ক্যানোলা’কে বাঁচাতেই সরষের তেল বাতিল আমেরিকার? মার্কিনীদের গোপন চক্রান্ত ফাস!

যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন। রবীন্দ্রনাথের কবিতার এই কথাগুলোকে মাথায় রেখে, আমেরিকায় সরষের তেল বাতিলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূত,…

Save Canola

যেখানে দেখিবে ছাই, উড়াইয়া দেখ তাই, পাইলেও পাইতে পারো অমূল্য রতন। রবীন্দ্রনাথের কবিতার এই কথাগুলোকে মাথায় রেখে, আমেরিকায় সরষের তেল বাতিলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা ভূত, বা আরও ভালোভাবে বলতে গেলে আসল কারণ খোঁজার শুরু। আর তাতেই খোঁজ পাওয়া গেল এক চাঞ্চল্যকর সত্যের। আদতে কোনও স্বাস্থ্য নয়, ব্যাপারটা আসলে মুনাফার। আর মুনাফার জন্যই গল্পের গরুকে গাছে তুলে দিয়েছে মার্কিন ফুড সেফটি অথরিটি।

যেখানে সরষের তেল আমাদের হৃদয়ের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী বলে বারংবার চেঁচিয়ে যাচ্ছেন ভারতের ডাক্তারবাবুরা। সেখানেই পুরো ৩৬০° উল্টো পথে হেটে আমেরিকার বিশেষজ্ঞদের বিশেষ ঘোষণা ছিল পুরোটাই নাকি একেবারে অস্বাস্থ্যকর। হার্টের একেবারে নাকি দফারফা হতে পারে, যদি নিয়মিত সর্ষের তেল খাওয়া হয়। শুনে অনেকেই তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলেন। আমাদের অনেকের বাড়িতেই অনেক বয়স্ক মানুষজন রয়েছেন, যারা সরষের তেলের রান্না খেয়ে দিব্যি সুস্থ রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই রীতিমতো সু-স্বাস্থ্যের অধিকারী। সবমিলিয়ে চূড়ান্ত কনফিউশন ভারতীয় লোকজনদের মধ্যে। আর আমাদের বাঙালিদের ঘরে সর্ষের তেল একটা অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই দুশ্চিন্তার মেঘ রীতিমতন ঘন কালো হয়ে জমে উঠেছিল ঘরের গিন্নীদের কপালে।

   

কিন্তু এবার জানা গেল আসল কাহিনী। কাহিনীর নাম ‘ক্যানোলা’! কী এই ক্যানোলা? এটাকে অনেকটা সরষেরই খুড়তুতো ভাই বলা যেতে পারে। অর্থাৎ একই গোত্রের একটি অন্য প্রজাতির গাছ। সরষের মতো এটিও একটি তৈলবীজ। আমেরিকায় এই গাছের বেশ ভালোই ফলন হয়। তবে সরষের তেলের রান্না, এই ক্যানোলা তেলের তুলনায় অনেক বেশি সুস্বাদু হয়। তাই আমেরিকার আম-জনতার সরষের তেলের ব্যবহারের প্রতি ঝোক থাকাটাই খুব স্বাভাবিক। আর সেই জন্যই ক্যানোলা তেলের ব্যবহার বৃদ্ধি করতে এবং সরষের তেলের আমদানি কমাতে মার্কিনী সংস্থাগুলি রীতিমতো পরিকল্পনা করে এই ধরনের খবর ছড়িয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

যদিও সরষের তেলে থাকা ইরুসিক অ্যাসিড সম্পর্কে যে সমস্ত নেতিবাচক কথা বলা হচ্ছে, তার ব্যাপারে পুরোপুরি নাকি নিশ্চিত হওয়া যায়নি! কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরুসিক অ্যাসিডের খারাপ প্রভাবকে হাতিয়ার করেই সরষের তেলকে বাতিল ঘোষণা করে দিয়েছে মার্কিন সরকার। ভারতীয় পুষ্টিবিদেরা অবশ্য এর পিছনে ব্যবসায়িক স্বার্থ ছাড়া আর অন্য কোন অঙ্ক দেখতে পাচ্ছেন না।

তাই এখনই আমাদের বাঙালিদের বা ভারতীয়দের যারা সর্ষের তেলের রান্নার বড়সড় ফ্যান, তাদের চিন্তিত হওয়ার কোন কারণ নেই। তার থেকেও বড় বিষয়, দুটো আলাদা মহাদেশে অবস্থিত ভিন্ন দুটো দেশের আলাদা খাদ্যাভাস, আলাদা জিনগত চরিত্র। সেখানে স্বাস্থ্যের উপরে প্রভাবও আলাদা রকম হতেই পারে। আমরা যারা এই তেল খেতে অভ্যস্ত, এখনই এই সরষের তেল খাওয়া বন্ধ করে গেল গেল রব তোলার কোন কারণ নেই। এমনটাই বলছেন খ্যাতনামা ভারতীয় পুষ্টিবিদরা।

তবে চিকিৎসকরা যে কথা বারংবার বলেন, রান্নায় তেলের মাত্রাটা কিন্তু কমাতেই হবে। সরষের তেল থেকে ভয় নেই বলে গাদা গুচ্ছের সরষের তেল যদি খাওয়া শুরু করবেন না। তা নাহলে কিন্তু আপনার স্বাস্থ্যের বারোটা বাজা থেকে কোন ডাক্তার কিংবা কোন পুষ্টিবিদ, কেউই আপনাকে রক্ষা করতে পারবে না।