ভারতীয় রেলওয়ে (Indian Railways) যা দেশের কোটি কোটি যাত্রীদের প্রধান পরিবহন মাধ্যম হিসেবে পরিচিত, সাম্প্রতিক সময়ে একটি বড় সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। ফাইন্যান্সিয়াল ইয়ার ২০২৪-২৫ এর মধ্যে রেল থেকে পরিবেশিত খাবারের মান নিয়ে ৬,৬৪৫টি অভিযোগ নথিভুক্ত হয়েছে, যা রেল মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণবের কাছ থেকে রাজ্যসভায় প্রকাশিত তথ্য অনুসারে জানা গেছে। এই অভিযোগগুলো শুধুমাত্র সংখ্যার খেলা নয়; এটি একটি গভীর সমস্যার সূচনা, যা যাত্রীদের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার প্রশ্ন উত্থাপন করছে। সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স (X) প্ল্যাটফর্মে, যাত্রীদের অভিযোগের তাণ্ডব দেখে রেল প্রশাসনের জন্য চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে।
অভিযোগের ধরন ও পরিস্থিতি
রেল মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, নিম্নমানের খাবার ছাড়াও, যাত্রীদের মধ্যে দূষিত টয়লেট, ট্রেনের বিলম্ব, নিরাপত্তা বিষয়ক সমস্যা, এবং কর্মকর্তাদের ব্যবহার নিয়ে অভিযোগের সংখ্যা বাড়ছে। তবে, খাবারের মান নিয়ে অভিযোগটি সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে। এক্সে প্রকাশিত একটি পোস্টে, @IndianTechGuide নামে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে ২৬ জুলাইয়ের তথ্য উল্লেখ করে জানানো হয়েছে যে, রেলের খাদ্য গুণমান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ বাড়ছে। পোস্টের সঙ্গে সংযুক্ত ছবিতে একটি ট্রেনের পাশে একটি খাবারের থালা দেখানো হয়েছে, যেখানে চাল, ডাল, সবজি, এবং রুটি রয়েছে। কিন্তু এই খাবারের গুণমান নিয়ে যাত্রীদের শঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে।
অন্যান্য ব্যবহারকারী, যেমন @RelatableAFzone ও @Drfrodo_, অভিযোগ করেছেন যে, খাবার নিয়ে অভিযোগ করলে কখনো কখনো রেল কর্মীরা যাত্রীদের উপর হাত তোলেন। এমনকি ভারতের উন্নত ট্রেনগুলোর মধ্যে বান্দে ভারত এক্সপ্রেসেও খাদ্য গুণমান নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। @ChiragRathi28 এর পোস্টে একটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে, যেখানে বান্দে ভারত ট্রেনে পরিবেশিত খাবার—যা দেখতে কমলার রুটি এবং কিছু প্যাকেট—যাত্রীদের মধ্যে বিরক্তি সৃষ্টি করেছে।
সমস্যার গভীর রেখা
খাদ্য গুণমানের সমস্যা নতুন নয়। ২০২৩ সালের একটি লাইভমিন্ট প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশন (IRCTC) দ্বারা পরিবেশিত খাবার নিয়ে বারবার অভিযোগ উঠেছে। ২০২১-২২ সালে ১,০৮২টি অভিযোগ থেকে শুরু করে ২০২৩-২৪ সালে ৭,০২৬টি অভিযোগে উত্তরণ ঘটেছে, যা ২০২৪-২৫ সালে ৬,৬৪৫-এ নেমে এসেছে। তবে এই সংখ্যা শুধুমাত্র নথিভুক্ত অভিযোগ, কারণ অনেক যাত্রী ভয়ে অথবা অবিশ্বাসে অভিযোগ জানাতে এড়িয়ে যান। @GemsOfIndia_X এর মতে, অভিযোগের পর রেল কর্তৃপক্ষ কখনো কখনো যাত্রীদের ব্যক্তিগত তথ্য গুণ্ডাদের সঙ্গে শেয়ার করে, যা ভীতি সৃষ্টি করে।
খাদ্যের মান কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে অপর্যাপ্ত স্টোরেজ, অযোগ্য হ্যান্ডলিং, এবং কন্ট্রাক্টরদের নজরদারি নাআঁকড়ে। ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (FSSAI) এর একটি প্রতিবেদন অনুসারে, রেলে পরিবেশিত খাবারে হাইজিনের অভাব প্রায়ই দেখা যায়। এর ফলে যাত্রীদের মধ্যে খাদ্যজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ে।
রেলের পদক্ষেপ ও সমাধানের চেষ্টা
রেল মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে যে, খাদ্য গুণমান উন্নত করার জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বেস কিচেন থেকে খাবার সরবরাহ, আধুনিক কিচেন স্থাপন, সিসিটিভি ক্যামেরা ইনস্টলেশন, এবং ফুড সেফটি সুপারভাইজার নিয়োগ। তবে, যাত্রীরা এই পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে সন্দিহান। @AshishSinghKiJi এর মতো ব্যবহারকারীরা মনে করেন, খাদ্য গুণমান উন্নতি হওয়া উচিত একটি মৌলিক অধিকার, এবং এর জন্য কঠোর নজরদারি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা প্রয়োজন।
যাত্রীদের প্রতিক্রিয়া ও ভবিষ্যৎ
অনেক যাত্রী এখন ট্রেনে খাবার খাওয়া এড়িয়ে যাচ্ছেন এবং নিজেদের খাবার নিয়ে যাচ্ছেন। @Indiahotline এর মতো ব্যবহারকারী সরাসরি বলেছেন, “আমি ট্রেনের খাবার ছুঁই না, এমনকি পানি পর্যন্ত না।” এই প্রবণতা রেলের আয়ের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যেহেতু IRCTC-এর কেটারিং ব্যবসা বড় অংশে ট্রেনে খাবার বিক্রয়ের ওপর নির্ভরশীল।
সামগ্রিকভাবে, ভারতীয় রেলের জন্য এটি একটি চ্যালেঞ্জিং সময়। যদিও সরকার নতুন ট্রেন এবং আধুনিকীকরণের কথা বলে, তবুও যাত্রীদের মৌলিক চাহিদা—ভালো খাবার—এখনও অগ্রাধিকার পায়নি। ভবিষ্যতে, রেল কর্তৃপক্ষকে যাত্রীদের আস্থা ফিরে পাওয়ার জন্য কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, নইলে এই অভিযোগের পাহাড় আরও বাড়তে পারে।