আমেরিকার আমদানিতে ভারতের অংশ জানলে অবাক হবেন

India’s Share in US Imports: বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম শক্তি যুক্তরাষ্ট্র (US) বৈশ্বিক বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও পরিষেবা আমদানি করে। বিশ্বের নানা দেশ…

Future of India US economic ties

India’s Share in US Imports: বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম বৃহত্তম শক্তি যুক্তরাষ্ট্র (US) বৈশ্বিক বাজার থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য ও পরিষেবা আমদানি করে। বিশ্বের নানা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের এই বিশাল বাজারে নিজেদের রপ্তানি করে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা করে। তবে চমকপ্রদ তথ্য হলো—এই বিশাল আমদানি তালিকায় ভারতের অংশ এখনো তুলনামূলকভাবে কম।

সম্প্রতি প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (EU) সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানির ১৮.৫ শতাংশ সরবরাহ করে, যা তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। এর পরে রয়েছে চীন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ১৩.৪ শতাংশ আমদানির যোগান দেয়।

   

তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে জাপান, যারা ৪.৫ শতাংশ আমদানির অংশীদার। এরপর যথাক্রমে ভিয়েতনাম (৪.২%), দক্ষিণ কোরিয়া (৪.০%), তাইওয়ান (৩.৬%), এবং তারপরে ভারত, যার অংশ মাত্র ২.৭%। যুক্তরাজ্য (২.১%) ভারতের ঠিক পেছনেই অবস্থান করছে।

ভারতের ২.৭ শতাংশ অংশ দেখলে হয়তো অনেকের চোখ কপালে উঠবে। বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও ভারতের মার্কিন বাজারে অংশ এখনও বড় অর্থে বিস্তৃত হয়নি। অথচ ভারতের উৎপাদন শিল্প, তথ্যপ্রযুক্তি খাত, টেক্সটাইল, ওষুধশিল্প এবং কৃষিপণ্য মার্কিন বাজারে চাহিদা পাচ্ছে।

কেন ভারত পিছিয়ে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতের কিছু কাঠামোগত সমস্যা এবং নীতিগত সীমাবদ্ধতা এর মূল কারণ। একদিকে, ভারত এখনও অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ আমদানিশুল্ক এবং কঠোর রপ্তানি নীতির মধ্যে আবদ্ধ। অপরদিকে, সরবরাহ শৃঙ্খলার সমস্যাও অনেক সময় মার্কিন ক্রেতাদের ভারত থেকে পণ্য আমদানিতে অনাগ্রহী করে তুলেছে।

চীন এবং ভিয়েতনামের মতো দেশগুলি যেখানে উৎপাদন খরচ কমিয়ে দ্রুত সরবরাহ করতে পারছে, সেখানে ভারত কিছুটা পিছিয়ে পড়ছে। বিশেষ করে ইলেকট্রনিক্স, মেশিনারি ও ভোক্তা পণ্যের ক্ষেত্রে চীনের আধিপত্য এখনও মার্কিন বাজারে প্রবল।

ভারতের সম্ভাবনা

তবে, চিত্র বদলাচ্ছে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’, ‘প্রোডাক্ট লিঙ্কড ইনসেন্টিভ (PLI) স্কিম’ এবং বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে ভারত তার উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দিয়েছে। মার্কিন কোম্পানিগুলিও এখন চীনের বিকল্প সরবরাহ চেইন খুঁজছে, যার ফলে ভারত, ভিয়েতনাম ও মেক্সিকোর মতো দেশগুলি সুবিধা পাচ্ছে।

বিশেষ করে প্রযুক্তি, ফার্মাসিউটিক্যাল, টেক্সটাইল এবং গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে ভারতের রপ্তানি ক্রমবর্ধমান। টিকটক নিষিদ্ধ হওয়ার পরে ভারতের ডিজিটাল পণ্য ও প্রযুক্তি মার্কিন বাজারে আরো প্রবেশ করছে। একইসঙ্গে, ভারতীয় আইটি পরিষেবা (TCS, Infosys, Wipro) ও স্বাস্থ্যসেবা পণ্যও আমেরিকায় ব্যাপক চাহিদা পাচ্ছে।

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা

বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি ভারত তার অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধান করে, আমদানিশুল্ক কমায় এবং দ্রুত সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারে, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির তালিকায় ভারতের অংশ ৫ শতাংশ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে।

বিশ্বের বৃহত্তম গণতন্ত্র ও বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এবং প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তি চুক্তি ইঙ্গিত দিচ্ছে, দুই দেশই একে অপরের ওপর নির্ভরতা বাড়াতে প্রস্তুত।

তাই বলা যায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতের অংশ হয়তো ছোট মনে হতে পারে, কিন্তু ভবিষ্যতে এই অংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের জন্য এটি একটি সুবর্ণ সুযোগ—বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির বাজারে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার।