কলকাতা: আইলিড (ইনস্টিটিউট অফ লিডারশিপ, এন্ট্রাপ্রেনারশিপ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট) গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করছে তাদের নতুন ব্যাঙ্কোয়েট-কাম-কনফারেন্স হলের ( iLEAD’s Sustainable Banquet) উদ্বোধন, যা ৯০% পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ দিয়ে নির্মিত। এই অভিনব প্রকল্পটি টেকসই নকশা ও নির্মাণের সম্ভাবনাকে তুলে ধরে, বর্জ্য হ্রাস করে এবং পরিবেশগত দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করে। এই উদ্যোগ কলকাতার শিক্ষা ও স্থাপত্য ক্ষেত্রে একটি নতুন মানদণ্ড স্থাপন করেছে।
হলের অনন্য বৈশিষ্ট্য
এই ব্যাঙ্কোয়েট-কাম-কনফারেন্স হলটি তার অসাধারণ নকশা এবং টেকসই উপকরণের ব্যবহারের জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে রয়েছে:
• পরিত্যক্ত মিনি ফ্রিজের কাচ: এগুলোকে সজ্জাসামগ্রী হিসেবে পুনরায় ব্যবহার করা হয়েছে, যা হলের নান্দনিকতায় একটি আধুনিক ছোঁয়া যোগ করেছে।
• তাজ চেম্বার্সের প্যানেল: ভেঙে ফেলা এই প্যানেলগুলোকে পরিশীলিত দেয়াল প্যানেল হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে।
• বাতিল কাঠের তক্তা দিয়ে টেবিল: পরিত্যক্ত কাঠের তক্তা থেকে নির্মিত টেবিলগুলো হলের কার্যকারিতা ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে।
• চেয়ার ও সোফায় নতুন চামড়ার কভার: পুরনো আসবাবপত্রকে নতুন চামড়ার কভার দিয়ে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে, যা বিলাসিতা ও আরামের সমন্বয় ঘটিয়েছে।
এই প্রকল্পটি প্রমাণ করে যে সৃজনশীলতা এবং টেকসইতা একসঙ্গে কাজ করতে পারে। এটি শুধুমাত্র বর্জ্য হ্রাস করেনি, বরং নির্মাণ ব্যয় কমিয়েছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। পুনর্ব্যবহৃত উপকরণের ব্যবহার কাঁচামালের খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করেছে, যা এই প্রকল্পকে অন্যদের জন্য একটি অনুকরণীয় মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রদীপ চোপড়ার দৃষ্টিভঙ্গি
পিএস গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং আইলিড-এর চেয়ারম্যান মি. প্রদীপ চোপড়া এই প্রকল্পের মূল প্রেরণা। তিনি বলেন, “আমরা এই উদ্ভাবনী প্রকল্পটি প্রদর্শন করতে পেরে আনন্দিত, যা কেবল বর্জ্য হ্রাস করে না, বরং টেকসইতা এবং পরিবেশগত দায়িত্ববোধকে উৎসাহিত করে। আমরা আশা করি এটি অন্যদের অনুপ্রাণিত করবে এবং একটি টেকসই ভবিষ্যতের দিকে আন্দোলন শুরু করবে।”
মি. চোপড়া টেকসই নকশা ও উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে একজন পথিকৃৎ। তিনি বিশ্বাস করেন, প্রতিটি বাতিল বস্তুরই মূল্য রয়েছে। তার ২ লাখ বর্গফুটের ক্যাম্পাসে ৭০% এরও বেশি উপকরণ পুনর্ব্যবহৃত বা বাতিল বস্তু থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে, যা তার উপসাইক্লিং এবং রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অনন্য দৃষ্টিভঙ্গির প্রমাণ। তিনি ঐতিহ্যবাহী নকশা প্রক্রিয়ার বিপরীতে গিয়ে প্রথমে উপকরণ সংগ্রহ করেন এবং তারপর সেগুলোর চারপাশে নকশা তৈরি করেন। এই পদ্ধতি তার প্রকল্পগুলোকে অভিনব এবং পরিবেশবান্ধব করে তুলেছে।
