ভারতের শ্রমনীতির ইতিহাসে এক বিরাট পরিবর্তন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে দেশজুড়ে কার্যকর হল নয়া শ্রম আইন। কেন্দ্রের দাবি—এ আইন শুধু শ্রমিকের অধিকার রক্ষাই নয়, ভারতকে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় আরও শক্তিশালী করে তুলবে।
বর্তমানে কার্যকর থাকা ২৯টি শ্রমবিধিকে একত্রিত করে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও ৪টি নতুন বিধান। ফলে এক বিস্তৃত ও একীভূত শ্রম কোডের অধীনে এ বার থেকে দেশের সমস্ত কর্মী—সরকারি হোক বা বেসরকারি—সমান সুবিধা পাবেন।
গ্র্যাচুইটি আর পাঁচ বছর নয়, এক বছরেই
সবচেয়ে বড় পরিবর্তন গ্র্যাচুইটি ব্যবস্থায়। নতুন আইন অনুযায়ী, কোনও কর্মী একটানা মাত্র এক বছর চাকরি করলেই গ্র্যাচুইটির জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন।
এতদিন পাঁচ বছর না হলে ওই সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হতো কর্মীদের। বিশেষত বেসরকারি সংস্থায় ঘন ঘন কর্মস্থল বদলের কারণে বিপুল সংখ্যক কর্মী দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিলেন। সেই বাস্তবতাকেই মাথায় রেখে গ্র্যাচুইটির যোগ্যতার সীমা কমিয়ে আনা হয়েছে।
৪০ কোটি কর্মীর সামাজিক সুরক্ষার আওতা India New Labour Codes Gratuity
নতুন শ্রম কোডের অধীনে—
সব শ্রেণির কর্মীকে বাধ্যতামূলকভাবে নিয়োগপত্র দিতে হবে
প্রত্যেকে পিএফ, ইএসআইসি, বিমা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা পাবেন
সময়মতো ন্যূনতম বেতন নিশ্চিত হবে
৪০ বছরের বেশি বয়সি কর্মীদের প্রতিবছর একবার বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হবে
সরকারের বিশ্বাস, এটি কর্মীর জীবনমান উন্নত করবে এবং কর্মক্ষেত্রে মানবিকতা ও নিরাপত্তার নতুন অধ্যায় শুরু করবে।
রফতানি শিল্পে নতুন গতি আনবে শ্রম সংস্কার
বাণিজ্য ও শ্রম মন্ত্রক দুই পক্ষেরই মত—নতুন শ্রম আইন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও ভারতের অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে।
এক ঊর্ধ্বতন আধিকারিকের কথায়, “রফতানিমুখী শিল্পের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মতির প্রয়োজন পূরণের পাশাপাশি অস্থির বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতার উপযোগী নমনীয়তা ও সরলীকরণ দেবে এই নতুন বিধি।”
কর্মীদের জন্য ন্যায্য মজুরি, সমান সুযোগ, দক্ষতা বৃদ্ধি ও মর্যাদা নিশ্চিত করার পাশাপাশি নিয়োগকর্তাদের জন্যও ব্যবসা পরিচালনা সহজতর করা হয়েছে। নির্দিষ্ট মেয়াদি নিয়োগ, কর্মঘণ্টা, ছাঁটাই নীতিতে আরও স্বচ্ছতা ও কাঠামোগত শিথিলতা আনা হয়েছে।
মহিলা ও বাগান শ্রমিকদের জন্য বিশেষ বিধান
রাতের শিফটে মহিলাদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তাঁদের লিখিত সম্মতি ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাধ্যতামূলক
বাগান শ্রমিকদের অধিকার একত্রিত, সম্প্রসারিত ও বহনযোগ্য করা হয়েছে—যে কোনও সংস্থায় বদলি হলেও সুবিধা বহাল থাকবে
শ্রমনীতির নতুন দিশা
২০২০ সালে সংসদে পাশ হলেও নানা কারণে বাস্তবায়ন আটকে ছিল। অবশেষে সমস্ত কোড চালু হওয়ায় কেন্দ্রের দাবি—এটি ভারতের শ্রমক্ষেত্রে যুগান্তকারী সংস্কারের সূচনা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আইন কার্যকর হলে ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান, উৎপাদনশীলতা এবং শিল্প-বিনিয়োগ—সব ক্ষেত্রেই ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। একই সঙ্গে কর্মীরা পাবেন আর্থিক নিরাপত্তা, মর্যাদা এবং সুস্থ কর্মপরিবেশের নিশ্চয়তা।
