২০২৫ সালের ১১ আগস্ট, সোমবার রাত ১০:১৭টায় ভারতীয় সময় অনুযায়ী, আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্যের সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বিদেশি মুদ্রা সঞ্চয় (Forex Reserves) নিয়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারত বিশ্বের শীর্ষ পাঁচটি দেশের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে। এই তালিকায় প্রথম স্থানে রয়েছে চিন ৩ হাজার ২শো ৯২ বিলিয়ন ডলারের সঙ্গে, দ্বিতীয় স্থানে জাপান ১ হাজার ২শো ৭২ বিলিয়ন ডলার, তৃতীয় স্থানে সুইজারল্যান্ড ৮৯০ বিলিয়ন ডলার, চতুর্থ স্থানে ভারত ৬৮৯ বিলিয়ন ডলার, এবং পঞ্চম স্থানে রাশিয়া ৫৯৯ বিলিয়ন ডলারের সঙ্গে। ভারতের এই চতুর্থ স্থান তার অর্থনৈতিক শক্তি, সুশৃঙ্খল নীতি এবং বিশ্বমঞ্চে বাড়তি প্রভাবের একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
ভারতের রিজার্ভ বৃদ্ধির গল্প
ভারতের ৬৮৯ বিলিয়ন ডলারের ফরেক্স রিজার্ভ ২০১৪ সালে ২৯৭ বিলিয়ন ডলার থেকে দ্বিগুণ হয়ে উঠেছে, যা দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি, বিদেশি বিনিয়োগের প্রবাহ এবং রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার সাফল্যের পরিচয় দেয়। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) এই সঞ্চয় ব্যবহার করে রুপির মূল্য স্থিতিশীল রাখে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক দায়িত্ব পূরণে সহায়তা করে। আইটি ও পরিষেবা রপ্তানির উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি, বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ, এবং সুশৃঙ্খল অর্থনৈতিক পরিকল্পনা ভারতের ফরেক্স রিজার্ভ বৃদ্ধির মূল ভিত্তি হিসেবে কাজ করেছে। বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ-এর প্রতিবেদনে ভারতকে দ্রুততম বড় অর্থনীতি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যা এই অগ্রগতির পেছনে একটি শক্তিশালী ভূমিকা পালন করে।
তবে, এই সাফল্যের পাশাপাশি কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ভারতের ফরেক্স রিজার্বের একটি বড় অংশ ডলার-ভিত্তিক সম্পদে নির্ভরশীল, যা বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সময়ে ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। এক্স প্ল্যাটফর্মে ব্যবহারকারীরা পরামর্শ দিয়েছেন যে, ভারতকে এই রিজার্বের একটি অংশ স্বর্ণে রূপান্তর করা উচিত, যা ডলারের অস্থিরতা এড়াতে সাহায্য করবে। বিআরআইসিএস গোষ্ঠীর মতো সংস্থাগুলো ডলার-ভিত্তিক লেনদেন কমিয়ে স্বর্ণ-ভিত্তিক ব্যবস্থাপনার পক্ষে, যা ভারতের জন্য ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
চিন ও জাপানের অবদান
তালিকার শীর্ষে চিনের অবস্থান তার রপ্তানি-নির্ভর অর্থনীতি ও মুদ্রা নিয়ন্ত্রণের ফল। ২০০৮ সালের আর্থিক সঙ্কটের পর চিন তার রিজার্ভ ব্যবহার করে মুদ্রা মূল্য স্থিতিশীল রাখার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রভাব বিস্তার করেছে। আইএমএফ (২০২৩) এর গবেষণা অনুযায়ী, চিনের এই বড় সঞ্চয় তার অর্থনৈতিক শক্তির প্রমাণ হলেও ভিতরে ভিতরে দুর্বলতা লুকিয়ে থাকতে পারে।
জাপানের ১ হাজার ২শো ৭২ বিলিয়ন ডলারের রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ জাপানের দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও রপ্তানি অধিক্যের ফল। জাপান তার রিজার্ভের একটি অংশ বিশেষ অধিকার ড্র অর্থাতে (SDR) রাখে, যা যেন (JPY) স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে।
অন্যান্য দেশ ও তুলনা
সুইজারল্যান্ড ও রাশিয়ার রিজার্ভও তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার প্রমাণ। তবে, তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা জার্মানির অনুপস্থিতি চোখে পড়ে। এটি বোঝায় যে, এই দেশগুলো তাদের রিজার্ভ ট্রেজারি বন্ডের মতো বিভিন্ন সম্পদে বিনিয়োগ করে, যা ফরেক্স রিজার্ভের ঐক্যমত্য ভঙ্গ করে।
রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
ফরেক্স রিজার্ভ একটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ওপরও নির্ভরশীল। ভারতের স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আকর্ষণ করেছে, যা রিজার্ভ বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়েছে। তবে, বিশ্ববাজারে ডলারের প্রভাব কমে আসার সাথে সাথে ভারতকে বৈচিত্র্যময় রিজার্ভ ব্যবস্থাপনার দিকে এগোতে হবে। চিনের মতো দেশের সঙ্গে তুলনা করলে, ভারতের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা হতে পারে, যেখানে রিজার্ভ ব্যবহার করে অর্থনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করা হয়।
ভারতের জন্য এই চতুর্থ স্থান গর্বের, তবে ডলার-নির্ভরতা একটি ঝুঁকি। আগামী দিনে ভারতকে বৈচিত্র্যময় বিনিয়োগের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। চিন ও জাপানের কৌশল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভারত তার রিজার্ভ ব্যবস্থাপনাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। এই সাফল্য ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎকে উজ্জ্বল করবে, যদি সঠিক নীতি গ্রহণ করা হয়। ভারতের ৬৮৯ বিলিয়ন ডলারের ফরেক্স রিজার্ভ বিশ্বের প্রথম পাঁচে স্থান করে তার অর্থনৈতিক উত্থানের প্রমাণ, যা ভবিষ্যতে আরও শক্তিশালী হতে পারে।