বিপুল মুনাফা ড্রাগনের, চিন থেকে বিরল মৃত্তিকা খনিজ কিনবে মোদী সরকার

India China rare earth mineral trade সীমান্তের গরম হাওয়া আপাতত নেই। ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত। এবার প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত…

India China rare earth mineral trade

India China rare earth mineral trade

সীমান্তের গরম হাওয়া আপাতত নেই। ভারত-চিন সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের পথে বড় অগ্রগতির ইঙ্গিত। এবার প্রতিরক্ষা ও সেমিকন্ডাক্টর শিল্পের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিরল খনিজ (rare earth magnet) ভারতের কাছে রফতানি করবে চিন। অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ বলছে, এতে লাল চিন বিপুল মুনাফা অর্জন করতে চলেছে।

ভারতের অটো ও ইলেকট্রনিক শিল্পের জন্য এই খনিজ গুরুত্বপূর্ণ। তাই বিরল খনিজ রফতানি শিথিল করার চিনের সিদ্ধান্ত শুধু অর্থনৈতিক নয়, রাজনৈতিক আস্থার বার্তাও বহন করছে বরে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

   

বিরল মৃত্তিকা খনিজ কি?

রেয়ার আর্থ বা বিরল মৃত্তিকা খনিজ হলো ১৭ ধরনের উপাদান। আধুনিক প্রযুক্তি ও প্রতিরক্ষা শিল্পের জন্য এসব উপাদান অপরিহার্য। মোবাইল কম্পিউটার চিপ, বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি, উইন্ড টারবাইন, স্যাটেলাইট এমনকি ক্ষেপণাস্ত্র ও রাডার তৈরিতেও এগুলোর ব্যবহার অপরিসীম। এগুলো ছাড়া আধুনিক ইলেকট্রনিক ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিপ্রযুক্তি প্রায় অচল।

বিরল খনিজের বাজারে চিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিরল খনিজ উৎপাদন ও রফতানির ৬০, ৭০ শতাংশই তাদের নিয়ন্ত্রণে। শুধু উৎপাদন নয়, খনিজ প্রক্রিয়াকরণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলেও চিনের একাধিপত্য রয়েছে। ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, জাপান কিংবা ভারত; সব শিল্পোন্নত দেশ চিনের ওপর নির্ভরশীল।

চৌম্বক খনিজ রফতানি বন্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ India China rare earth mineral trade

অটো ও ইলেকট্রনিক শিল্পে চিনের বিরল চৌম্বক খনিজ রফতানি বন্ধ নিয়ে গভীর উদ্বেগ ও সরবরাহ ঘাটতির কারণে উৎপাদন মারাত্মকভাবে এ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। মূলত সীমান্ত উত্তেজনার নিরাপত্তা-সংক্রান্ত যুক্তি কারণে দেখিয়েই বেজিং এসব পণ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ইর সঙ্গে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের বৈঠকে উঠে এসেছে এত দিন ভারতে বিরল খনিজ রপ্তানিতে চিন যে বিধিনিষেধ দিয়ে রেখেছিল, তা তুলে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সার উৎপাদন ও পরিকাঠামো ক্ষেত্রে ভারতকে প্রয়োজনীয় সাহায্যের বার্তা দিয়েছে চিন।

সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক গরম। সেই সুযোগে বিশ্বের আরও এক শক্তি চিনের সামনে ভারতীয় বাজার খুলে গেছে। আর মার্কিন ঝোঁক থেকে সরে এসে ভারত ও চিনের নৈকট্য বাড়ল।

Advertisements

ইকোনমিক টাইমস জানিয়েছে, চিনের পক্ষ থেকে ভারতের মূল তিনটি উদ্বেগের বিষয় নিয়ে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। সেটি হলো, সারের জোগান অক্ষুণ্ণ রাখা, বিরল চৌম্বক খনিজ ও টানেল-বোরিং মেশিনের জোগান বজায় রাখা। ভারতের কৃষি, হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রি ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য এই তিনটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের উদ্বেগের কারণ কী?

ভারতের বিশেষ উদ্বেগের কারণ হলো, চিনের আকস্মিক সার রফতানি-নিষেধাজ্ঞা। রবি চাষের মরশুমে ডি অ্যামোনিয়াম ফসফেটের সরবরাহে বড় প্রভাব ফেলেছিল। একইভাবে টানেল বোরিং মেশিনের চালান আটকে যাওয়ায় বেশ কয়েকটি পরিকাঠামো প্রকল্প স্থবির হয়ে পড়ে, যার মধ্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের চিনভিত্তিক কারখানায় তৈরি যন্ত্রও ছিল।

সীমান্ত থেকে পর সেনা প্রত্যাহারের রাজনৈতিক মতপার্থক্য নিরসন ও আস্থা তৈরির উদ্যোগ নেয় চিন ও ভারত। পরপর কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতায় এখন অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা শিথিল করার সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে দুই দেশ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতের বিষয়ে ভারতের কঠোর অবস্থান নিয়েছে, তখন চিনের সঙ্গে সমঝোতা গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বার্তা বহন করছে।

বিরল মৃত্তিকা খনিজকে ‘২১ শতকের তেল’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক অর্থনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই উপাদানের ভূমিকা এতটাই কৌশলগত। অনেক ক্ষেত্রে চিন এসব রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবেও এসব উপাদানের রফতানি সীমিত করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধের অংশ হিসেবে তারা এই উপাদানের রফতানি সীমিত করেছে। এর আগে ২০১০ সালে জাপানের সঙ্গে বিরোধের সময় তারা এই উপাদানের রফতানি সীমিত করে।

Business: China is set to export rare earth minerals to India, a crucial move for the defence and semiconductor industries. This development signals a major step towards normalizing India-China relations and highlights China’s market dominance.