টেকসই নকশার সুবিধা
অনেক স্থপতি প্রাথমিকভাবে মনে করেন যে পুনর্ব্যবহৃত উপকরণ ব্যবহার করা ব্যয়বহুল, সময়সাপেক্ষ এবং নান্দনিকভাবে চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু মি. চোপড়া এই ধারণাগুলোকে ভুল প্রমাণ করেছেন। তার প্রকল্পগুলো দেখায়:
• খরচ-কার্যকারিতা: শ্রম খরচ কিছুটা বেশি হলেও, উপকরণের কম খরচ সামগ্রিক ব্যয়ের ভারসাম্য বজায় রাখে।
• সময় দক্ষতা: উপকরণ পূর্বেই সংগ্রহ করা থাকায় ডেলিভারির জন্য অপেক্ষা করতে হয় না, ফলে প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন হয়।
• নান্দনিক আকর্ষণ: সমাপ্ত প্রকল্পগুলো দেখতে অসাধারণ, বিলাসবহুল এবং ব্যবহারকারী-বান্ধব, যা পুনর্ব্যবহৃত উপকরণের নান্দনিকতা নিয়ে সন্দেহকে দূর করে।
এই হলটির অত্যাশ্চর্য নকশা এবং পরিবেশবান্ধব বৈশিষ্ট্য শিল্প নেতৃবৃন্দ, স্থপতি, ডিজাইনার এবং টেকসইতা উৎসাহীদের মধ্যে টেকসই অনুশীলন গ্রহণের জন্য প্রেরণা জোগাবে। আইলিড সকলকে এই অনন্য স্থানটি পরিদর্শন এবং অভিজ্ঞতার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে।
আইলিড-এর টেকসই দর্শন
আইলিড শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি টেকসই উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের একটি কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটি তার ‘ওয়েস্ট বিলিয়নেয়ার’ উদ্যোগের মাধ্যমে পুনর্ব্যবহার এবং উপসাইক্লিংয়ের প্রচার করে। ২০২৩ সালে দুর্গাপুজোয় মৈত্রেয়ী সঙ্ঘের সঙ্গে সহযোগিতায় আইলিড অটোমোবাইলের বাতিল যন্ত্রাংশ থেকে মূর্তি তৈরি করেছিল, যা পরিবেশ সচেতনতা এবং উদ্যোক্তার মনোভাব প্রচারের একটি উদাহরণ।
আইলিড-এর ক্যাম্পাসটি টেকসই পরিবেশের একটি জীবন্ত উদাহরণ, যেখানে আধুনিক শহুরে সেটআপের মধ্যে সবুজ পরিবেশ বজায় রাখা হয়েছে। এই নতুন হলটি তাদের টেকসই দর্শনের আরেকটি প্রমাণ, যা পরিবেশ সংরক্ষণ এবং উদ্ভাবনী নকশার মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
ভবিষ্যতের পথে
এই ব্যাঙ্কোয়েট-কাম-কনফারেন্স হল কেবল একটি স্থান নয়, বরং টেকসই ভবিষ্যতের প্রতি আইলিড-এর প্রতিশ্রুতির প্রতীক। এটি শিল্প, শিক্ষা এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে টেকসই অনুশীলনের গুরুত্ব তুলে ধরে। মি. চোপড়ার নেতৃত্বে আইলিড এই পথে এগিয়ে চলেছে, এবং এই প্রকল্পটি অন্যদের জন্য একটি প্রেরণা হিসেবে কাজ করবে।
আইলিড-এর এই উদ্যোগ কলকাতার শিক্ষা ও স্থাপত্য জগতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে। এটি প্রমাণ করে যে পরিবেশবান্ধব নকশা কেবল সম্ভব নয়, বরং এটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক এবং নান্দনিকভাবে আকর্ষণীয়ও হতে পারে। ভবিষ্যতে এই ধরনের আরও উদ্যোগ দেখার জন্য শহরবাসী উৎসুক।