ভারতে গৃহস্থলীর রোজকার খাবার খরচ বৃদ্ধির রেকর্ড

আজকের দিনে, যখন আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মধ্যে অর্থনৈতিক চাপের কথা ভাবি, তখন ভারতের গৃহস্থলীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে তাদের রোজকার খাবারের খরচের…

India's Household Food Costs Hit Record High in Aug 202

আজকের দিনে, যখন আমরা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার মধ্যে অর্থনৈতিক চাপের কথা ভাবি, তখন ভারতের গৃহস্থলীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠেছে তাদের রোজকার খাবারের খরচের বৃদ্ধি (Household Food Costs)। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট ২০২৫ সালে গৃহে তৈরি শাকাহারী থালির খরচ ৮ মাসের সর্বোচ্চ স্তরে পৌঁছে গেছে, যা প্রতি থালা ২৯.১ টাকা। এই তথ্যটি ক্রিসিল (Crisil) নামক একটি নির্ভরযোগ্য সংস্থা থেকে প্রকাশিত হয়েছে, যা ভারতের অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই বৃদ্ধি গৃহস্থলীদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে যেহেতু খাদ্যশস্য ও প্রয়োজনীয় উপাদানের দামের ঊর্ধ্বগতি সামান্য আয়ের পরিবারদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে।

খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির পটভূমি
খাদ্য মুদ্রাস্ফীতির এই বৃদ্ধির পেছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, আগস্ট মাসে মৌসুমি প্রভাব ও ফসল উৎপাদনে অস্বাভাবিকতার কারণে মৌলিক উপাদান যেমন ডাল, চাল, শাকসবজি এবং তরকারির দাম বেড়েছে। বিশেষ করে টমেটো ও পেঁয়াজের দাম গত বছরের তুলনায় যথাক্রমে ২০% এবং ৩৫% বেড়েছে, যা শাকাহারী থালির খরচ বাড়ার একটি প্রধান কারণ। এছাড়াও, চাল ও ডালের দামও গত বছরের তুলনায় ১৪% এবং ২১% বেড়েছে, যা গৃহস্থলীদের বাজেটে চাপ সৃষ্টি করেছে। ক্রিসিলের রিপোর্ট অনুযায়ী, এই দাম বৃদ্ধি বিশেষ করে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব এবং পশ্চিম ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে গণনা করা হয়েছে, যা এই তথ্যের নির্ভরযোগ্যতা বাড়ায়।

   

সংঘাতময় তথ্য: দাম কমার সংবাদ
প্রথম দৃষ্টিতে এই খরচের বৃদ্ধি ভয়ঙ্কর মনে হলেও, সম্প্রতি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ সালে এবিপি লাইভের একটি রিপোর্ট শাকাহারী থালির দাম ৭% কমেছে বলে জানিয়েছে। এই কমার পেছনে পেঁয়াজ, আলু এবং ডালের দাম কিছুটা হ্রাস পাওয়া উল্লেখ করা হয়েছে। এই দ্বন্দ্বময় তথ্য গবেষকদের এবং গৃহস্থলীদের মনে প্রশ্ন তুলেছে—আসলে কোন তথ্যটি সঠিক? এই পার্থক্যের কারণ হতে পারে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে দামের ভিন্নতা বা তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতিতে পার্থক্য। তবে, এই দ্বিমতের মধ্যেও একটি সত্য স্পষ্ট—খাদ্য মুদ্রাস্ফীতি একটি জটিল বিষয়, যা অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন প্রভাব ফেলছে।

ঐতিহ্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক চাপ
ভারতীয় থালি শুধুমাত্র একটি খাবারের প্লেট নয়, এটি আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের একটি প্রতীক। আয়ুর্বেদিক ঐতিহ্য অনুযায়ী, একটি সম্পূর্ণ থালিতে মিষ্টি, লবণাক্ত, টক, তীক্ত, কটু এবং কষা ছয়টি রসের সমন্বয় থাকা উচিত, যা শরীরের জন্য স্বাস্থ্যকর। প্রাচীনকাল থেকে, ইন্দুস সভ্যতা থেকে শুরু করে পেইন্টেড গ্রে ওয়্যার সংস্কৃতি (খ্রিস্টপূর্ব ১২০০-৬০০) পর্যন্ত, থালির ধারণা বিকশিত হয়েছে। প্রখ্যাত প্রত্নতত্ত্ববিদ বি.বি. লালের মতে, পেইন্টেড গ্রে ওয়্যার থালি, বাটি এবং লোটা একটি পরিপূর্ণ খাবার সেট হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যা আজকের থালির সাথে মিলে। তবে, আজকের এই ঐতিহ্যবাহী থালি অর্থনৈতিক চাপের মুখোমুখি হচ্ছে, যা গত ৩০০০ বছর ধরে সাম্রাজ্য, আক্রমণ এবং বিশ্বায়নকে অতিক্রম করে এসেছে।

Advertisements

গৃহস্থলীদের প্রভাব ও সমাধান
এই দাম বৃদ্ধি গৃহস্থলীদের জন্য বিশেষভাবে চিন্তার বিষয়, কারণ খাদ্য বাজেট তাদের মোট ব্যয়ের একটি বড় অংশ জুড়ে। বিশেষ করে শহরের মধ্যবিত্ত পরিবার এবং গ্রামীণ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের পরিবারদের জন্য এই চাপ আরও বেশি। তবে, কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করেন, স্থানীয় বাজার থেকে সরাসরি ক্রয়, সাময়িক ফসলের উপর নির্ভরশীলতা বাড়ানো এবং বাড়িতে সাধারণ উপাদানের চাষ এই সমস্যা মোকাবিলায় সাহায্য করতে পারে।

ভারতে গৃহস্থলীর রোজকার খাবারের খরচের বৃদ্ধি একটি জটিল সমস্যা, যা অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিক থেকে বিবেচনা করতে হবে। ২৯.১ টাকা প্রতি থালার খরচ যদিও কিছু মতে সস্তা মনে হতে পারে, তবুও এটি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় গভীর প্রভাব ফেলছে। সরকারি নীতি, বাজার নিয়ন্ত্রণ এবং গৃহস্থলীদের সচেতনতা একসঙ্গে কাজ করলে এই চ্যালেঞ্জ অতিক্রম করা সম্ভব। ভারতীয় থালি, যা সহস্র বছর ধরে আমাদের সংস্কৃতি ধরে রেখেছে, আজকের দিনে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার একটি প্রতীক হয়ে উঠতে পারে, যদি আমরা সঠিক পদক্ষেপ নিই।