নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে জিএসটি হ্রাসের (GST Reduction) সম্ভাবনা, মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের জন্য স্বস্তির হাওয়া৷ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেমন ডাল, মুড়ি, চা এবং বেসন-এর উপর জিএসটি (পণ্য ও পরিষেবা কর) হারের সম্ভাব্য হ্রাস নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে ভারত সরকার। সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে, খুব শীঘ্রই এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের সম্ভাবনা রয়েছে।
মন্ত্রকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই উদ্যোগের মূল উদ্দেশ্য হলো সাধারণ মানুষের উপর মূল্যবৃদ্ধির বোঝা কিছুটা কমানো, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য। গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়তে থাকায় সাধারণ মানুষের সংসারের খরচও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এরই মধ্যে সরকার চাইছে এই পণ্যের উপর কর কমিয়ে তাদের আর্থিক চাপ কিছুটা লাঘব করতে।
সরকারের রাজস্ব আদায়ের পরিসংখ্যান যথেষ্ট ইতিবাচক। জুন ২০২৫ মাসে দেশের জিএসটি আদায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১.৮৫ লক্ষ কোটি টাকা, যা আগের বছরের জুনের তুলনায় ৬.২ শতাংশ বেশি। ২০২৪ সালের জুনে জিএসটি আদায় হয়েছিল ১.৭৩ লক্ষ কোটি টাকা। যদিও মে মাসের তুলনায় জুনে সামান্য পতন দেখা গেছে। মে ২০২৫ মাসে জিএসটি আদায়ের পরিমাণ ছিল ২.০১ লক্ষ কোটি টাকা, যা ২০২৪ সালের মে মাসের তুলনায় প্রায় ১৬.৪ শতাংশ বেশি।
এই বিপুল রাজস্ব আদায়ের ফলে সরকারের কাছে “ফিসক্যাল স্পেস” তৈরি হয়েছে, যা সাধারণ মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে। অর্থাৎ সরকারের হাতে এখন যথেষ্ট রাজস্ব আছে, যা থেকে জনগণের জন্য কিছুটা ছাড় দেওয়া সম্ভব। সূত্রের খবর অনুযায়ী, প্রস্তাবিত জিএসটি হ্রাসের হার ৮–৯ শতাংশের বেশি হতে পারে। তবে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে — রাজনৈতিক চাপ। বেশ কয়েকটি বিরোধী দল শাসিত রাজ্য এবং কিছু বিজেপি শাসিত রাজ্যও কেন্দ্রীয় সরকারকে চিঠি দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের উপর জিএসটি কমানোর অনুরোধ করেছে। তাদের মতে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে এবং জনসাধারণের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করতে এই কর হ্রাস জরুরি।
এই প্রস্তাব নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে আসন্ন জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকে। উল্লেখ্য, জিএসটি কাউন্সিলের সভাপতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। এই কাউন্সিলে দেশের সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের অর্থমন্ত্রীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও বৈঠকের নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঘোষণা করা হয়নি, তবে আশা করা হচ্ছে চলতি জুলাই মাসের মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জিএসটি হ্রাসের ফলে দেশের বাজারে মূল্যস্ফীতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে। একদিকে, এতে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত শ্রেণির জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম কমবে, অন্যদিকে এর প্রভাবে সামগ্রিক অর্থনীতিতেও ইতিবাচক সাড়া পড়তে পারে।
ডাল, বেসন, চা, মুড়ি — এইসব পণ্য প্রায় প্রতিটি ভারতীয় পরিবারের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার অপরিহার্য অংশ। ডালের দাম নিয়মিত ওঠানামা করে এবং বহু নিম্ন আয়ের পরিবার প্রোটিনের প্রধান উৎস হিসেবে ডালের উপর নির্ভরশীল। বেসন এবং মুড়ি সাধারণত সস্তা ও পুষ্টিকর বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আবার চা তো ভারতীয় সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা প্রায় প্রতিটি ঘরে প্রতিদিন একাধিকবার তৈরি হয়।
যদি এই জিনিসগুলির উপর জিএসটি কমানো হয়, তাহলে সরাসরি খুচরা বাজারে এর প্রভাব পড়বে। অনেকেই আশা করছেন, এর ফলে আগামী মাসগুলিতে বাজারে দ্রব্যের দাম কমতে শুরু করবে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশ মনে করছেন, রাজস্ব আয়ের বর্তমান ঊর্ধ্বমুখী ধারা ধরে রাখা গেলে সরকারের পক্ষে এই ধরণের করছাড় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে না। বরং এর মাধ্যমে জনগণের হাতে আরও কিছু অর্থ থেকে যাবে, যা খরচে উৎসাহ দেবে এবং এর ফলস্বরূপ অর্থনৈতিক চক্রে গতি আসবে।
তবে সমালোচকরা বলছেন, শুধুমাত্র জিএসটি কমানোই মূল্যস্ফীতির স্থায়ী সমাধান নয়। উৎপাদন, সরবরাহ শৃঙ্খল এবং কৃষিক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ প্রয়োজন। পাশাপাশি বাজারে মজুতদারির বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়াও জরুরি।
সবমিলিয়ে, জুলাই মাসের জিএসটি কাউন্সিলের বৈঠকের দিকে সকলের নজর। সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা, এই বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর জিএসটি কমানোর বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। সরকারও যদি এই পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করে, তাহলে তা জনমনে ব্যাপক সাড়া ফেলবে বলেই আশা করা যায়।