ভারতে স্টার্টআপ ও ইউনিকর্নের জয়যাত্রা অব্যাহত, অর্থমন্ত্রীর প্রশংসা

FM Nirmala Sitharaman Hints at Potential Changes in GST Rates

নতুন ভারতের প্রতিচ্ছবি আজকের যুবসমাজ—উদ্যোগ, উদ্ভাবন ও উন্নয়নের পথে দৃঢ় পদক্ষেপ। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন (Nirmala Sitharaman) শুক্রবার জানিয়েছেন, গত ১১ বছরে দেশে ১.৭৬ লক্ষ স্টার্টআপ গড়ে উঠেছে, যার মধ্যে রয়েছে ১১৮টি ইউনিকর্ন—অর্থাৎ, এমন স্টার্টআপ যাদের মূল্যায়ন এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।

Advertisements

অর্থমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ‘X’-এ এক পোস্টে লেখেন, “ভারতের যুবসমাজ স্টার্টআপ গড়ে তুলছে এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে।” তিনি আরও বলেন, “গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে যুবসমাজের জন্য যে কাজ হয়েছে, এটি তারই এক ঝলক।”

Advertisements

অন্যদিকে, পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি জানিয়েছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বিপুল উন্নয়ন হয়েছে গত এক দশকে। তাঁর কথায়, এই সময়কালে দেশে নতুন করে ৭টি আইআইটি (IIT), ৮টি আইআইএম (IIM) এবং ১৬টি এইমস (AIIMS) স্থাপিত হয়েছে।

দক্ষতা ও কর্মসংস্থান
হরদীপ সিং পুরি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী কৌশল বিকাশ যোজনার (PMKVY) অধীনে ইতিমধ্যেই ১.৬ কোটির বেশি যুবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ১.৬ লক্ষ স্টার্টআপ থেকে সরাসরি ১৭.৬ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেন, “৩০ হাজারের বেশি বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়েছে এবং সেখানে ৩০ লক্ষের বেশি ছাত্রছাত্রী বর্তমানে পাঠরত।”

স্টার্টআপকে সহায়তায় ঋণ ও ইন্টার্নশিপ
মন্ত্রী জানান, গত ১১ বছরে ৫২.৫ কোটিরও বেশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের ‘মুদ্রা’ ঋণ দেওয়া হয়েছে যা জামানত মুক্ত। এই ঋণের পরিমাণ ১ লক্ষ কোটিরও বেশি। এর মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার পথে অগ্রসর হয়েছেন বহু তরুণ উদ্যোক্তা।

এছাড়াও, প্রধানমন্ত্রী ইন্টার্নশিপ প্রকল্পের অধীনে দেশের শীর্ষ ৫০০টি সংস্থায় ১ কোটি যুবককে ইন্টার্নশিপের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে, ৪৯০টিরও বেশি নতুন বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয়েছে যাতে উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

স্টার্টআপদের জন্য ঋণ গ্যারান্টি স্কিমে সংশোধন
গত মাসে শিল্প ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য প্রচার বিভাগ (DPIIT) স্টার্টআপের জন্য ক্রেডিট গ্যারান্টি স্কিম (CGSS)-এ বড়সড় সংশোধন আনে। এই পরিবর্তনের ফলে এখন থেকে প্রতি ঋণগ্রহীতার জন্য গ্যারান্টি কভার সর্বোচ্চ ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে (পূর্বে ছিল ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত)।

সরকার জানিয়েছে, ঋণ অমান্য (ডিফল্ট) হলে ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্যারান্টি কভার দেওয়া হবে এবং ১০ কোটির ঊর্ধ্বে ঋণের ক্ষেত্রে ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত গ্যারান্টি কভার মিলবে।

এই পদক্ষেপগুলি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আত্মনির্ভর ভারতের স্বপ্নের বাস্তবায়নকে ত্বরান্বিত করবে বলে মনে করছে কেন্দ্র। প্রযুক্তিনির্ভর স্টার্টআপগুলির জন্য আরও সহজে অর্থপ্রাপ্তির পথ খুলে যাবে এবং গবেষণা ও উদ্ভাবনের সুযোগ বৃদ্ধি পাবে।

উদ্ভাবনভিত্তিক অর্থনীতির দিকে
সরকারের মতে, এই সম্প্রসারিত স্কিমটি বিশেষভাবে নতুন ও উদ্ভাবনী উদ্যোগের জন্য রূপান্তরমূলক হবে। কারণ, এখন আর বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে স্টার্টআপে ঋণ দেওয়ার ঝুঁকি তেমন থাকবে না। ফলে ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও বেশি করে স্টার্টআপে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী হবে।

এর ফলে স্টার্টআপরা আরও বেশি সময় ধরে গবেষণার কাজ চালাতে পারবে, প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য ও সেবা তৈরি করতে পারবে এবং আন্তর্জাতিক স্তরে প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে পারবে।

ভবিষ্যতের দিশা
ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম আজ বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ এবং দ্রুতবর্ধনশীল। একদিকে যখন দেশে যুবসমাজের সংখ্যা বেশি, অন্যদিকে সরকারের সহায়তামূলক নীতিগুলি তরুণদের নিজস্ব উদ্যোগে নামতে উৎসাহ দিচ্ছে। ১১৮টি ইউনিকর্ন এর জ্বলন্ত প্রমাণ।

সব মিলিয়ে, কেন্দ্রের এই উদ্যোগ এবং যুবকদের অংশগ্রহণে গড়ে উঠছে এক নতুন অর্থনৈতিক কাঠামো—যেখানে কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও আত্মনির্ভরতার হাত ধরেই গড়ে উঠবে ‘নতুন ভারত’।