রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়া (RBI)-র বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, দেশে প্রচলিত ই-রূপির (Digital Currency) পরিমাণ ২০২৫ সালের মার্চ শেষে দাঁড়িয়েছে ১,০১৬ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে এই অঙ্ক ছিল মাত্র ২৩৪ কোটি টাকা।
২০২২ সালের নভেম্বরে CBDC প্রথমবারের মতো চালু হয়েছিল, প্রথমে এটি হোলসেল পর্যায়ে চালু হয় এবং পরবর্তীতে খুচরো (রিটেল) পর্যায়ে তা বিস্তৃত করা হয়। ই-রূপি ব্যবস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ছিল আন্তর্জাতিক লেনদেনে স্বচ্ছতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, বিশেষত যেখানে বিটকয়েন বা অন্যান্য বেসরকারি ডিজিটাল মুদ্রার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে।
RBI-এর বার্ষিক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, “রিজার্ভ ব্যাঙ্ক দ্বিপাক্ষিক ও বহুপাক্ষিক স্তরে ক্রস-বর্ডার CBDC পাইলট চালুর পরিকল্পনা করছে, যাতে সময় বাঁচে, লেনদেন আরও স্বচ্ছ হয় এবং দক্ষতা বাড়ে।”
দ্বিপাক্ষিক পর্যায়ে কয়েকটি নির্বাচিত দেশের সঙ্গে এই পাইলট চালুর জন্য প্রযুক্তিগত দিক ও প্রয়োগযোগ্য ক্ষেত্র নিয়ে রোডম্যাপ প্রস্তুত করা হয়েছে। একইসঙ্গে BIS (Bank for International Settlements) ইনোভেশন হাবের অধীনে CBDC-সংক্রান্ত বহুপাক্ষিক উদ্যোগেও অংশগ্রহণের পরিকল্পনা করছে RBI।
বর্তমানে ই-রূপির মোট ১,০১৬ কোটি টাকার মধ্যে সবচেয়ে বড় অংশ, অর্থাৎ ৮৫৭ কোটি টাকা, রয়েছে ৫০০ টাকা মূল্যমানের মুদ্রায়। এছাড়া ২০০ টাকা (৯১ কোটি টাকা) ও ১০০ টাকা (৩৮ কোটি টাকা) মূল্যমানেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ই-রূপি রয়েছে।
ই-রূপি রিটেল এবং হোলসেল উভয় পাইলট প্রকল্পই বর্তমানে কার্যকর। FY25 অর্থবর্ষে ই-রূপি-রিটেল পাইলটের আওতায় ব্যক্তি-থেকে-ব্যক্তি (P2P) এবং ব্যক্তি-থেকে-বণিক (P2M) লেনদেনের পাশাপাশি অফলাইন লেনদেন এবং প্রোগ্রামযোগ্যতার সুবিধাও যুক্ত করা হয়েছে। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এই পাইলটে অংশ নিচ্ছে ১৭টি ব্যাঙ্ক এবং ৬০ লক্ষ ব্যবহারকারী।
ব্যবহারকারী সংখ্যাকে আরও বাড়ানোর জন্য RBI এবার নন-ব্যাঙ্ক সংস্থাগুলোকেও ই-রূপি ওয়ালেট অফার করার অনুমতি দিয়েছে। একইসঙ্গে, হোলসেল ই-রূপির পরিধিও সম্প্রসারিত করে চারটি স্ট্যান্ডঅ্যালোন প্রাইমারি ডিলারকে যুক্ত করা হয়েছে।
প্রোগ্রামযোগ্য ই-রূপির বিভিন্ন প্রয়োগ ক্ষেত্রও উল্লেখযোগ্য। এর মধ্যে রয়েছে – কৃষকদের কার্বন ক্রেডিট উৎপাদনের ভিত্তিতে সরাসরি আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের আওতায় ভাড়াটে কৃষকদের ঋণ প্রদান। কিছু ব্যাঙ্ক কর্মীদের জন্য জ্বালানি ও আহারের ভাতা সরাসরি ই-রূপির মাধ্যমে দিচ্ছে।
ওড়িশা সরকার ইতিমধ্যেই ই-রূপির মাধ্যমে সুভদ্রা যোজনার অধীনে ৮৮,০০০ উপভোক্তাকে অর্থ প্রদান করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক মন্ত্রণালয় এবং বিভিন্ন রাজ্য সরকার সুবিধাভোগীদের নির্দিষ্ট খাতে টাকা খরচের নিশ্চয়তা দিতে ই-রূপির প্রোগ্রামযোগ্য বৈশিষ্ট্যকে কাজে লাগাতে আলোচনা চালাচ্ছে বলে RBI জানিয়েছে।
এই নতুন ধরণের মুদ্রা ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো – ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা), ট্র্যাকেবিলিটি (অনুসরণযোগ্যতা) এবং নির্দিষ্ট খরচের নিয়ন্ত্রণ। সরকার চায়, ভর্তুকি বা ভাতা প্রাপক যাতে ঠিক নির্দিষ্ট খাতে ওই অর্থ ব্যয় করেন। যেমন, কৃষকদের জন্য যে ভর্তুকি বরাদ্দ হবে, তা যেন তারা কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহার করেন, সেটার নিশ্চয়তা দিতে পারবে CBDC।
বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশের মত ভারতও এখন ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থায় একধাপ এগিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিকভাবে দ্রুত এবং স্বল্প ব্যয়ে টাকা পাঠানোর সুযোগ করে দিতে RBI এর ক্রস-বর্ডার CBDC পাইলট ভবিষ্যতের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে চলেছে।
সার্বিকভাবে ই-রূপির এই দ্রুত প্রসার ও প্রযুক্তিগত উন্নয়ন ভারতের ডিজিটাল অর্থনীতির ভবিষ্যতের রূপরেখা দিচ্ছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই উদ্যোগ একদিকে যেমন আর্থিক লেনদেনের নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছে, তেমনি জনসাধারণের মধ্যেও একটি ডিজিটাল লেনদেন-ভিত্তিক মানসিকতা গড়ে তুলছে।