কেন্দ্রীয় সরকার শনিবার বর্জ্য থেকে জ্বালানি (Waste-to-Energy) প্রকল্পের জন্য জাতীয় জৈব-জ্বালানি কর্মসূচির অধীনে নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। এই নতুন নির্দেশিকা জৈব-বর্জ্য থেকে জ্বালানি উৎপাদন খাতের জন্য আরও দক্ষ, স্বচ্ছ এবং কর্মক্ষমতাভিত্তিক পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রণীত।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিভিন্ন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে, আর্থিক সহায়তা দ্রুত দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং উদ্ভিদের (plants) কার্যকারিতার সাথে আর্থিক সহায়তাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বেসরকারি ও সরকারি খাতে, বিশেষত ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্প (MSMEs)-এর জন্য ব্যবসা সহজ করা হবে বলে জানিয়েছে নবীকরণযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রক (MNRE)।
নতুন কাঠামোর অধীনে, কাগজপত্রের বোঝা কমানো এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করা হয়েছে। এর ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো আরও বেশি পরিমাণে কমপ্রেসড বায়োগ্যাস (CBG), বায়োগ্যাস এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে পারবে। এই পরিবর্তন ভারতের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিশেষ করে খড় (stubble), শিল্প বর্জ্য প্রভৃতির পুনর্ব্যবহার এবং ২০৭০ সালের মধ্যে নেট-জিরো কার্বন নিঃসরণ লক্ষ্য অর্জনের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
নতুন নির্দেশিকার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো কেন্দ্রীয় আর্থিক সহায়তা (CFA)-এর প্রদানের পদ্ধতিতে পরিবর্তন। পূর্বে, কোনও Waste-to-Energy প্রকল্পকে ৮০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জনের পরেই আর্থিক সহায়তা দেওয়া হতো। এটি অনেক সময় প্রকল্প উন্নয়নকারীদের জন্য চ্যালেঞ্জের হয়ে উঠত। মন্ত্রকের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “উৎপাদকদের ৮০ শতাংশ উৎপাদন অর্জনের চ্যালেঞ্জ বিবেচনা করে, নতুন নির্দেশিকায় CFA প্রদানের ক্ষেত্রে নমনীয় ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।”
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, এখন থেকে CFA দুই ধাপে দেওয়া হবে। প্রথম ধাপে, মোট CFA-র ৫০ শতাংশ প্রদান করা হবে, যখন রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ (State Pollution Control Board) থেকে “Consent to Operate” সনদ পাওয়া যাবে। তবে এই অর্থ ব্যাংক গ্যারান্টির ভিত্তিতে দেওয়া হবে। দ্বিতীয় ধাপে বাকি CFA তখনই দেওয়া হবে, যখন প্রকল্পটি তার রেটেড ক্ষমতার ৮০ শতাংশ বা সর্বাধিক CFA-এর জন্য যোগ্য ক্ষমতার মধ্যে যেটি কম, সেটি অর্জন করবে।
যদি কোনও প্রকল্প ৮০ শতাংশ উৎপাদন সক্ষমতা অর্জন করতে না পারে, তাহলেও নির্দিষ্ট শর্তে প্রো-রাটা ভিত্তিতে CFA প্রদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো, যদি কোনও প্ল্যান্টের প্ল্যান্ট লোড ফ্যাক্টর (PLF) ৫০ শতাংশের কম হয়, তাহলে CFA দেওয়া হবে না। এই পরিবর্তনগুলি প্রকল্প উন্নয়নকারীদের জন্য বাস্তবসম্মত চ্যালেঞ্জগুলোকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রকল্পের আর্থিক স্থায়িত্ব এবং কার্যকারিতা বজায় রাখতে সহায়তা করে।
নতুন নির্দেশিকায় আরও একটি বড় সুবিধা হলো, প্রকল্প উন্নয়নকারীরা CFA দাবি করার জন্য কমিশনিংয়ের তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে অথবা CFA-র ইন-প্রিন্সিপাল অনুমোদনের তারিখ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে (যেটি পরে হবে) সময়সীমা পাবে। ফলে তারা আরও কার্যকরভাবে তাদের আর্থিক পরিকল্পনা এবং প্রকল্প পরিচালনা করতে পারবে।
নবীকরণযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রকের মতে, Waste-to-Energy প্রকল্পের মাধ্যমে শুধুমাত্র জ্বালানি উৎপাদনই নয়, বরং দেশের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ সুরক্ষা, এবং পল্লী অর্থনীতির উন্নয়নও সম্ভব। এছাড়াও, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রের বর্জ্য যেমন খড়, গাছের ডাল, পশুর বর্জ্য ইত্যাদি থেকে জ্বালানি উৎপাদন করে কৃষকদের অতিরিক্ত আয় ও জীবিকা সুরক্ষিত করা যাবে।
মন্ত্রক আশা করছে যে, এই নতুন নির্দেশিকার ফলে MSME ক্ষেত্রের বিনিয়োগ আরও বাড়বে এবং দেশীয় বায়োগ্যাস এবং কমপ্রেসড বায়োগ্যাস উৎপাদনে বড়সড় গতি আসবে। ভারতের মতো দেশে যেখানে বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনা একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, সেখানে Waste-to-Energy প্রকল্পগুলির সঠিক বাস্তবায়ন পরিবেশগত সুরক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এই নতুন নির্দেশিকাগুলি থেকে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, সরকার Waste-to-Energy প্রকল্পগুলির জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি, স্থিতিশীল এবং সুশৃঙ্খল কাঠামো গড়ে তুলতে চাইছে। এর মাধ্যমে দেশের পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের হার বাড়ানো, বায়ুদূষণ কমানো এবং প্যারিস চুক্তি ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তির শর্ত পূরণের দিকে এগোনো সম্ভব হবে।
সব মিলিয়ে বলা যায়, Waste-to-Energy প্রকল্পের নতুন নির্দেশিকা কেবলমাত্র বিনিয়োগকারীদের জন্য সুবিধাজনক নয়, বরং ভারতের পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সামাজিক ক্ষেত্রের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এখন দেখার বিষয়, এই নির্দেশিকাগুলি মাঠ পর্যায়ে কতটা দ্রুত এবং কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়।