আর্থিক বৃদ্ধির হারে শীর্ষে থাকবে ভারত! পূর্বাভাস দিল IMF

বিশ্ব অর্থনীতির দিশারি সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এল ভারতের জন্য। সংস্থাটির জুলাই ২০২৫-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক’ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২৫…

Rising Credit Demand in Rural India Signals Economic Growth in 2025

বিশ্ব অর্থনীতির দিশারি সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) একটি ইতিবাচক বার্তা নিয়ে এল ভারতের জন্য। সংস্থাটির জুলাই ২০২৫-এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকনমিক আউটলুক’ রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ২০২৫ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার দাঁড়াবে ৬.৪ শতাংশ, যা বিশ্বের বৃহৎ অর্থনীতিগুলির মধ্যে সর্বোচ্চ। এই বৃদ্ধির হার চীনের (৪.৮ শতাংশ), আমেরিকার (১.৯ শতাংশ) মতো বড় অর্থনীতির চেয়েও অনেক বেশি।

Advertisements

IMF-এর এই পূর্বাভাস স্পষ্টভাবে তুলে ধরছে ভারতের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও প্রতিকূল বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যেও দেশের পুনরুদ্ধার ও উন্নয়নের ক্ষমতা। শুধু তাই নয়, এপ্রিলে IMF যে পূর্বাভাস দিয়েছিল, তাতে ভারতের সম্ভাব্য বৃদ্ধি ছিল ৬.২ শতাংশ — জুলাই মাসে তা ৬.৪ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। এই পরিবর্তনের অন্যতম কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিবেশের উন্নতি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি শুল্কে ছাড়।

   

বাণিজ্য পরিবেশে উন্নতি ও আমেরিকার শুল্ক হ্রাস
বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য উত্তেজনা, বিশেষ করে মার্কিন-চীন বাণিজ্যযুদ্ধ ও পশ্চিমা দেশের সুরক্ষানীতিমূলক পদক্ষেপ, সাম্প্রতিক কালে বিশ্ব অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি করছিল। তবে, জুলাই ২০২৫-এর IMF রিপোর্ট অনুযায়ী, আমেরিকা সাময়িকভাবে তার গড় ট্যারিফ হার ২৪.৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৭.৩ শতাংশ করেছে। এই হ্রাস ভারতীয় রপ্তানিকারকদের জন্য স্বস্তি বয়ে এনেছে এবং বাণিজ্য ভারসাম্য উন্নত হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে ভারতের রপ্তানি খাতে খানিকটা প্রাণ ফিরে এসেছে। বিশেষত গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যালস ও আইটি পরিষেবার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক জিডিপি বৃদ্ধির ওপর।

অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও যুব শক্তি ভারতের প্রধান হাতিয়ার
বিশ্বব্যাংকের ২০২৩ সালের একটি গবেষণায় বলা হয়, ভারতের ‘ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড’ অর্থাৎ তরুণ জনসংখ্যার প্রাচুর্য দেশের জিডিপি বৃদ্ধিতে প্রতি বছর ১ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত গতি যোগ করতে সক্ষম। বর্তমানে ভারতের গড় বয়স ২৯ বছর, যা বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় অনেক কম। ফলে কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাত অনেক বেশি, এবং তার সদ্ব্যবহার হলে দীর্ঘমেয়াদী প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত হতে পারে।

সাথে অভ্যন্তরীণ নীতিগত সংস্কার যেমন জিএসটি, উৎপাদন সংক্রান্ত পিএলআই স্কিম, ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ অভিযান, ডিজিটাল পেমেন্টস সিস্টেম এবং অবকাঠামো খাতে বৃহৎ বিনিয়োগ দেশের ভিত মজবুত করছে।

চ্যালেঞ্জও রয়েছে — শিল্পখাত এখনও পিছিয়ে
তবে IMF-এর রিপোর্টে সতর্কবার্তাও রয়েছে। ২০২৩-২৪ সালে ভারতের বৃদ্ধি ৮.২ শতাংশ ছিল, যা এখনও পর্যন্ত করোনা পরবর্তী সময়ে সর্বোচ্চ। ২০২৫-এর ৬.৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কিছুটা ইতিবাচক হলেও, এই হার সেই শিখরে পৌঁছতে পারেনি। IMF-এর বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভারতের উৎপাদন খাত এখনও দেশের মোট জিডিপির মাত্র ১৭ শতাংশ, যেখানে চীনে এই হার ২৭ শতাংশ।

এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে যে ভারতের ‘ম্যানুফ্যাকচারিং সেক্টর’ এখনো সম্ভাবনার পুরোটা ব্যবহার করতে পারছে না। দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন শিল্পনীতিকে আরও কার্যকরভাবে প্রয়োগ করা। বিশেষত, এমএসএমই (ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প), রফতানি নির্ভর উৎপাদন, এবং প্রযুক্তিনির্ভর শিল্পে অধিক মনোযোগ দিতে হবে।

IMF-এর সদ্য প্রকাশিত প্রতিবেদন ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতের প্রতি আন্তর্জাতিক আস্থার প্রতিফলন। বৈশ্বিক অনিশ্চয়তার মধ্যে ভারতের স্থিতিশীলতা, তরুণ জনশক্তি এবং নীতিগত সংস্কারই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। তবে, চ্যালেঞ্জের কথাও উপেক্ষা করা যাবে না — শিল্প খাতের উত্থান ছাড়া দীর্ঘমেয়াদী লাভ স্থায়ী হবে না।

ভারত যদি দক্ষতার সঙ্গে এই সুযোগগুলো কাজে লাগাতে পারে, তবে শুধু এশিয়ার নয়, বিশ্বের অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি হিসেবে নিজের অবস্থান আরও মজবুত করে তুলতে পারবে — এমনটাই আশা করছে IMF ও আন্তর্জাতিক বাজার।