রাশিয়ার সৌজন্যে ইউরোপে ১৩৭ শতাংশ ডিজেল রফতানি বাড়াল ভারত

ভারতের শিল্প ও শক্তি খাতে একটি অভূতপূর্ব উত্থানের সাক্ষী হয়েছে গত আগস্ট মাসে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ডিজেল রফতানি (Diesel Exports) ইউরোপে ১৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি…

India Boosts Diesel Exports to Europe

ভারতের শিল্প ও শক্তি খাতে একটি অভূতপূর্ব উত্থানের সাক্ষী হয়েছে গত আগস্ট মাসে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ভারতের ডিজেল রফতানি (Diesel Exports) ইউরোপে ১৩৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দৈনিক ২ লাখ ৪২ হাজার ব্যারেলে পৌঁছেছে। এই বৃদ্ধির পেছনে রয়েছে রাশিয়া থেকে সস্তায় ক্রয়কৃত কাঁচা তেলের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের পরিশোধন ক্ষমতা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) আসন্ন নিষেধাজ্ঞার প্রভাব। জানুয়ারি ২০২৬ থেকে রাশিয়ান কাঁচা তেল থেকে তৈরি পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ করার পরিকল্পনার আগে ইউরোপে ডিজেলের জন্য তীব্র চাহিদা দেখা দিয়েছে, যা ভারতের জন্য একটি বড় সুযোগ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ভারত এই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে নিজের অর্থনৈতিক ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হয়েছে।

রাশিয়া থেকে সস্তা তেল: ভারতের কৌশলী পদক্ষেপ
রাশিয়ার উপর পশ্চিমা দেশগুলোর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে তাদের কাঁচা তেলের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে। এই সুযোগে ভারত নিজের রিফাইনারি ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে রাশিয়ান তেল পরিশোধন করে ডিজেল তৈরি করছে এবং তা ইউরোপে রফতানি করছে। এই কৌশলটি ভারতের জন্য অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু এই ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত আমেরিকার তীব্র সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। আমেরিকার মতে, ভারত রাশিয়া থেকে সস্তা তেল কিনে তা পশ্চিমা দেশগুলোতে বিক্রি করে মুনাফা করছে, যা পরোক্ষভাবে মস্কোর অর্থনৈতিক সহায়তা করে। তবে ভারত সরকার এই অভিযোগকে খারিজ করে বলেছে, এটি আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বাণিজ্যের মধ্যে একটি বৈধ লেনদেন।

   

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নীতি অনুযায়ী, জানুয়ারি ২০২৬ থেকে রাশিয়ান কাঁচা তেল থেকে তৈরি পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ হবে। এই নিষেধাজ্ঞার আগে ইউরোপীয় দেশগুলো ভারত থেকে ডিজেল স্টক করার উদ্দেশ্যে দ্রুত ক্রয় করছে। এর ফলে ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ এবং অন্যান্য বড় রিফাইনারিগুলোর রফতানি প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। গ্লোবাল ডেটা এবং অ্যানালিটিক্স সার্ভিস ক্লেপারের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে ইউরোপে ডিজেল রফতানি (Diesel Exports) গত বছরের তুলনায় ১৩৭ শতাংশ বেশি হয়েছে, যা পূর্ববর্তী মাসের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বৃদ্ধি নির্দেশ করে।

ইউরোপের নির্ভরতা ও ভারতের সুবিধা
ইউরোপীয় বাজারে ভারতের ডিজেল রফতানির (Diesel Exports) এই বৃদ্ধি তার শক্তি খাতে গ্লোবাল প্রভাব বাড়ার একটি প্রমাণ। নেদারল্যান্ডস এবং ইউক্রেনের মতো দেশগুলো ভারতীয় ডিজেলের বড় ক্রেতা হয়ে উঠেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়ার তেল সরবরাহের ওপর নির্ভরশীলতা কমানোর জন্য ইউরোপ ভারতের দিকে তাকিয়েছে। তবে এই পরিস্থিতিতে কিছু প্রশ্নও উঠছে। উদাহরণস্বরূপ, ইউরোপের নিজস্ব তেল পরিশোধন ক্ষমতা কি এতটাই কম যে তাদের ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে? এই প্রশ্নের উত্তরে কিছু বিশ্লেষক বলছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পর ইউরোপীয় দেশগুলো দ্রুত বিকল্প সরবরাহের খোঁজ করছে, যেখানে ভারত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

Advertisements

ভারতের অর্থনৈতিক সুবিধা ও চ্যালেঞ্জ
ভারতের জন্য এই রফতানির বৃদ্ধি অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত উপকারী। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজের মতো বড় কোম্পানিগুলো রাশিয়ান তেল থেকে ডিজেল তৈরি করে বাজারে সরবরাহ করছে, যা দেশের রফতানি আয় বাড়াচ্ছে। তবে এই সঙ্গে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নীতি যদি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হয়, তবে ভারতের রফতানি খাতে বাধা আসতে পারে। তাছাড়া, আমেরিকার সমালোচনা এবং ভবিষ্যতে সম্ভাব্য নিষেধাজ্ঞা ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
ভারত সরকার এখন বিকল্প সরবরাহের উপর নজর দিচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্যের তেল এবং পশ্চিম আফ্রিকার তেলের বাজারে ভারত আরও বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে। এর পাশাপাশি, স্থানীয়ভাবে গ্রিন এনার্জি বিকাশের দিকেও কদম বাড়িয়েছে। ভারতের পরিবেশ মন্ত্রী সম্প্রতি ইউরোপ-২০ (ই-২০) পেট্রোলের প্রচার করেছেন, যা ডিজেল চালিত ইঞ্জিনের ব্যবহার কমিয়ে পরিবেশ সংরক্ষণে সাহায্য করবে।

সার্বিকভাবে, রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং ইউরোপের শক্তি সংকট ভারতকে একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে নিয়ে গেছে। তবে এই সুযোগটি সঠিকভাবে ব্যবহারের জন্য ভারতকে ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।