নতুন এক অর্থনৈতিক সূচক অনুযায়ী, এপ্রিল ২০২৫-এ ভারতের খুচরো মূল্যবৃদ্ধি (India Retail Inflation) বা রিটেইল ইনফ্লেশন কমে দাঁড়িয়েছে ৩.১৬ শতাংশে, যা গত ছয় বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন হার। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই মুদ্রাস্ফীতির হার ২০১৯ সালের পর প্রথমবারের মতো এতটা নেমে এসেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, খাদ্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকা, তেল ও জ্বালানির মূল্যে নিয়ন্ত্রণ এবং নীতিনির্ধারকদের সঠিক পদক্ষেপ এই মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাসে বড় ভূমিকা রেখেছে।
ভারতের পরিসংখ্যান মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে রিটেইল ইনফ্লেশন ছিল ৪.৭ শতাংশ, যা ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে নেমে এসেছে ৩.১৬ শতাংশে। এই রেকর্ড নিম্নগামী প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
Also Read | যুদ্ধের ছায়া কাটতেই শেয়ারবাজার চাঙ্গা, এয়ারটেল-টাটা স্টিল ২% করে বাড়ল
বিশ্লেষকরা বলছেন, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এই মুদ্রাস্ফীতির হার হ্রাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ রিটেইল ইনফ্লেশন মানে হলো সাধারণ ভোক্তাদের কেনাকাটার সময় যে দামে পণ্য ও পরিষেবা কেনা হয় তার গড় মূল্যবৃদ্ধি। এটি বাড়লে সাধারণ মানুষের উপর আর্থিক চাপ বাড়ে, আর কমলে কিছুটা স্বস্তি আসে।
খাদ্যপণ্য, বিশেষ করে শাকসবজি, ডাল, চাল, তেল ও দুধের দামে সাম্প্রতিক মাসগুলিতে বড় কোনো বৃদ্ধি দেখা যায়নি। বরং কিছু ক্ষেত্রে দাম কমেছে। এটি মুদ্রাস্ফীতির ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলেছে। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম স্থিতিশীল থাকায় ভারতের আমদানি খরচও তুলনামূলকভাবে কমেছে, যা রিটেইল ইনফ্লেশন কমার আরেকটি বড় কারণ বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
Also Read | যানজটমুক্ত কলকাতা গড়তে ৪৫০ কোটি টাকার বরাদ্দ
এছাড়া, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (RBI)-এর সুদ নীতি এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণমূলক বিভিন্ন পদক্ষেপও এই অবস্থার জন্য দায়ী। RBI ধারাবাহিকভাবে মুদ্রানীতিকে কঠোর করে চলেছে যাতে ভোক্তা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই মুহূর্তে সুদের হার স্থিতিশীল থাকায় বিনিয়োগে উৎসাহ এসেছে এবং বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কিছুটা কমেছে।
এখন প্রশ্ন উঠছে, এই নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘমেয়াদে কতটা স্থায়ী হবে। কারণ ভারতের মতো বিশাল অর্থনীতিতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক ঘটনাবলির কারণে মূল্যবৃদ্ধির হার খুব সহজেই ওঠানামা করতে পারে। বিশেষ করে খরা, বন্যা বা আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামের হঠাৎ বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতিকে পুনরায় বাড়িয়ে তুলতে পারে।
তবে এখনকার চিত্র অনুযায়ী, ভারতীয় অর্থনীতি স্থিতিশীল একটি অবস্থানের দিকে এগোচ্ছে বলেই মনে করছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। সাধারণ জনগণের কাছে এই খবর স্বস্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য খরচ সামাল দেওয়া কিছুটা সহজ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মোটের উপর, ভারতের জন্য এই ৩.১৬ শতাংশের খুচরো মূল্যবৃদ্ধির হার শুধু পরিসংখ্যানগত সাফল্য নয়, বরং অর্থনৈতিক কৌশলগত পরিকল্পনার একটি ফল। আগামী মাসগুলোতে এই হার কতটা স্থিতিশীল থাকে এবং কেন্দ্রীয় সরকার ও রিজার্ভ ব্যাংক কীভাবে এই পরিস্থিতিকে ধরে রাখে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।