকের পর। ট্রাম্প এবং নেতানিয়াহুর মধ্যে সরাসরি ফোনালাপের মধ্য দিয়েই চূড়ান্ত হয় এই যুদ্ধবিরতি। জানা গেছে, নেতানিয়াহু শুরু থেকেই মার্কিন সামরিক সহায়তার পক্ষে জোরালো অবস্থান নিয়েছিলেন।
কিন্তু হোয়াইট হাউসের এক মুখপাত্র জানান, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত স্বার্থকেই সর্বাগ্রে বিবেচনা করেন। “তিনি শান্তির লক্ষ্যে দৃঢ় ছিলেন,” বলেন হোয়াইট হাউস কর্মকর্তা।
ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা:
এই যুদ্ধবিরতি কতটা স্থায়ী হবে তা এখনও অনিশ্চিত। কিন্তু বাজারে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া, বিনিয়োগকারীদের আস্থা এবং আন্তর্জাতিক মহলে স্বস্তির হাওয়া ইঙ্গিত দেয় যে এই মুহূর্তে অন্তত যুদ্ধের ভয় কিছুটা কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প যদি এই শান্তি প্রক্রিয়াকে দীর্ঘমেয়াদে রূপ দিতে পারেন, তাহলে তাঁর কূটনৈতিক দক্ষতা এবং মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে একটি নতুন দিকচিহ্ন তৈরি হবে।
ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধবিরতি শুধু দুই দেশের নয়, গোটা বিশ্বের নিরাপত্তা ও অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে। এদিকে ইসরায়েলের স্টক মার্কেটে এর ইতিবাচক প্রভাব চোখে পড়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাহসী কূটনৈতিক প্রয়াস এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ বর্তমান পরিস্থিতিকে আরও স্থিতিশীল করার পথে এগিয়ে নিচ্ছে।