ভারতের শেয়ারবাজারে বুধবার আবারও দেখা গেল ইতিবাচক গতি। একাধিক অনুকূল কারণে বিনিয়োগকারীরা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছেন—যার মধ্যে রয়েছে সম্প্রতি ঘোষিত GST সংস্কার, ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য চুক্তি এগিয়ে নেওয়ার প্রচেষ্টা এবং মধ্যম মাত্রার মুদ্রাস্ফীতি।
বিএসই সেনসেক্স দিনশেষে ৮২,৬৯৩.৭১ পয়েন্টে বন্ধ হয়, যা আগের দিনের তুলনায় ৩১৩.০২ পয়েন্ট বা ০.৩৮ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, এনএসই নিফটি ৯১.১৫ পয়েন্ট বেড়ে ২৫,৩৩০.২৫ পয়েন্টে স্থিত হয়, যা ০.৩৬ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। খাতভিত্তিক সূচকের মধ্যে অটো, এফএমসিজি, পিএসইউ ব্যাংক এবং তেল-গ্যাস শেয়ার ভালো পারফর্ম করলেও ধাতু ও ভোক্তা টেকসই পণ্যের শেয়ার ছিল দুর্বল।
বাজারকে প্রভাবিতকারী মূল কারণগুলো জিওজিত ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড-এর গবেষণা প্রধান বিনোদ নায়ার জানান, “ভারত-আমেরিকা বাণিজ্য আলোচনা পুনরুজ্জীবিত হওয়া এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের প্রচেষ্টা শেয়ারবাজারকে শক্তি জুগিয়েছে। শক্তিশালী অভ্যন্তরীণ তহবিল প্রবাহ, মুদ্রার স্থিতিশীলতা এবং অনুকূল ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি বাজারের জন্য ইতিবাচক দিগন্ত তৈরি করছে।”
দিনটির সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল আরবান কোম্পানির শেয়ারের বাজার অভিষেক। অন-ডিমান্ড হোম সার্ভিস প্ল্যাটফর্মটি আইপিও মূল্যের তুলনায় প্রথম দিনেই ৬৪ শতাংশ উত্থান ঘটিয়ে ১৬৯ টাকা দরে বন্ধ হয়। উদ্বোধনী মূল্যের তুলনায় শেয়ারটি বেড়েছে ৪.২ শতাংশ।
মেহতা ইকুইটিজ লিমিটেড-এর গবেষণা বিভাগের সিনিয়র ভিপি প্রশান্ত তাপসে বলেন, “শক্তিশালী লিস্টিং আমাদের প্রত্যাশার থেকেও ভালো হয়েছে। দীর্ঘমেয়াদি কাঠামোগত দিক থেকে আরবান কোম্পানি একটি সম্ভাবনাময় গল্প, যা ঘরোয়া সেবার ক্রমবর্ধমান চাহিদার প্রতিফলন।”
যদিও মূল্যায়নের দিক থেকে অনেকের কাছে এই আইপিও ‘ব্যয়বহুল’ বলে মনে হয়েছে, তবুও বিনিয়োগকারীদের বিপুল আগ্রহ লক্ষ করা গেছে। যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (QIBs) অংশগ্রহণ ছিল ১৪৭ গুণ, অপ্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের (NIIs) চাহিদা ছিল ৭৭ গুণ এবং খুচরা বিনিয়োগকারীরাও ৪১ গুণ অংশগ্রহণ করেছেন, যা সাম্প্রতিক অন্যান্য অফারের তুলনায় অনেক বেশি।
তাপসে পরামর্শ দেন, যেসব বিনিয়োগকারী শেয়ার বরাদ্দ পেয়েছেন এবং স্বল্পমেয়াদি ঝুঁকি নিতে ইচ্ছুক, তারা দীর্ঘমেয়াদে ধরে রাখতে পারেন। অন্যদিকে যারা বরাদ্দ পাননি, তাদের জন্য তিনি “ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ” কৌশল গ্রহণের কথা বলেন, যাতে তালিকাভুক্তির পর সাময়িক পতন হলে প্রবেশের সুযোগ কাজে লাগানো যায়।
বাজারে আস্থা বাড়াচ্ছে ভূরাজনীতি ও নীতি-সংকেত:
শেয়ারবাজারে বিনিয়োগকারীরা আরও আশাবাদী হয়েছেন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভের আসন্ন বৈঠকে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা নিয়ে। পাশাপাশি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে জুন মাসের পর প্রথম ফোনালাপও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। ট্রাম্প প্রধানমন্ত্রী মোদিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন এবং রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত সমাধানে সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী বাণিজ্য প্রতিনিধি ব্রেন্ডান লিঞ্চের নেতৃত্বাধীন একটি দল মঙ্গলবার ভারতের বাণিজ্য দপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় বসে। আলোচনাকে “ইতিবাচক ও অগ্রগামী” আখ্যা দিয়ে উভয় পক্ষ শিগগিরই একটি পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করার প্রচেষ্টা জোরদার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এসব কারণ মিলিয়ে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় শেয়ারবাজার এখন শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। তবে মার্কিন ফেডের নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা বাজারে আগামী দিনে ওঠানামা তৈরি করতে পারে।
জিএসটি সংস্কার, ইতিবাচক আন্তর্জাতিক বার্তা এবং নতুন আইপিওর সাফল্য—সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীদের মনোবল বুধবারের লেনদেনে দৃঢ় করেছে।