কর ব্যবস্থায় বৈশ্বিক শক্তি হিসাবে ভারতের উত্থান স্বীকৃত

ভারতে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) বা গ্লোবাল সক্ষমতা (Global Tax Hub)কেন্দ্রগুলো ক্রমশই আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ডেলয়েট ইন্ডিয়ার নতুন একটি হোয়াইটপেপার…

India Emerges as Global Tax Hub with GCCs Leading Transformation

ভারতে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) বা গ্লোবাল সক্ষমতা (Global Tax Hub)কেন্দ্রগুলো ক্রমশই আন্তর্জাতিক কর ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠছে। ডেলয়েট ইন্ডিয়ার নতুন একটি হোয়াইটপেপার Transforming Global Tax Functions: The GCC Advantage শীর্ষক প্রতিবেদনে এই পরিবর্তনের বিস্তারিত চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, বহুজাতিক কর্পোরেশনগুলো এখন আর শুধু ভারতে অবস্থিত জিসিসিগুলিকে সহায়ক কেন্দ্র হিসেবে দেখছে না, বরং এদেরকে গ্লোবাল ট্যাক্স স্ট্র্যাটেজি বা বৈশ্বিক কর কৌশলের কেন্দ্রীয় চালিকা শক্তি হিসেবে গণ্য করছে।

   

প্রধান কার্যক্রমে ভারতের জিসিসির অংশগ্রহণ
এই জিসিসিগুলো এখন কর্পোরেট ট্যাক্স, ইনডাইরেক্ট ট্যাক্স, ট্রান্সফার প্রাইসিং এবং ট্যাক্স লিটিগেশন সাপোর্ট-এর মতো জটিল কার্যক্রম পরিচালনা করছে—যা একসময় শুধুমাত্র কর্পোরেট সদর দফতরের আওতাধীন ছিল।

ডেলয়েটের পার্টনার মনীষা গুপ্তা এই প্রতিবেদনের লেখক। তিনি লিখেছেন, “জিসিসিগুলো এখন কর ব্যবস্থাপনায় শুধু সহায়তা করছে না, বরং তারা এখন নেতৃত্ব দিচ্ছে। অনেক বহুজাতিক কোম্পানি ভারতের জিসিসিগুলোর মধ্যে ট্যাক্স-নির্দিষ্ট ‘Centre of Excellence’ (CoE) গড়ে তুলছে।”

এই CoE-গুলো স্থানীয় প্রতিভা, উন্নত প্রযুক্তি এবং ব্যয়-সাশ্রয়ী কাঠামোর সমন্বয়ে বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলে কর প্রক্রিয়া আরও সহজ ও কার্যকর করছে।

সংখ্যা বলছে ভারতের নেতৃত্ব কেমন
ডেলয়েটের এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বলা হচ্ছে, ৭৬ শতাংশ প্রতিক্রিয়াদাতা জানিয়েছেন যে তারা ইতিমধ্যেই তাদের গ্লোবাল ট্যাক্স ফাংশন ভারতের মাধ্যমেই পরিচালনা করছেন। অর্থাৎ, ভারত এখন গ্লোবাল কর ফাংশনের ‘নিউ নর্মাল’ হয়ে উঠেছে।

২০২৪ সালেই ভারতে ১,৭০০টির বেশি জিসিসি ছিল, যেখানে ১৯ লক্ষ পেশাদার কাজ করেছেন এবং এ থেকে মোট রাজস্ব এসেছে প্রায় $৬৪.৬ বিলিয়ন। বিশেষ করে বেঙ্গালুরু, হায়দ্রাবাদ, পুনে, চেন্নাই, মুম্বই ও এনসিআর-এ জিসিসিগুলোর ঘনত্ব সর্বাধিক।

২০২৫ থেকে ২০৩০-এর মধ্যে এই খাত আরও ব্যাপক বৃদ্ধির মুখে। আশা করা হচ্ছে, জিসিসির সংখ্যা ২৪০০ ছাড়াবে এবং কর্মসংস্থান ছাড়িয়ে যাবে ২৮ লক্ষে। মোট রাজস্ব দাঁড়াতে পারে $১০৫ বিলিয়নে।

Advertisements

ডিজিটাল রূপান্তর এবং বৈশ্বিক আস্থা
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ভারতীয় জিসিসিগুলো এখন কেবলমাত্র ব্যাক অফিস প্রসেস নয়, বরং স্ট্র্যাটেজিক ও নলেজ-ইনটেনসিভ ফাংশনের হাবে পরিণত হচ্ছে। প্রায় ৪০ শতাংশ ডিজিটাল রূপান্তরমূলক প্রকল্প ভারতের জিসিসি থেকেই চালানো হচ্ছে।

এই পরিবর্তনের ফলে ট্র্যাডিশনাল প্রসেসিং কাজ থেকে সরে এসে এখন বিশ্লেষণ, কমপ্লায়েন্স এবং ইনোভেশন-এর মতো উচ্চ-মূল্য সংযোজন কর্মকাণ্ডে নজর দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো।

ইউরোপ এবং জাপানও ভারতমুখী
জার্মানি, যুক্তরাজ্য, জাপান এবং নর্ডিক দেশগুলোর কোম্পানিগুলো ভারতের প্রতি তাদের আস্থা বাড়িয়েছে। নতুন জিসিসি কেন্দ্রগুলো এসব অঞ্চল থেকে ভারতে স্থানান্তরিত হচ্ছে—এটা স্পষ্ট ইঙ্গিত দিচ্ছে যে ভারত এখন শুধু আমেরিকান বা ব্রিটিশ কোম্পানির পছন্দ নয়, বরং বৈশ্বিক আস্থার প্রতীক হয়ে উঠছে।

দক্ষতা ও প্রযুক্তির সম্মিলনে ভবিষ্যতের দিশা
ভারতের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি দুটি: দক্ষ জনশক্তি এবং প্রযুক্তির দক্ষ প্রয়োগ। দেশের তরুণ ও প্রযুক্তি-সচেতন কর্মীদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিয়ে গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম করে তোলা হচ্ছে।

এই প্রেক্ষাপটে সরকারের সক্রিয় অবদান এবং পরিকাঠামোগত উন্নয়নও জিসিসিগুলোর বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করেছে। বিশেষত স্টার্টআপ সংস্কৃতি ও আইটি খাতে সরকারের নীতিগত সহায়তা একটি অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে।

ডেলয়েটের এই প্রতিবেদন নিশ্চিতভাবে নির্দেশ করছে যে ভারতের জিসিসিগুলো বিশ্ব অর্থনীতির কর ফাংশনের নতুন স্তম্ভ হয়ে উঠেছে। যেভাবে কোম্পানিগুলো ভারতের উপর নির্ভরতা বাড়াচ্ছে, তাতে আগামী দশকে ভারতকে ট্যাক্স অপারেশনের গ্লোবাল হাব হিসেবে দেখা মোটেই অতিশয়োক্তি হবে না।

এই বৃদ্ধির ধারা বজায় রাখতে হলে কর কাঠামোতে স্বচ্ছতা, প্রযুক্তির আরও গভীর একীকরণ এবং মানবসম্পদের উন্নয়ন অব্যাহত রাখা জরুরি। তাহলে ২১শ শতকের দ্বিতীয় দশকে ভারত বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে—এটা এখন শুধু সম্ভাবনা নয়, বাস্তবতার কাছাকাছি।