বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্নের হুমকি, সীমান্ত উত্তেজনা, কূটনৈতিক বৈরিতা—সবকিছুর মধ্যেও ভারতের দিকেই নির্ভরতা বেড়েছে পাকিস্তানের 9India-Pakistan Trade,)। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে ভারত থেকে পাকিস্তানের আমদানি ২২০.৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, যা আগের অর্থবর্ষে ছিল ২০৬.৮৯ মিলিয়ন ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তান থেকে ভারতে রফতানি একই রকম রয়েছে, মাত্র ১.৪৩ মিলিয়ন ডলারে আটকে আছে।
এই বিপুল বৈষম্যপূর্ণ বাণিজ্য পরিসংখ্যান আবারও প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, রাজনৈতিক বৈরিতা থাকলেও অর্থনৈতিক বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা বলে। বিশেষ করে পাকিস্তানের শিল্প ও কৃষি খাতের একটি বড় অংশ এখনও কিছু নির্দিষ্ট ভারতীয় কাঁচামাল বা পণ্যের উপর নির্ভরশীল।
আমদানি বাড়ার নেপথ্যে কী?
২০২০ সালে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা রদ করার প্রতিবাদে পাকিস্তান সরকার ভারতের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য প্রায় পুরোপুরি স্থগিত রাখে। যদিও আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আজও বহাল, তবে কিছু নির্দিষ্ট পণ্য যেমন ওষুধ, কাঁচামাল, রাসায়নিক, তুলা ও খাদ্যপণ্য পাকিস্তান ভারত থেকে আমদানি করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের মুদ্রাস্ফীতি ও ডলার সংকটের মধ্যেও ভারত থেকে পণ্য আমদানি অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলকভাবে সস্তা ও সুবিধাজনক। সীমান্ত-সংলগ্ন বাণিজ্যপথ, ঐতিহাসিক যোগসূত্র ও ভারতীয় বাজারের বিশালতা পাকিস্তানকে ভারতমুখী করে রেখেছে।
এক বাণিজ্য বিশ্লেষকের মতে, “পাকিস্তান ভারতীয় তুলা, চিনি ও ওষুধে এতটাই নির্ভরশীল যে বিকল্প খুঁজে পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্যে ভারত এখন বিশ্বস্ত উৎস হিসেবে গৃহীত। তা ছাড়া উৎপাদন খরচের দিক থেকেও ভারতীয় পণ্য তুলনামূলকভাবে সাশ্রয়ী।”
রফতানি প্রায় শূন্য, সংকটে পাকিস্তানের শিল্প
ভারতে পাকিস্তানের রফতানি আজ প্রায় স্তব্ধ। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষে পাকিস্তান থেকে ভারতে রফতানি হয়েছে মাত্র ১.৪৩ মিলিয়ন ডলারের পণ্য। এটি আগের বছরেও একই ছিল। এই নিম্ন স্তরের রফতানি পাকিস্তানের শিল্পপতিরা বড় একটি ধাক্কা হিসেবে দেখছেন। বিশেষ করে যেসব পণ্য ভারতীয় বাজারে আগেও জনপ্রিয় ছিল, যেমন হিমালয়ান গোলাপজল, পাথরের কারুশিল্প, শুকনো ফল, সেগুলোর চাহিদা থাকলেও রফতানি স্থবির।
বিশ্লেষকদের মতে, একদিকে যেমন রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে আমদানি-রফতানিতে কোনো সরকারি সহযোগিতা নেই, তেমনি পাকিস্তানের উৎপাদন খাতেও রফতানিযোগ্য মানসম্পন্ন পণ্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। তার ওপর ভারতের পণ্য রফতানির ক্ষেত্রে কঠোর শুল্কনীতি ও বিধিনিষেধও বড় বাধা।
বাণিজ্য ঘাটতির ভবিষ্যৎ কী?
ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ঘাটতির পারদ দিনে দিনে বাড়ছে। পাকিস্তানের পক্ষে এটি একটি দুশ্চিন্তার বিষয়। কারণ ভারতের কাছ থেকে পণ্য আমদানি করতে পাকিস্তানকে ডলার খরচ করতে হচ্ছে, অথচ রফতানি বন্ধ থাকায় বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সুযোগ নেই। পাকিস্তানের অর্থনীতিতে এটি চাপ তৈরি করছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক সম্পর্ক যতই খারাপ থাকুক, বাণিজ্যিক সম্পর্ক চালু রাখলে সাধারণ মানুষের উপকার হবে। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোর অর্থনীতি এতে চাঙ্গা হতে পারে। অনেকে আবার মানবিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগের ওপরও জোর দিচ্ছেন, যেখানে বাণিজ্য একটি ‘সেতুবন্ধন’ হিসেবে কাজ করতে পারে।
ভারত-পাকিস্তান বাণিজ্যিক সম্পর্কে এই মুহূর্তে একতরফা নির্ভরতাই স্পষ্ট। পাকিস্তান ভারত থেকে ক্রমাগত পণ্য নিচ্ছে, অথচ রফতানি প্রায় বন্ধ। এই পরিস্থিতি রাজনৈতিকভাবে অস্বস্তিকর হলেও বাস্তবের খাতায় এটি পাকিস্তানের অর্থনৈতিক দুর্বলতার প্রতিচ্ছবি। আপাতত পাকিস্তান ‘ভরসা’ রাখছে ভারতীয় বাজারে—যে ভরসা কূটনৈতিক সীমা ছাড়িয়ে অর্থনীতির বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে।