ভারতীয় ফার্মা ইন্ডাস্ট্রিতে আগস্টে ৮% প্রবৃদ্ধি

২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেট (Indian Pharma Market) ৮.১ শতাংশ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছে। জুলাই মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১ শতাংশ এবং চলতি…

Indian Pharmaceutical Market

২০২৫ সালের আগস্ট মাসে ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেট (Indian Pharma Market) ৮.১ শতাংশ বছরওয়ারি প্রবৃদ্ধি নথিভুক্ত করেছে। জুলাই মাসে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ৭.১ শতাংশ এবং চলতি অর্থবর্ষে (এফওয়াই২৫) সামগ্রিক বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ শতাংশে। আইকিউভিআইএ-র (IQVIA) তথ্য উদ্ধৃত করে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ ফার্মাসিউটিক্যালসের সাম্প্রতিক রিপোর্ট। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে আগস্টে ইউনিট সেলস ০.৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাজারের এই স্থিতিশীলতা মূলত দীর্ঘমেয়াদি রোগের চিকিৎসা সংক্রান্ত ওষুধের চাহিদা থেকে এসেছে। হার্টের রোগ (কার্ডিয়াক), ডায়াবেটিস বিরোধী ওষুধ (অ্যান্টি-ডায়াবেটিক) এবং সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম (সিএনএস) সম্পর্কিত ওষুধগুলির চাহিদা বাড়তে থাকায় বাজারে গতি এসেছে। পাশাপাশি শ্বাসযন্ত্রজনিত রোগ ও অনকোলজি তথা ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধেও শক্তিশালী উত্থান দেখা গেছে। বিপরীতে, স্বল্পমেয়াদি চিকিৎসা ক্ষেত্রের (অ্যাকিউট থেরাপি) ওষুধ যেমন অ্যান্টি-ইনফেকটিভস ও গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল বিভাগ তুলনামূলকভাবে ধীর গতিতে বৃদ্ধি পেয়েছে।

   

আগস্ট মাসে ক্রনিক থেরাপি সেগমেন্টে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশ, যেখানে অ্যাকিউট বিভাগে বৃদ্ধি সীমাবদ্ধ থেকেছে ৬ শতাংশে। কার্ডিয়াক ওষুধ ও অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধ দু’টোই ১১ শতাংশ হারে বেড়েছে। বিশেষত, নতুন প্রজন্মের জিএলপি-১ (GLP-1) মলিকিউলস-এর তীব্র চাহিদা অ্যান্টি-ডায়াবেটিক সেগমেন্টকে এগিয়ে দিয়েছে। সিএনএস থেরাপি ৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে, অ্যাকিউট সেগমেন্টে অ্যান্টি-ইনফেকটিভস ৬ শতাংশ, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টিনাল ওষুধ মাত্র ২ শতাংশ এবং ভিটামিন, মিনারেল ও নিউট্রিয়েন্টস (ভিএমএন) ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে।

অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে রেসপিরেটরি ওষুধে, যেখানে প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে। অনকোলজি অর্থাৎ ক্যান্সার চিকিৎসার ওষুধের প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ। পেইন ম্যানেজমেন্ট ওষুধ ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

Advertisements

রিপোর্টে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে জিএলপি-১ ভিত্তিক ওষুধের বিক্রি মাসিক হিসাবে ৯৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই প্রবল উত্থান অ্যান্টি-ডায়াবেটিক ওষুধের সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা নিয়ে এইচডিএফসি সিকিউরিটিজ-এর পূর্বাভাস বলছে, ২০২৬ অর্থবর্ষে আইপিএম প্রবৃদ্ধি ৮-৯ শতাংশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘমেয়াদি থেরাপির আরও দ্রুত সম্প্রসারণ, স্বল্পমেয়াদি থেরাপির ধীরে ধীরে পুনরুদ্ধার এবং নতুন পণ্যের লঞ্চ এই প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করবে।

সরকারি একটি আলাদা বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প বিশ্বে আয়তনের বিচারে তৃতীয় এবং উৎপাদন মূল্যের দিক থেকে ১৪তম স্থানে রয়েছে। ভারত একাই বিশ্বের মোট ভ্যাকসিন চাহিদার ৫০ শতাংশের বেশি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবহৃত জেনেরিক ওষুধের প্রায় ৪০ শতাংশ সরবরাহ করে। এই শিল্প ২০৩০ সালের মধ্যে ১৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০৪৭ সালের মধ্যে ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাজারে পৌঁছাবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

এছাড়া, উৎপাদন সংযুক্ত প্রণোদনা (পিএলআই) প্রকল্পের অধীনে ৫৫টি প্রকল্পে বিনিয়োগ হচ্ছে, যার মাধ্যমে উচ্চমানের ক্যান্সার ও ডায়াবেটিসের ওষুধ দেশে তৈরি হবে। পাশাপাশি ছোট ও মাঝারি আকারের সংস্থাগুলিকে প্রতিযোগিতা সক্ষম করে তুলতে স্ট্রেংদেনিং অফ ফার্মাসিউটিক্যালস ইন্ডাস্ট্রি (এসপিআই) প্রকল্পের আওতায় গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) এবং আধুনিক ল্যাবরেটরি স্থাপনে অর্থায়ন করা হচ্ছে। সরকারের দাবি, এই পদক্ষেপগুলি ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পকে আরও বেশি প্রতিযোগিতামূলক করে তুলবে এবং বিশ্ববাজারে দেশের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।