আন্তর্জাতিক বাজারে দাপট দেখাচ্ছে ভারতের হুইস্কি INDRI

আজকের বিশ্বে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্কচ ও জাপানি হুইস্কির প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সেখানে ভারতীয় হুইস্কি একটি অসাধারণ উত্থানের পথে চলেছে। বিশেষ করে, হিমালয় পাদদেশে অবস্থিত…

Indri Whisky’s Global Rise India’s Single Malt Dominates Markets

আজকের বিশ্বে, যেখানে আন্তর্জাতিক বাজারে স্কচ ও জাপানি হুইস্কির প্রভাব সবচেয়ে বেশি, সেখানে ভারতীয় হুইস্কি একটি অসাধারণ উত্থানের পথে চলেছে। বিশেষ করে, হিমালয় পাদদেশে অবস্থিত হরিয়ানার ইন্দ্রি গ্রাম থেকে উৎপন্ন একটি নতুন ব্র্যান্ড, ‘ইন্দ্রি'(INDRI), আন্তর্জাতিক মদের বাজারে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। আন্তর্জাতিক ওয়াইন ও স্পিরিটস রেকর্ড (IWSR) এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ইন্দ্রি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যা বছরের পর বছর ৫৯৯% বৃদ্ধি দেখিয়েছে এবং মাত্র দুই বছরে ১ লক্ষের বেশি কেস বিক্রি করেছে। এই অসাধারণ সাফল্য ভারতীয় হুইস্কি শিল্পের জন্য একটি গর্বের বিষয় হয়ে উঠেছে, যা কেবল দেশীয় বাজারে নয়, বিশ্বব্যাপী মদপানের সংস্কৃতিতে একটি নতুন মাইলফলক স্থাপন করেছে।

ইন্দ্রি হুইস্কি পিক্কাডিলি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের তৈরি, যিনি হরিয়ানায় তার উৎপাদন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এই কোম্পানি তার ত্রিগুণ কাস্ক ম্যাচারেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি অনন্য স্বাদ তৈরি করেছে, যেখানে বোর্বন, শেরি এবং ভার্জিন ওক কাস্কে হুইস্কিটি পরিপক্ক করা হয়। হিমালয়ের শীতল আবহাওয়া এবং প্রাকৃতিক পরিবেশে এই ম্যাচারেশন প্রক্রিয়াটি একটি বিশেষ আকর্ষণ যোগ করেছে, যা ইন্দ্রিকে বিশ্ববাজারে আলাদা করে তুলেছে। ২০২৪ সালে, ইন্দ্রি ২.০৪ মিলিয়ন বোতল বিক্রি করে, যার মধ্যে ভারতের মধ্যে ১.২৪ লক্ষ কেস এবং বিদেশে ৪৬,০০০ কেস অন্তর্ভুক্ত, যা এটিকে ভারতের সর্বাধিক বিক্রিত সিঙ্গল মল্ট হুইস্কি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে।

   

এই সাফল্যের পেছনে শুধুমাত্র উৎপাদন প্রক্রিয়া নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইন্দ্রি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ২৫টির বেশি পুরস্কার জিতেছে, যার মধ্যে বিশ্ব হুইস্কি পুরস্কারে ‘বেস্ট ইন্ডিয়ান সিঙ্গল মল্ট’ এবং নিউ ইয়র্ক ওয়ার্ল্ড ওয়াইন অ্যান্ড স্পিরিটস কম্পিটিশনে স্বর্ণ পদক অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে, ইন্দ্রির দীপাবলি কালেক্টর’স এডিশন ‘বেস্ট হুইস্কি ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ হিসেবে সম্মানিত হয়েছে, যা স্কচ ও আমেরিকান প্রতিদ্বন্দ্বীদের উপরে উঠে দাঁড়িয়েছে। এই সম্মানগুলো ভারতীয় হুইস্কি শিল্পের গৌরব বাড়িয়েছে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রিমিয়াম ইন্ডিয়ান সিঙ্গল মল্টের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে।

তবে, ইন্দ্রির এই সাফল্যের সঙ্গে একটি বিতর্কিত ইতিহাসও জড়িত রয়েছে। পিক্কাডিলি অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজের সঙ্গে যুক্ত মানব শর্মা, যিনি ১৯৯৯ সালে মডেল জেসিকা লালের হত্যার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়ে ২০২০ সালে মুক্তি পান, এই ব্র্যান্ডের পেছনে কেন্দ্রীয় চরিত্র। এই তথ্যটি অনেকের মনে নৈতিক প্রশ্ন তুলেছে—একজন অপরাধীর সঙ্গে যুক্ত একটি ব্র্যান্ড কীভাবে এত বড় সাফল্য অর্জন করতে পারে? এই বিতর্ক সামাজিক মাধ্যমে তীব্র আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে, যেখানে কেউ কেউ ইন্দ্রির স্বাদের প্রশংসা করছেন, আবার অনেকে এর পেছনে লুকানো ইতিহাসের প্রতিবাদ করছেন।

Advertisements

বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণ থেকে, ২০২১ সালে ‘জার্নাল অফ অ্যাগ্রিকালচারাল অ্যান্ড ফুড কেমিস্ট্রি’তে প্রকাশিত একটি গবেষণা পড়লে বোঝা যায়, হিমালয়ের তুষারযুক্ত পরিবেশে ত্রিগুণ কাস্ক ম্যাচারেশন প্রক্রিয়া হুইস্কির স্বাদে জটিলতা ও গভীরতা যোগ করে। এই প্রক্রিয়ায় উচ্চ আলকোহল ইস্টার এবং অন্যান্য যৌগে রূপান্তরিত হয়, যা ইন্দ্রিকে অন্যান্য হুইস্কি থেকে আলাদা করে। এই বিজ্ঞানীয় সুবিধা, যৌগে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং বাজারের চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য, ইন্দ্রির জনপ্রিয়তা বাড়াতে সাহায্য করেছে।

ভারতীয় হুইস্কি শিল্পের এই উত্থান একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ২০২১-২২ সালে ইন্ডিয়ান সিঙ্গল মল্টের বিক্রি ১৪৪% বেড়েছে, যা স্কচ হুইস্কির তুলনায় অনেক বেশি। এই প্রবণতা চলমান রয়েছে, এবং ইন্দ্রি এর কেন্দ্রে রয়েছে। তবে, এই সাফল্যের সঙ্গে সামাজিক দায়িত্ব ও নৈতিকতার প্রশ্নও জড়িত। ভবিষ্যতে, ইন্দ্রি কীভাবে এই বিতর্কগুলো মোকাবিলা করবে এবং তার ব্র্যান্ড ইমেজকে বজায় রাখবে, তা একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

সারাংশে বলা যায়, ইন্দ্রি শুধু একটি হুইস্কি ব্র্যান্ড নয়; এটি ভারতীয় উদ্যম ও সংস্কৃতির একটি প্রতীক। তবে, এর পেছনে লুকানো গল্পটি আমাদের সফলতার সংজ্ঞা পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করছে। আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতের এই দাপট অবশ্যই গর্বের বিষয়, তবে এর সঙ্গে সামাজিক ও নৈতিক দায়িত্বও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।