ভারতের অর্থনীতি বর্তমানে এক অভূতপূর্ব ধন সৃষ্টির যুগ অতিক্রম করছে (India Wealth Report)। মের্সিডিজ-বেঞ্জ হুরুন ভারত ধন সম্পদ রিপোর্ট ২০২৫ অনুযায়ী, দেশটি এমন এক গতিতে ধনী তৈরি করছে, যা বিশ্বের অনেক উন্নত দেশকেও চমকে দিতে পারে। এই রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে এখন প্রতি ৩০ মিনিটে তৈরি হচ্ছে এক নতুন মিলিয়নেয়ার বংশ — যার নিট সম্পদ কমপক্ষে $১ মিলিয়ন বা প্রায় ₹৮.৫ কোটি টাকা।
২০২১ সালে ভারতে মিলিয়নেয়ার বংশের সংখ্যা ছিল প্রায় ৪ লাখ ৫৮ হাজার। কিন্তু মাত্র চার বছরের ব্যবধানে, ২০২৫ সালে এই সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে পৌঁছেছে ৮ লাখ ৭১ হাজারে। এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধির পেছনে প্রধান কারণ হিসাবে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে শেয়ারবাজারের চমকপ্রদ লাভ ও আবাসন খাতে সম্পদের মূল্যের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি।
মহারাষ্ট্র ও মুম্বই: ধন সৃষ্টির হটস্পট
রিপোর্ট অনুযায়ী, মহারাষ্ট্র এখন ভারতের সবচেয়ে ধনী রাজ্য। এখানেই অবস্থান করছে ১ লাখ ৭৮ হাজার ৬০০ মিলিয়নেয়ার বংশ। এর মধ্যে মুম্বই শহর একাই গড়ে তুলেছে ১ লাখ ৪২ হাজার মিলিয়নেয়ার বংশ। শুধু ২০২১ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত এই সংখ্যার বৃদ্ধির হার ১৯৪%। মুম্বইয়ের জিএসডিপি ৫৫% বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮০ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যা এই ধন বৃদ্ধির একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করেছে।
ধন বৃদ্ধি বনাম ধনী-দরিদ্র বৈষম্য
যদিও এই ধন সৃষ্টির গল্প ভারতীয় অর্থনীতির একটি ইতিবাচক দিক তুলে ধরে, কিন্তু এই বৃদ্ধির মধ্যেও উঠে আসছে বৈষম্যের তীব্র প্রশ্ন। ২০২৪ সালের ওয়ার্ল্ড ইনিগ্যালিটি ল্যাবের একটি গবেষণা অনুযায়ী, দেশের শীর্ষ ১% ধনী জনগোষ্ঠী বর্তমানে ভারতের মোট সম্পদের ৪০.১% নিয়ন্ত্রণ করছে — যা স্বাধীনতার পর এই প্রথম এতটা উচ্চমাত্রায় পৌঁছেছে।
এই তথ্য আমাদের জানিয়ে দেয় যে, ধন সৃষ্টির এই প্রক্রিয়া এখনও একটি অভিজাত গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ, এবং বৃহত্তর জনগণের ভাগ্যে সেই অনুপাতিক উন্নয়ন এখনো অধরাই থেকে যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ
হুরুন রিপোর্ট অনুমান করছে, আগামী এক দশকে ভারতের জিডিপি দ্বিগুণ হলে, ২০৩৫ সালের মধ্যে মিলিয়নেয়ার বংশের সংখ্যা পৌঁছাতে পারে ১.৭ থেকে ২ মিলিয়নে। এই তথ্য একদিকে যেমন ভারতের অর্থনৈতিক শক্তির নিদর্শন, তেমনি নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি সতর্কবার্তা — ধনবণ্টনের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা না করতে পারলে সামাজিক বৈষম্য আরও তীব্র আকার নিতে পারে।
ভারতের অর্থনীতিতে ধন সৃষ্টির এই ধারা নিঃসন্দেহে গর্বের বিষয়। তবে, এই ধন যেন শুধুমাত্র ধনীদের পকেটে সীমাবদ্ধ না থেকে বৃহত্তর জনগণের আর্থিক সুরক্ষা ও জীবনের মান উন্নয়নের জন্যও সহায়ক হয়, সেই চেষ্টাই হওয়া উচিত সরকারের ও সমাজের সকল স্তরের। ধন সৃষ্টি ও ন্যায্য বণ্টনের ভারসাম্যই ভারতের প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি হতে পারে।
সূত্র: মের্সিডিজ-বেঞ্জ হুরুন ভারত ধন সম্পদ রিপোর্ট ২০২৫, ওয়ার্ল্ড ইনিগ্যালিটি ল্যাব, ২০২৪.