আয়কর রিটার্ন (Income Tax Return) ফাইল করার সময়সীমা শেষ হওয়ার আর মাত্র কয়েকদিন বাকি। আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর মধ্যে চূড়ান্তভাবে রিটার্ন জমা দিতে হবে। ইতিমধ্যেই অধিকাংশ করদাতা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুছিয়ে রিটার্ন ফাইলের কাজে ব্যস্ত। আয়কর দপ্তরের ওয়েবসাইট অনুযায়ী, ২৬ আগস্ট, ২০২৫ পর্যন্ত চলতি অর্থবর্ষে (২০২৪-২৫) প্রায় ৩.৭৫ কোটি আয়কর রিটার্ন ফাইল করা হয়েছে। এর মধ্যে ২.৩৭ কোটিরও বেশি রিটার্ন ইতিমধ্যেই প্রক্রিয়াকরণ সম্পন্ন হয়েছে।
কিন্তু রিটার্ন জমা দিলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। অনেক করদাতা এই জায়গায় ভুল করে থাকেন। রিটার্ন ফাইল করার পরেও একটি শেষ ধাপ বাকি থাকে—ই-ভেরিফিকেশন (E-Verification)। রিটার্নের বৈধতা নিশ্চিত করতে এই প্রক্রিয়া বাধ্যতামূলক। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন না করা হয়, তবে জমা দেওয়া রিটার্ন বাতিল বলে গণ্য হবে।
ই-ভেরিফিকেশন কী এবং কেন জরুরি?
ই-ভেরিফিকেশন আসলে রিটার্নের সত্যতা প্রমাণের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, আপনি যে রিটার্ন জমা দিয়েছেন তা যে আসল এবং আপনার দ্বারাই জমা দেওয়া হয়েছে—এটি নিশ্চিত করতে হয়। আয়কর আইন অনুযায়ী, রিটার্ন ফাইল করার তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন করা বাধ্যতামূলক।
এই সময়সীমার মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন না হলে, রিটার্নটি অকার্যকর হয়ে যাবে। তখন তা দাখিল হয়নি বলে গণ্য করা হবে এবং সমস্ত আইনি জটিলতা ও জরিমানার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
কীভাবে ই-ভেরিফিকেশন করবেন?
আয়কর দপ্তরের ই-ফাইলিং পোর্টাল (incometax.gov.in)-এ লগইন করেই সহজে ই-ভেরিফিকেশন করা যায়। ধাপগুলি হলো:
1. E-file > Income Tax Returns > e-verify Return এ গিয়ে প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।
2. শুধু করদাতা নন, করদাতার হয়ে অনুমোদিত স্বাক্ষরকারী বা প্রতিনিধিও চাইলে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে পারেন।
ই-ভেরিফিকেশন করার বিভিন্ন উপায় রয়েছে। এগুলি হলো—
১. আধার ওটিপি (Aadhaar OTP)
আধার কার্ডের সঙ্গে যুক্ত মোবাইল নম্বরে একটি OTP পাঠানো হবে। সেই OTP দিয়ে ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করতে হবে।
২. নেট ব্যাংকিং (Net Banking)
করদাতার ই-ফাইলিং পোর্টালে রেজিস্টার্ড মোবাইল নম্বর ও ইমেল আইডিতে ইভিসি (EVC) পাঠানো হবে। সেটি ব্যবহার করে ভেরিফিকেশন করা যাবে।
৩. ব্যাংক বা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট (Bank/Demat Account)
যদি করদাতার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট বা ডিম্যাট অ্যাকাউন্ট আগেই প্রি-ভ্যালিডেট করা থাকে, তবে সেখান থেকে জেনারেট হওয়া ইভিসি ব্যবহার করে ই-ভেরিফিকেশন করা সম্ভব।
৪. ডাকযোগে ITR-V পাঠানো
যাঁরা অনলাইনে ভেরিফিকেশন করতে পারছেন না, তাঁরা ITR-V (ভেরিফিকেশন ফর্ম) প্রিন্ট করে সই করে ডাকযোগে পাঠাতে পারেন। ঠিকানা—
Centralised Processing Centre,
Income Tax Department,
Bengaluru – 560500, Karnataka
এটি সাধারণ ডাক বা স্পিড পোস্টের মাধ্যমে পাঠানো যাবে।
আয়কর দপ্তর মার্চ ৩১, ২০২৪ তারিখে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, যদি রিটার্ন আপলোড করার ৩০ দিনের পর ভেরিফিকেশন করা হয়, তবে যেদিন ভেরিফিকেশন করা হবে সেই তারিখকেই রিটার্ন দাখিলের তারিখ বলে ধরা হবে। ফলে সেটি দেরিতে জমা দেওয়া রিটার্ন হিসেবে গণ্য হবে এবং এর সব ধরনের আইনি প্রভাব, যেমন জরিমানা, সুদ ইত্যাদি কার্যকর হবে।
আয়কর বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেক করদাতা রিটার্ন জমা দেওয়ার পর ই-ভেরিফিকেশন করতে ভুলে যান। এতে পরবর্তীতে বড় সমস্যা তৈরি হয়। রিটার্ন অকার্যকর হয়ে গেলে কেবল কর ফেরত পাওয়া আটকে যায় না, বরং দেরিতে ফাইলিংয়ের জন্য অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হয়।
তাঁদের পরামর্শ, রিটার্ন ফাইল করার সঙ্গেসঙ্গেই ই-ভেরিফিকেশন করে নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ উপায়।
এখনও যাঁরা রিটার্ন ফাইল করেননি, তাঁদের হাতে সময় খুব কম। আর যাঁরা ইতিমধ্যেই ফাইল করেছেন, তাঁরা অবশ্যই ৩০ দিনের মধ্যে ই-ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করুন। নইলে রিটার্ন বাতিল হয়ে যাবে।
করদাতাদের মনে রাখা উচিত—
রিটার্ন ফাইল করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ই-ভেরিফিকেশনই রিটার্নকে বৈধ করে তোলে।
তাই আর দেরি না করে, এখনই লগইন করুন incometax.gov.in-এ এবং রিটার্ন ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করুন।